যুবলীগ চেয়ারম্যানের স্ত্রীর বাসায় অভিযান, ৫ আইনজীবী গ্রেফতার

যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী অ্যাডভোকেট যুথি
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে। এরপর রাজধানীর গুলশানে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী (স্বতন্ত্র) নাহিদ সুলতানা যুথীর বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজন আইনজীবীকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অ্যাডভোকেট যুথি যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী।
শুক্রবার (৮ মার্চ) রাতে রাজধানীর বনানীতে যুথির বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচনে মারামারি ঘটনায় শাহবাগ থানায় হওয়া মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। মারামারি ও মানুষের উপর কেনো হামলা হয়েছে, সে বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বাকিদের ধরতে ডিবির অভিযান চলছে। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দুদিন শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ হয়। কিন্তু গত ৭ মার্চ রাতে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ কয়েকজন আহত হন।
আরও পড়ুন: পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান, আটক তিন
গ্রেফতারকৃতরা হলেন-এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি আইনজীবী কাজী বশির আহমেদ, ৯ নম্বর আসামি অ্যাডভোকেট তুষার, ১১ নম্বর আসামি অ্যাডভোকেট তরিকুল, ৮ নম্বর আসামি অ্যাডভোকেট সুমন ও ৬ নম্বর আসামি অ্যাডভোকেট উসমান।
মামলায় আসামিরা হলেন- অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি, অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ, অ্যাডভোকেট শাকিলা রৌশন, অ্যাডভোকেট কাজী বশির আহম্মেদ, ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরী, ব্যারিস্টার উসমান, অ্যাডভোকেট আরিফ, অ্যাডভোকেট সুমন, অ্যাডভোকেট তুষার, রবিউল, ব্যারিস্টার চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা (কবিতা), সাইদুর রহমান জুয়েল (৪০), অলিউর, যুবলীগ নেতা জয়দেব নন্দী, মাইন উদ্দিন রানা, মশিউর রহমান সুমন, কামাল হোসেন, আসলাম রাইয়ান, অ্যাডভোকেট তরিকুল ও অ্যাডভোকেট সোহাগ। এ ছাড়া মামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলার পর রাতেই বিএনপিপন্থি ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয় যুথির বাসা থেকে। এই মামলার এক নম্বর আসামি যুথি সেসময় বাসায় ছিলেন না বলে জানা গেছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, এক নম্বর আসামির (যুথির) নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নিচ তলার শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে অস্ত্র হাতে ঢুকে বাদীসহ নির্বাচন সাব-কমিটির অন্য সদস্যদের গালিগালাজ করেন আসামিরা। দুই আসামি লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশে মাথায় আঘাত করতে গেলে বাদী বাধা দেন। এতে তার বাঁ কানের উপরে মাথার অংশে মারাত্মক জখম হন। অন্য আসামিরা লাঠি ও চেয়ার দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর এবং লাথি দিয়ে বাদীর শরীরের জখম করেন। তার পরনের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলা হয়।
বাদীর সঙ্গে থাকা ব্যারিস্টার জাকারিয়া হাবিবকে মারধর করেন আসামিরা। লাঠির আঘাতে জাকারিয়ার ডান হাতের আঙুল ভেঙে যায়। টানাটানিতে তার পরনের কাপড় ছিঁড়ে যায়। আসামিরা তার মোবাইল ফোন নিয়ে যান। তারা অ্যাডভোকেট রিনা বেগমকে চড়-থাপ্পর ও হুমকি দেন। গলা চেপে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। অজ্ঞাত অন্য আসামিরা অডিটোরিয়ামের ভেতরে ভাঙচুর ও অরাজকতা সৃষ্টি করেন। এর ফলে নির্বাচনি দায়িত্বরত সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। নির্বাচনি কার্যক্রম ভণ্ডুল হয়ে যায়।
এজাহারে আরও বলা হয়, নির্বাচন সাব-কমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরকে অস্ত্রের মুখে ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক হিসেবে নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করতে বাধ্য করেন এক নম্বর আসামি। নির্বাচন সাব-কমিটির সদস্যরা জীবন বাঁচাতে ভোট গণনার কাজ না করেই চলে যেতে বাধ্য হন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ঘটনার সবকিছু ধারণ করা আছে।
বিভি/এসএইচ/এজেড
মন্তব্য করুন: