• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সাতক্ষীরার চুনকুড়ি নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:২৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
সাতক্ষীরার চুনকুড়ি নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি

সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের চুনকুড়ি নদীর দুইপাড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে হরিনগর স্লুইসগেট সংলগ্ন ঋষিপাড়া এলাকার একটি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনের কারণে হুমকিতে রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হরিনগর বাজারসহ বিস্তীর্ণ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।  

স্থানীয়রা জানান, মালঞ্চ ও চুনকুড়ি নদীর মিলনস্থল হরিনগর বাজারের স্লুইসগেট সংলগ্ন এলাকায় তীব্র স্রোতের কারণে নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে হরিনগর বাজারের শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগরের ঋষিপাড়া এলাকায় নদী তীরের মানুষ ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ নদীতীরে বাঁশ ও গাছ দিয়ে বেড়িবাঁধ সংস্কার করে বসতবাড়ি রক্ষার চেষ্টা করছেন। ভাঙনের ঝুঁকি থাকায় আশপাশের লোকজন তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ সেখানকার বাসিন্দারা বসতভিটা ভেঙে নিয়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।

এছাড়াও ভাঙন কবলিত ওই এলাকার মানুষ সহায় সম্বল হারিয়ে চরম সংকটের মধ্যে পড়েছেন। নদীর এমন ভয়াল রূপে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। পরিবারগুলো নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, গত দুই সপ্তাহে এই চুনকুড়ি নদীর দুটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু এখনো স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

হরিনগর ঋষিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দা হামিদা খাতুন ঘরের কিছু জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, গত ৪০ বছর যাবত তার পরিবার এই চুনকুড়ি নদীর তীরে বসবাস করে আসছে। প্রায়ই নদী ভাঙ্গনের শিকার হন তারা। দুই সপ্তাহ আগে তাদের ঘর সংলগ্ন এলাকায় ফাটল দেখা দেয়। আস্তে আস্তে সেটি বড় আকার ধারণ করেছে। একটি ঘর ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রাতে বাড়িতে থাকতে পারেন না তারা। জোয়ারের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। তাদের আশপাশে আরও তিনটি বাড়ি ও বেশ কিছু গাছপালা নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। তার ঘরের বেশির ভাগ অংশ নদীতে চলে গেছে। যেকোনো সময় পুরো বাড়ি নদীতে চলে যেতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

একই গ্রামের নেসার গাজী বলেন, হঠাৎ ভাঙনের শিকার হয়ে পরিবারগুলো বাজারের মানুষের দোকানের বারান্দায় আশ্রয় নিচ্ছেন। তাদের অনেক দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে; কিন্তু এখানে স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাই মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে চারটি পরিবারের মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। চোখের সামনে বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। তারা কিছুই করতে পারছেন না। তাদের যেন দেখার কেউ নেই।

চুনকুড়ি নদীর তীর ঘেষে বসবাস করছেন বাক্কার গাজী, বিল্লাল গাজীসহ অনেকে। তারা জানান, তারা বাঁশ-গাছ দিয়ে বেড়িবাঁধ সংস্কার করে নিজেদের ঘরবাড়ি রক্ষার চেষ্টা করছেন কিন্তু কিছুতেই তা টিকছে না।
তারা আরও বলেন, আমরা গরীব মানুষ, কয়েকবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। আবার নদীতে বসত ঘরটা ভাঙলে কোথায় আশ্রয় নিবো, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তারা এসময় দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কার করার জোর দাবি জানান। 

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার প্রিন্স রেজা বলেন, হরিনগর স্লুইসগেট সংলগ্ন ঋষিপাড়া নদী ভাঙন এলাকা ইতিমধ্যে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন জানান, বিষয়টি জানার পর পরই শুক্রবার পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নিয়ে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই ভাঙ্গন রোধে সেখানে কাজ শুরু করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

বিভি/এসজি

মন্তব্য করুন: