ফুলবাড়ী সীমান্তে লাল পতাকা টাঙিয়ে রাস্তার কাজ বন্ধ করেছে বিএসএফ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তের শিমুলবাড়ী-জুম্মারপাড় এলাকায় ৩০০ মিটার রাস্তা পাকাকরণের কাজসহ ৭৩ মিটার গাইড ওয়ালের নির্মাণ কাজ কয়েক দফায় বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। 

এ দিকে বিজিবি-বিএসএফ দফায় দফায় পতাকা বৈঠক হলেও কোন ধরণের সুরাহা না করে ভারতীয় কুর্শাহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা এক তরফাভাবে গত ৯ দিন ধরে ঐ সীমান্তের জিরো লাইনে ভারতীয় অংশে লাল পতাকা উড়িয়ে কাঁটাতারের বাইরে ২৪ ঘন্টা টহল অব্যাহত রেখেছে।

অন্যদিকে শিমুলবাড়ী ও গংগাহাট ক্যাম্পের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবির) সদস্যরা বিএসএফকে লাল পতাকা সরিয়ে নেওয়ার জন্য বার বার তাগিদ দিলেও জিরো লাইনে ভারতের অংশে লাল পতাকা সরিয়ে নেয়নি বিএসএফ।

ফলে বাধ্য হয়ে শিমুলবাড়ী ও গংগাহাট ক্যাম্পের বিজিবি’র সদস্যরা ফুলবাড়ী টু নাগেশ্বরী  নির্মাণাধীন সড়কে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে ২৪ ঘন্টা টহল জোরদার রেখেছে। ফলে জিরো লাইনের সড়কের নির্মাণ কাজ করতে পারছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওটিবিএল। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সড়কের কাজ শুরু হলে আবারও বাধা প্রদান করে ভারতের কুর্শাহাট ক্যাম্পের বিএসএফ।

জানা গেছে,কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের অর্থায়নে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর নিকট আছিয়ার বাজার থেকে নাগেশ্বরী উপজেলার কলেজ মোড় পর্যন্ত ওটিবিএল নামের এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ১৯ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণ ও পাকাকরণের কাজ শুরু করে। 

কিন্তু ফুলবাড়ীর শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের নন্দিরকুটি জুম্মারপাড় সীমান্তের আন্তর্জাতিক পিলার নং-৯৩৭/৮ এস থেকে ৯৩৮ নং পিলার পর্যন্ত ফুলবাড়ী-নাগেশ্বরী সড়কটি জিরো লাইনে হওয়ায় প্রায় ৩০০ মিটার সড়ক নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করছে বিএসএফ। সেই সঙ্গে ৭৩ মিটার গাইড ওয়াল কাজেও বাধা প্রদান করছে কুর্শারহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা।

উপরন্তু বিএসএফ সদস্যরা সীমান্তে লাল পতাকা টাঙিয়ে সীমান্তের জিরো লাইনে বাঁশের চৌকি তৈরি করে অবস্থান নিয়ে ২৪ ঘন্টা টহল অব্যাহত রেখেছে। এ দিকে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সীমান্তে লাল পতাকা ও টহল জোরদার করায় সীমান্তবাসীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

জুম্মারপাড় সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান ও জহিরণ বেওয়া জানিয়েছেন, বিএসএফ যেভাবে লাল পতাকা টাঙিয়ে ২৪ ঘন্টা টহল অব্যাহত রেখেছে তা দেখে আমরা খুবই শঙ্কিত অবস্থায় রয়েছি। তাই আমরা দ্রুত বিষয়টি সমাধানের জন্য দু’দেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

একই এলাকার বাসিন্দা ও ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জান্নাতী বেগম জানান, যেভাবে বিএসএফ রাস্তা নির্মাণ কাজের বাধা প্রদান করছে তাতে করে সীমান্তবাসীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তির দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইড ইনচার্জ সফিকুল আজম সিজার সড়ক নির্মাণে বাধা দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে জানান, যখনেই কাজ করতে যায় তখনই ভারতীয় বিএসএফের সদস্যরা বাধা দেন। বিএসএফ ঐ অংশের ৩০০ মিটার সড়কের কাজ বন্ধ  করে দেয় এবং লাল পতাকা টাঙিয়ে ২৪ ঘন্টা অবস্থান করায় সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল এস এম তৌহিদুল আলম জানান, সড়কটির কিছু অংশ সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ গজের মধ্যে পড়ায় বিএসএফ নির্মাণ কাজে আপত্তি প্রদান করেছে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুযায়ী- জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো দেশই পাকা স্থাপনা করতে পারবে না। আমরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্মানাধীন জিরো লাইনের ৩০০ মিটার রাস্তার ডিজাইন বিএসএফের নিকট জানিয়েছি। বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় তাদের নিকট থেকে অনাপত্তি পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও জানান, বিএসএফ লাল পতাকা টাঙিয়ে দেওয়ায় আমরাও লাল পতাকা টাঙিয়ে সীমান্তে শান্তি-শৃংখলা রক্ষার্থে ২৪ ঘন্টা বিজিবি’র টহল জোরদার রেখেছি।