মান্দায় কাঠের মাইক্রো তৈরি

নওগাঁর মান্দায় কাঠের মাইক্রো তৈরি করে সম্প্রতি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছেন সামছুদ্দিন মন্ডল ওরফে সামু মিস্ত্রি নামে এক ব্যক্তি। পেশায় যিনি একজন টিনের ছাউনী মিস্ত্রী (ঘরানী)। টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন এলাকার লোকজনের ঘর-বাড়ির টিনের ছাউনীর কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন তিনি। তার নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। নিজের একান্ত প্রচেষ্টায় কাঠের মাইক্রো তৈরি করার পর কোনো রকম তেল-মবিল ছাড়াই তা আবার রাস্তায় চালিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। দেখে বুঝার উপায় নেই যে, সেটি কাঠের তৈরি।
প্রতিনিয়ত সামছুদ্দিন নিত্য নতুন চিন্তা- চেতনাকে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে ছয়মাসের প্রচেষ্টায় একটি কাঠের মাইক্রো তেরি করতে সক্ষম হন। এতে বিভিন্ন সামগ্রী (মটর,শ্যাপ, চার্জার ব্যাটারী,কন্ট্রোল বক্স, চাকা, স্টিয়ারিং এবং নতুন- পুরাতনসহ অন্যান্য উপকরণ সমাগ্রী কিনতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
কাঠ দিয়ে নিজস্ব প্রযুক্তিতে এসব সামগ্রী ও যানবাহন তৈরি করে সমগ্র নেট দুনিয়ায় হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন তিনি। মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ি সরদারপাড়ার সামছুদ্দিন মন্ডল ওরফে সামু মিস্ত্রি কাঠের মাইক্রো তৈরি করে এখন ভাইরাল ম্যান বলে পরিচিত। প্রতিদিন সকাল-বিকাল দেলুয়াবাড়ি বাজার (নওগাঁ- রাজশাহী মহাসড়ক সংলগ্ন বিলপাকুড়িয়া শহীদবাজার রোডের মোড়) থেকে প্রায় হাফ কিলোমিটার দূরে তার গ্রামের বাড়িতে কাঠের তৈরি মাইক্রো দেখতে ছুটে আসে এলাকার কৌতূহলী মানুষ।
সামছুদ্দিন মন্ডল ওরফে সামু মিস্ত্রির কাঠের তৈরী মাইক্রোটি একবার চার্জে টানা কয়েক ঘণ্টা রাস্তায় চালানো সম্ভব। আর্থিক সহযোগিতা পেলে সামনে আরও ভালো কিছু করার আশা তার। এজন্য সকলের সার্বিক সহযোগীতা কামনা করেছেন তিনি।
সামছুদ্দিন মন্ডল ওরফে সামু মিস্ত্রি জানান, তার বাবার সংসারে অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে তিনি তেমন একটা লেখাপাড়ার সুযোগ পাননি। মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন তিনি। তারপর আর কখনো স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তিনি কখনোই সময় অপচয় করতেন না। বিয়ের আগে থেকেই তিনি বিভিন্ন সৃষ্টিশীল কাজ করতেন। একবার কোন বিষয় তার মাথায় ঢুকলে তিনি ওই বিষয় নিয়েই চর্চা করে থাকেন। তার কথা যে, অন্যরা পারলে আমি কেনো পারবো না!
জীবন- জীবিকার তাগিতে ১৯৯৫ সাল থেকে অদ্যবধি তিনি টিনের ছাউনী মিস্ত্রী (ঘরানী) হিসেবে কাজ করে আসছেন। পেশাগত কাজের ফাঁকে- ফাঁকে অবসর সময়ে তিনি বিভিন্ন রকমের সৃষ্টিশীল কাজ করে থাকেন। বিয়ের আগে তিনি একবার বাঁশের সাইকেল এবং বিয়ের পর তার ছেলের জন্য একটি কাঠের ভ্যান বানিয়েছিলেন। এরপর একটি কাঠের মটর সাইকেল তৈরি করেন। তালা-চাবি ও একটি খড় কাটা মেশিন এবং ডিজিটাল প্রজেক্টর তরিি করেন। এর কিছুদিনপর ছেলের মোবাইল এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে ইউটিউবে ভিডিও দেখে কাঠ ও টিন দিয়ে একটি হেলিকপ্টার বানানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তা আর সফল হয়নি। তবুও তিনি কখনো মনোবল হারাননি।
কুসুম্বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নওফেল আলী মন্ডল জানান, বিষয়টি অবগত নয়। তবে লোকমুখে শুনছি যে, দেলুয়াবাড়ির সামছুদ্দিন মন্ডল ওরফে সামু মিস্ত্রির কাঠের তৈরি মাইক্রোটি সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও যে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে সামছুদ্দিন তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সামছুদ্দিনকে যদি সরকারিভাবে সহযোগিতা করা যায় তবে সে দেশের জন্য অনেক বড় কিছু করতে পারবে।
স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্যোগী ব্যক্তিরা যদি সামছুদ্দিনের মেধাকে মূল্যায়ন করেন, তবে সে তার উদ্ভাবনকে আরো সামনে এগিয়ে নিতে পারবে। সমৃদ্ধি পাবে শিল্প, সময়ের বিবর্তনে এলাকা ছাপিয়ে দেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বে, এমনটাই মনে করছেন সচেতনরা।
বিভি/রিসি
মন্তব্য করুন: