সুন্দরবনের দস্যু দমন ও বন বিরোধী কর্মকাণ্ড রোধ
এক বছরে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে কোস্টগার্ড পশ্চিমজোন
‘সুন্দরবনের জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, জলদস্যু ও বনদস্যু নির্মূল, জেলেদের নিরাপত্তা প্রদান এবং সমুদ্র ও নৌপথে অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জনগণের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দেশের উপকূলীয় ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ, মৎস্যসম্পদ রক্ষা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।’
গেল এক বছরের বোংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিজোনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মেসবাউল ইসলাম। এসময় তিনি চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে কোস্টগার্ডের এক বছরের অর্জন তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, জানুয়ারি হতে এখন পর্যন্ত সুন্দরবনে ডাকাত ও জলদস্যুবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে মোট ৩৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২টি হাত বোমা, ৭৪টি দেশীয় অস্ত্র, অস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জামাদি, ৪৪৮ রাউন্ড কার্তুজ এবং ডাকাতদের কাছে জিম্মি থাকা ৫২ জন নারী ও পুরুষ উদ্ধার করা হয়। এসব অভিযানে মোট ৪৯ জন ডাকাতকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
একইসাথে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ৫ হাজার ৬৭৪ পিস ইয়াবা, ১৩ কেজি গাঁজা, ১ হাজার ২৫৬ বোতল বিদেশি মদ ও বিয়ারসহ মোট ৫১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণ অভিযান পরিচালনা করে ৮২৪ কেজি হরিণের মাংস ও হরিণের বিভিন্ন অঙ্গসহ ৬০০টি হরিণের ফাঁদ জব্দ করা হয় এবং ২৯ জন হরিণ শিকারিকে আটক করা হয়। এছাড়া ১৪০০ পিসেরও বেশি গেওয়া ও গড়ান কাঠ, ২টি তক্ষক, ৬২টি বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ এবং ৩ হাজার ৪০০ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়। অবৈধ মৎস্য আহরণবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ১ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা সমমূল্যের ১২ কোটি মিটারেরও বেশি অবৈধ জাল এবং ১২০ কোটি টাকা সমমূল্যের রেণুপোনা, ১৪ হাজার কেজি জেলি পুশকৃত চিংড়ি জব্দ করা হয়।
ক্যাপ্টেন মেসবাউল ইসলাম আরও জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে আর্তমানবতার সেবায় কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন চলতি বছরে দুই এর বেশি দুঃস্থ, অসহায় ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করেছে। কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন পরিবার কল্যাণ সংঘ উপকূলীয় অঞ্চলে পাঁচশত এর বেশি অসহায়, গরীব ও দুঃস্থ শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে। এছাড়া জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, জেলে, মাঝি, পেশাজীবী ও সাধারণ জনগণের উপস্থিতিতে পরিবেশ ও বন রক্ষা, বনজ প্রাণী সংরক্ষণ, দুর্যোগকালীন উদ্ধার কার্যক্রম এবং অগ্নি নির্বাপণ বিষয়ে তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ প্রদানসহ কিশোর-তরুণদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রতকরণ এবং মাদক বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করেছি। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা যায়, সে লক্ষ্যে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের আওতাধীন উপকূলীয় এলাকাসমূহে ইতিমধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য কোস্ট গার্ড সদস্যদের নির্বাচনকেন্দ্রীক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। অত্র অঞ্চলের জনগণের নিরাপত্তা এবং অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সর্বদা সজাগ ও প্রস্তুত থাকবে।
অত্র অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সফরকালীন সময়ে কোস্ট গার্ড কর্তৃক নৌপথে নিরাপত্তা প্রদান করা হয়। সুন্দরবনের আগত পর্যটকদের দুর্ঘটনা রোধে কোস্ট গার্ড পর্যটকবাহী নৌযানসমূহে লাইফ জ্যাকেটের ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর ফলে সুন্দরবনে আগত পর্যটকদের নৌপথে নিরাপত্তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন শুধু উপকূলীয় নিরাপত্তা নয়, বরং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের জানমাল রক্ষা, বন্দর নিরাপত্তা, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে এবং ভবিষ্যতেও এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বিভি/পিএইচ




মন্তব্য করুন: