• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বদলে গেছে কামার বলরামের জীবনের গল্প

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ২০:০৯, ১৯ মার্চ ২০২৩

ফন্ট সাইজ
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বদলে গেছে কামার বলরামের জীবনের গল্প

ইনসেটে উপহারের ঘর। কর্মকারের কাজ ও ছাগল পালন করছেন বলরাম

ষাটোর্ধ্ব বলরাম কর্মকার। অসুস্থ স্ত্রীর ও ছেলেকে চিকিৎসা করাতে হয়ে পড়েন ঋণগ্রস্থ। ভিটেমাটি বিক্রি করে  ঋণের টাকা পরিশোধ করেন। পরিণত হন ভূমিহীনে। সর্বস্ব হারিয়ে হতাশ এই মানুষটি দেশ ছাড়ারও সিদ্ধান্ত নেন। পরে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের একটি ঘর  পান। এই ঘরে তার শেষ বয়সে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। বদলে গেছে জীবন। 

শুধু ঘরই নয়, ঘরের সাথে পেয়েছেন ২ শতাংশ জমি। এই জমির একটি কোনে কামারশালা স্থাপন করেছেন। এখানে দা, কাচি, বটি তৈরীর মাধ্যমে লোহার কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন। সেই সাথে ছাগল ও হাঁস মুরগী পালন করছেন। আশ্রয়ণের আঙ্গিনায় লাউ, বেগুন,ডাটাসহ সবজির আবাদ করেছেন। পঙ্গু ছেলে জয়দেব কর্মকারকে নিয়ে তার সংসার ভালই চলছে। 

বলরাম কর্মকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের ঊনশিয়া গ্রামের মনোরঞ্জন কর্মকারের ছেলে। 

বলরাম কর্মকার বলেন, আমার বাবা মনোরঞ্জন কর্মকার ঊনশিয়া গ্রামের একজন বিখ্যাত কর্মকার ছিলেন। আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই ভাল ছিল। বাবার মৃত্যুর পর আমি সংসারের হাল ধরি। আমার দোতলা টিনের ঘর ও ২ বিঘা মাঠের জমি ছিল। স্ত্রী ও ছেলে অসুস্থ হলে ঋণ করে তাদের চিকিৎসা করাই। স্ত্রী মারা যায়। ছেলে সুস্থ হয়। ঋনের দায়ে জমি,বাড়ি বিক্রি করে দেই। ভূমিহীন হয়ে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে থাকি। ৫ ছেলের মধ্যে পঙ্গু ছেলে জয়দেব আমার সাথে রয়েছে। ৪ ছেলে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছে। ভিটেমাটি হারিয়ে আমি হতাশ হয়ে পড়ি। তাই ভারত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের একটি ঘর পাই। এই ঘরে বসবাস করছি।

বর্তমানে কিভাবে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘরের পাশে কামারশালা করে লোহার কাজ করছি। পঙ্গু ছেলেকে নিয়ে কাজ করে এখান থেকে সংসার চালানোর টাকা উপার্জিত হচ্ছে। এই আয় দিয়ে ৫ জনের সংসার ভালভাবে চলছে। ছাগল-মুরগী পালন করছি। সেই সাথে আশ্রয়ণের আঙ্গিনায় লাউ, বেগুন, ডাটা সহ সবজির চাষ করছি। আশ্রয়ণে ঘর পেয়ে  আমার জীবন এখন সমৃদ্ধ। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাকে তিনি নতুন করে বাঁচার অবলম্বন করে দিয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আমি পূজার সময় প্রার্থনা করি। ভগবান যেন তাকে দীর্ঘ জীবন দেন। সব সময় তাঁরা সুস্বাস্থ ও সাফল্য কামনা করি।

বলরাম কর্মকারের প্রতিবেশি এনায়েত বিশ্বাস ও উজ্জ্বল ফারজী বলেন, বলরাম কর্মকার শেষ জীবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। একটি ঘর তার জীবনের গল্পকে বদলে দিয়েছে। তিনি হতাশা কাটিয়ে পৈতৃক পেশা আকরে ধরে  সমৃদ্ধ জীবন পেয়েছেন। তিনি হতাশা গ্রস্থ ও বৃদ্ধদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

এদিকে আগামী ২২মার্চ  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটালীপাড়া উপজেলার ১২৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে ঘরের চাবি ও দলিল হস্তান্তর করবেন। এই ১১৯টি পরিবারের মধ্যে ঘর পাচ্ছেন কয়খা গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা সালেহা বেগম। 

তিনি বলেন, এতোদিন আমার ঘর ও জায়গা কিছুই ছিল না। অন্যের জায়গায় একটি ঝুঁপড়ি ঘর তৈরী করে থাকতাম। আগামী বুধবার আমাগো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটি পাকা ঘর ও ২শতাংশ জমি দিবেন। আমি খুবই আনন্দিত। আমার আর এখন অন্যের জায়গায় থাকতে হবে না। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আমাদের উপজেলায় সরকারি ভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের অনেক ঘর দিয়েছেন। আগামী ২২মার্চ আরো ১১৯টি পরিবারের মাঝে ঘর বিতরণ করবেন। এছাড়াও মুজিববর্ষ উপলক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় ভাবে ২০০টি ঘর দিয়ে ছিলেন। সে ঘরগুলো আমরা সঠিক ভাবে ২০০টি গৃহহীন পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছি। 

উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণে আমরা কোটালীপাড়া উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন করতে পেরেছি। এ জন্য আমরা কোটালীপাড়াবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরেদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘ক’ শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ১টি সেমি পাঁকা ঘর ও ২ শতাংশ জমি দিয়েছেন। ঘর বিতরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, অসহায়, স্বামী পরিত্যাক্তা, বিধবাসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষকে আমরা আগ্রাধিকার দিয়েছি। তারপর ভূমিহীন ও গৃহহীন তালিকাভূক্ত সব পরিবারকেই আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দিয়েছি। ঘর পেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির এসব মানুষ সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন। আমরা তাদের আত্ম কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। তাই তারা উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উন্নয়ন প্রতিনিধি ও অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, দেশে  কোন মানুষই ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না বলে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে আমরা কোটালীপাড়া উপজেলায় ২৩৫টি ঘর বিতরণ করেছি। আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাচ্যুয়াল প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে আরো ১২৯টি ঘর হস্তান্তর করবেন। এরমধ্য দিয়ে কোটালীপাড়া হালনাগাদ তথ্যনুসারে ক শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত উপজেলা হবে। তবে ভবিষ্যতে কোন ভূমিহীন ও গৃহহীন পাওয়া গেলে তাদেরও এ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।

বিভি/এমএস/এজেড

মন্তব্য করুন: