• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

অসময়ের তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে সাতক্ষীরার কৃষকদের

মো. আসাদুজ্জামান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ১৮ আগস্ট ২০২৫

ফন্ট সাইজ
অসময়ের তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে সাতক্ষীরার কৃষকদের

স্বল্প খরচে দাম বেশি পাওয়ায় সাতক্ষীরায় অসময়ের (অফ-সিজনের ) তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। মৎস্য ঘেরের বেঁড়িতে মাচা পদ্ধতিতে ও কৃষি জমিতে সবজি চাষের পাশাপাশি তরমুজ চাষে বাম্পার ফলনে সম্ভাবনার নবদিগন্ত দেখা দিয়েছে। এতে একই জমির বহু ব্যবহারে কৃষকের আয় যেমন কয়েক গুণ বাড়ছে, তেমনি দেশে তরমুজের চাহিদা মেটাতেও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। 

উপরে হলুদ বা কালো যে জাতের হোক না কেন ভিতরে টকটকে লাল। সুস্বাদু ও মিষ্টি এই তরমুজ ঝুলছে মৎস্য ঘেরে মাচায় ও কৃিষ জমিতে। এতে একই জমির বহু ব্যবহারে কৃষকের আয় যেমন কয়েক গুণ বাড়ছে, তেমনি দেশে তরমুজের চাহিদা মেটাতেও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। 

তবে, অসময়ের এই দৃষ্টিনন্দন তরমুজের দাম একটু বেশি। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চাষ হচ্ছে এই অসময়ের তরমুজ চাষ। অসময়ের এই তরমুজ চাষে স্বল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় এবং বাম্পার ফলন হওয়ায় এ অঞ্চলের অনেক কৃষক এই তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, জেলায় এবছর ৭৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে অসময়ের এই তরমুজ।

দেবহাটা উপজেলা কৃষি দফতরের তথ্য মতে, এই উপজেলায় এ বছর প্রায় ৫০ জন কৃষকের মাঝে অসময়ের এই তরমুজের বীজ প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে উন্নত জাতের সুপ্রিম হানি (হলুদ), তৃপ্তি (হলুদ), ব্লাক বেবি (কালো), সুগারকুইন ও বাংলা লিংক রয়েছে। এই তরমুজ চাষের জন্য আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। মৎস্য ঘেরের বেঁড়িতে খুব সহজে এ্টা চাষ করা যায়। অল্প দিনে লাভের মুখ দেখায় প্রতিবছর চাষের পরিমাণ বাড়ছে। এবছর এ উপজেলার ৩টি প্রদর্শনী খামারে ইতোমধ্যে বাম্পার ফলন এসেছে। প্রতি বিঘা জমিতে ১০০ গ্রাম থেকে ১’শ ২০ গ্রাম বীজ রোপণ করা যায়। অসময়ের তরমুজ বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা হচ্ছে। মৎস্যচাষীরা মাছের পাশাপাশি তাদের ঘেরের বেঁড়িতে এই তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। 

উপজেলার টিকেট গ্রামের তরমুজ চাষি বিশ্বনাথ টাপালী জানান, তিনি গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে তার ৫ বিঘা জমির মৎস্য ঘেরের বেঁড়িতে এবছর প্রথম হলুদ রঙের অসময়ের তরমুজ চাষ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার কীটনাশক দেয়া হয়েছে। এছাড়া মাচা তৈরীর নগদ অর্থ দেয়া হয়েছে। সর্বেচ্চ তার ১০ তৈকে ১২ হাজার খরচ হয়েছে। যাতে তার ইতিমধ্যে এক লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে।  মিষ্টি পানিতে যেভাবে একটা ফসল ফলানো যায়। লোনা পানিতে টিউবওলের পানি বালতিতে বয়ে নিরন্তর পরিচর্যার মাধ্যমে রোগ বালাই পোকামাকড় দমন করা হয়। এভাবে একটা ফসল ফলানো খুব দুরহ্। এটার মূল্যায়ন সবাই করতে পারে না। এখনও দুইবার ফলন তোলা যাবে। আমি মোট ৬ বিঘা জমির ভেড়িতে লাগিয়েছি। আশাকরি তরমুজ বিক্রি করে সারাবছরের জমির হারির টাকা উঠে যাবে। 

শশাডাঙ্গা গ্রামের যুবক কৃষক আবুল কাশেম (৩৫) জানান, তিনি ৪০ বিঘা জমির মৎস্য ঘেরের বেঁড়িতে অসময়ের এই তরমুজ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে মোট ৫৭ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে তিনি বিক্রি করেছেন দেড় লাখ টাকার তরমুজ। তিনি সেখান থেকে আরো দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী। তিনি আরো জানান, এই তরমুজ দেখতে যেমন চমৎকার, তেমনি খেতেও অনেক মিষ্টি। বাজারে এর অনেক চাহিদা রয়েছে। 

দেবহাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান জানান, মাঠ পর্যায়ে অসময়ের এই তরমুজ চাষের প্রথমে আগ্রহ না থাকলেও এখন চাষিদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় চাষীরা এর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কৃষি অফিসের সর্বাত্তক প্রচেষ্ঠায় মৎস্যঘেরের বেঁড়ি ও পতিত জমি কৃষির আওতায় আনার প্রাণপন চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অসমের তরমুজ চাষে কৃষক আগ্রহী হওয়ার প্রধান কারণ মাত্র দুই মাসে এই তরমুজ বিক্রয় উপযোগী হয়। সাতক্ষীরার মাটি তরমুজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। দেশের উর্বর মাটিকে ব্যবহার করে কৃষকরা ফসল ফলিয়ে সচল রেখেছে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি। ফলে চাকরির পেছনে বৃথা সময় ব্যয় না করে যদি কৃষিকাজে শিক্ষিত তরুণরা এগিয়ে আসেন তাহলে নিজে স্বাবলম্বী হবে এবং দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মিটাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

বিগত দিনে মাছের ঘেরের বেঁড়ি চাষের আওতায় ছিলো না। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ওই জমিগুলো চাষের উপযোগী করা হয়েছে। বিশেষ করে সবজি ও অসময়ের তরমুজ চাষে কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। আর এই চাষের জন্য কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বীজ, সার সরবরাহ ও নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। কোনো ভূমি যাতে না পড়ে থাকে সে জন্য কৃষি দফতর থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।  

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম জানান, জেলার ৭টি উপজেলায় অসময়ের (অফ-সিজনের) এই তরমুজ এবার ৭৬ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় ২৪ হেক্টর জমিতে বেশী চাষাবাদ হয়েছে। এটি একটি লাভজনক ফসল। প্রতিবিঘা সমতল জমিতে এই তরমুজ চাষে খরচ হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। যা বিক্রি হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। কৃষকদের লাভজনক এই তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করার আহবান জানান তিনি।

বিভি/এআই

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2