কুষ্টিয়ায় অবহেলায় নবজাতক মৃত্যুর অভিযোগ

কুষ্টিয়ায় চিকিৎসকের অনুপস্থিতি ও নার্স-আয়াদের অবহেলায় নবজাতক মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে ঘটে যাওয়া নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর স্বজনদের অভিযোগ অদক্ষ নার্স আয়ারা টেনে হিচরে নরমাল ডেলিভারি করার চেষ্টাকালে নবজাতকের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়ে বাচ্চাটির মৃত্যু হয়েছে। রোগীর স্বজনদের এমন অভিযোগ মৌখিকভাবে শুনেছেন বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার মোল্লাতেঘরিয়া গ্রামের আমিরুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন (৩০) ২য় সন্তান প্রসব বেদনা নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে সবকিছু ঠিকঠাক আছে এমন মন্তব্য করে রোগীকে গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তির সুপারিশ করেন।
রোগীর স্বামী আমিরুল ইসলাম জানান, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জরুরি বিভাগ থেকে ৬নং কক্ষে রোগী নিয়ে গিয়ে দেখাতে বলেন, সেখানে নিয়ে গেলে ওই কক্ষের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শারমীন মোস্তারী বিথি চেকআপ করে সবকিছু ঠিক আছে বলে জানান এবং রোগীকে ওয়ার্ডে নিতে বলেন, ওই ডাক্তার আপা বলেছিলেন কোনো সমস্যা নেই, নরমাল ডেলিভারিতেই বাচ্চা হবে। অথচ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আমার স্ত্রীর গর্ভজাত বাচ্চাটাকে ওরা মেরে ফেলে। আমি ঘটনাটি তদন্ত করে বিচার দাবি করছি।
সাথে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী প্রসূতির মা সাজেদা বেগম বলেন, ‘ওয়ার্ডে নেয়ার পর নার্সরা ডাক্তারের লিখে দেয়া কাগজ দেখে জানায় নরমাল ডেলিভারিতেই হবে। আমাদের অপেক্ষা করতে বলে নার্সরা, এসময়ের মধ্যে নরমাল ডেলিভারির জন্য ডাক্তারের লিখে দেয়া ওষুধ খাওয়ানো হয় প্রসূতিকে। এরপর দুপুর গড়িয়ে বিকাল সন্ধ্যা পার হলেও ডেলিভারি করাতে পারেনি ওয়ার্ডের নার্সরা। এসময় সেখানে কোনো ডাক্তার ছিলো না। আমার মেয়ের কষ্ট দেখে নার্স আপাদের বার বার বলেছিলাম দরকার হলে ডাক্তার আপাকে ডাকুন, না হয় সিজার করে ফেলুন। তখন তারা আমাকে ধমক দিয়ে সেখান থেকে বের করে দেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নার্সরা আমাকে জানায়, আপনার মেয়ের মৃত একটি মেয়ে বাচ্চা হয়েছে। গাইনী ওয়ার্ডের ডাক্তার ছাড়াই আয়া নার্সরা টেনে হিচরে বাচ্চা বের করতে গিয়ে মেরে ফেলেছে। টেবিলের উপর রেখে দেয়া বাচ্চার ঘার, মুখ হাত পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন ছিলো। যে কেউ দেখলেই বলবে বাচ্চাটিকে মেরে ফেলানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের বিভাগের সহকারী রেজিষ্টার সুমাইয়া ইসমাত জাহান এর মুঠোফোন এ একাধিকবার কল দিলে তার স্বামী ডা. মনিরুজ্জামান কল রিসিভ করে বলেন, এখন উনি কোন কথা বলতে পারবেন না, হাসপাতালের কোনো কথা জানতে চাইলে আগামীকাল হাসপাতালে গিয়ে জেনে নিন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হোসেন ইমাম এর মুঠোফোন এ কল করলে তিনি রিসিভ করেননি এবং কল রিসিভের অনুরোধে খুদে বার্তা দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায় নি।
তবে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে আলাপাকালে জানান, ‘নার্স আয়াদের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর সংবাদটি আমি শুনেছি। বিষয়টি আমরাও তদন্ত করে দেখবো। তবে রোগীদের পক্ষ থেকে যদি কেউ সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই জড়িত বা দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে প্রসব বেদনায় চিকিৎসা নিতে আসা প্রসূতি মা ও শিশু মৃত্যুর একাধিক ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। নানা মহল থেকে এবিষয়ে একাধিক অভিযোগ থাকলেও কোনো ঘটনারই তদন্তসহ বিচার না হওয়ায় লাগাম ধরা যাচ্ছে না বলে অভিন্ন অভিযোগ সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা কারশেদ আলম এবং সচেতন নাগরিক কমিটি সনাক কুষ্টিয়ার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম টুকুর।
বিভি/রিসি
মন্তব্য করুন: