মুন্সীগঞ্জ
পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ: ছাত্রলীগকর্মী, সাংবাদিকও আসামি
মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাটে গত বুধবারের সংঘর্ষস্থলে না থাকলেও ছাত্রলীগকর্মী, সাংবাদিক, মৃতসহ বিদেশে ছিলেন এমন ৪০ এর বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে পুলিশ ও কথিত শ্রমিকলীগ নেতার করা দুটি মামলায়।
সংঘর্ষের পর গ্রেফতার ২৪ জনের তথ্যে আসামির নাম নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানালেও বিএনপি নেতারা জনান, ঘটনার দিন বিভিন্ন স্থান থেকে যে ২৪ জনকে আটক করেছিল তাদের মধ্যে এমন কেউ ছিল না যারা জেলার তৃণমূল পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের নাম জানে। পুলিশ তদন্ত করে যারা সংঘর্ষে জড়িত ছিলেন না তাদের নাম বাদ দেওয়ার কথা বললেও বাদ দেওয়ার আগ পর্যন্ত তাদেরকে পালিয়েই বেড়াতে হবে।
এদিকে, পুলিশে গুলিতে মারা যাওয়ার পাঁচ দিন পার হয়ে গেলেও যুবদলকর্মী শহিদুল ইসলাম শাওন ভূঁইয়ার হত্যা মামলা হয়নি। মামলার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারিকুজ্জামান জানান, আমরা কোর্টকে জানিয়েছি।
সংঘর্ষে আহত যুবদলকর্মী শহিদুল ইসলাম শাওন ভূঁইয়া সংঘর্ষের পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মস্তিস্কে গুলির আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের সনদে বলা হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাঈনউদ্দিন এবং শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল মালেক বাদী হয়ে ১ হাজার ৩৬৫ জনকে আসামি করে দুটি মামলা করেছেন। পুলিশের মামলার ১৪৭ নম্বর আসামি ভট্টাচার্যেরবাগ এলাকার বাসিন্দা ছাত্রলীগকর্মী হাসান শেখ। তিনি জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ পাভেলের সঙ্গে তার বাসায় ছিলেন।
শহরের পাঁচঘরিয়াকান্দি এলাকার হুমায়ুন কবীর দৈনিক খবরপত্রের জেলা প্রতিনিধি। তিনি জানান, দুর্ঘটনায় আঙুল ভেঙে যাওয়ায় ১৫ দিন ধরে তিনি বাড়িতে। কিন্তু দুই মামলাতেই তাকে আসামি করা হয়েছে।
সংঘর্ষের পর থেকেই আত্মগোপনে বিএনপির নেতাকর্মীরা। জেলা কার্যালয়ও কেউ আসছেন না। কার্যালয়টিতে তালা ঝুলছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, গ্রেপ্তার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনের চেষ্টা করছেন।
বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা যায়, কয়েক দফা এজাহার বদল করে মামলার আসামি করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকটি পক্ষের কাছ থেকে নাম নেওয়া হয়েছে। তারা ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে সংঘর্ষস্থলে না থাকা বিদেশে থাকা, ছাত্রলীগকর্মী সাংবাদিকসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম দিয়েছে। এজাহারে সদর উপজেলার দুইটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন ছাড়াও টঙ্গিবাড়ী, লৌহজং, শ্রীনগর, সিরাজদীখান ও গজারিয়া উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছ।
শ্রমিক লীগের কার্যালয় আবদুল মালেকের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মুক্তারপুর শ্রমিক লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করেছে বিএনপি। এতে শ্রমিক লীগের কর্মী-সমর্থকরা আহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তারপুর সেতুর ঢালে বাঁশের খুঁটির ওপরে ত্রিপলের একটি ছাউনি রয়েছে। বেড়াহীন এই ছাউনিতে হামলায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মামলার বাদী আবদুল মালেকের অভিযোগ। ছাউনির দক্ষিণে চায়ের দোকান এবং উত্তরে মুক্তারপুর সেতুর ওয়ে স্কেলের কার্যালয়। জায়গাটি সেতু বিভাগের। ছাউনিতে মুক্তারপুর স্ট্যান্ড কমিউনিটি পুলিশ এবং মুন্সীগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানার।
এক মামলার প্রধান আসামি সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, মুক্তারপুরে শ্রমিক লীগের কার্যালয় নেই। অতি উৎসাহী হয়ে নিজেকে শ্রমিক লীগ নেতা দাবি করে আবদুল মালেক বানোয়াট মামলা করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করতে।
ফেরিঘাট এলাকায় শ্রমিক লীগের কার্যালয় না থাকলেও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগেও মামলা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে। আবদুল মালেক বলেছেন, শ্রমিক লীগের কার্যালয়ের বয়স ৯ বছর। সেতু বিভাগের জমিতে কীভাবে কার্যালয় বানালেন- প্রশ্নে তিনি বলেছেন, পরিত্যক্ত জায়গায় অস্থায়ী কার্যালয় বানানো হয়েছে বসার জন্য।
এজাহারে মৃত ব্যক্তি, ক্রীড়া সংগঠন, ছাত্রলীগকর্মীর নাম থাকার বিষয়ে ওসি মো. তারিকুজ্জামান জানান, ছাত্রলীগকর্মী যদি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তাহলে তো মামলায় জড়াবেই। আমরা সংঘর্ষের পর আটক ২৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাদের নাম পেয়েছি তাদের আসামি করা হয়েছে। তারাই মৃত, প্রবাসী ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেই- এমন ব্যক্তিদের নাম দিয়ে থাকলে সেটা তদন্ত করে বাদ দেওয়া হবে।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: