স্কুলছাত্রীকে যৌন হেনস্থা করায় কিশোর গ্যাংয়ের ৪ সদস্য গ্রেফতার

মিরসরাইয়ে স্কুলছাত্রীকে যৌন হেনস্থা ও স্কুলছাত্রীর মায়ের পথরোধ করে হত্যার হুমকির অপরাধে কিশোর গ্যাংএর ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মিরসরাই থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ১১ নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডস্থ গজারিয়া এলাকার এমরান হোসেন বাদশাহ প্রকাশ শুভ (২০), সাজ্জাদ হোসেন সাগর (২১), মো: শামছুদ্দিন প্রকাশ সালমান (২০) ও রিফাত হোসেন রিমন (২০) ।
রবিবার (১৭ সেপ্টম্বর) দুপুরে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর পিতার অভিযোগের ভিত্তিতে মিরসরাই থানা অফিসা রইনচার্জ কবির হোসেন নিতৃত্বে উপস্থিত অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় এজাহারনামীয় ৫নং আসামি মো: সবুজসহ আরো ৪ কিশোর গ্যাং পালিয়ে গেছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, উপজেলার ১০নং মিঠানালা ইউনিয়নের বেলায়েত হোসেনের স্কুলপড়ুয়া ১৩ বছরের কিশোরীকে স্কুলে যাতায়াতের পথে পাশের নংমঘাদিয়া ইউনিয়নের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা যৌন উত্যক্ত করে আসছিল। এক পর্যায়ে গত ১১ মে সিএনজি যোগে অপহরণ করার চেষ্টা করে ও যৌন হেনস্থা করে। অপহরণ করতে না পেরে ওই স্কুলছাত্রীকে সিএনসি চাপা দিয়ে চলে যায়। ওই ঘটনায় স্কুলছাত্রীর পিতা বেলায়েত হোসেন বাদি হয়ে কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্য এমরান হোসেন বাদশাহ প্রকাশ শুভ ও ৫নং এজাহার নামীয় আসামি মো:সবুজের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মিরসরাই থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মিরসরাই থানা পুলিশ সবুজকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে ও প্রধান আসামি এমরান হোসেন বাদশাহ প্রকাশ শুভ আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে হাজতে প্রেরণ করেন।
পরবর্তীতে জামিনে এসে কিশোর গ্যাং সদস্যরা পুনরায় ১৪ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৬টায় ওই স্কুল ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার মা-বাবাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। অন্যথায় তাদের মেয়েকে অপহরণ পরবর্তী গণধর্ষণ করে হত্যার হুমকি দেয়। উক্ত ঘটনায় স্কুলছাত্রীর পিতা বেলায়েত মিরসরাই থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৪ মাস পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় ওই ছাত্রীর। এতে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টিহয়। বিষয়টি মিরসরাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকেও অবহিত করা হয়। মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা প্রশাসনের সহায়তায় রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ওই স্কুলছাত্রীর মা আকলীমা আক্তার তার মেয়েকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যান। মেয়েকে বিদ্যালয়ে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথেই সকাল ১০টার দিকে মঘাদিয়া ইউনিয়নের সাধুর বাজার সিএনজি ষ্ট্যান্ড পৌছলে সেখানে শুভ ও সবুজের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং এর ৭ থেকে ৮জন দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার পথ রোধ করে। এ সময় কিশোরগ্যাং এর সদস্যরা আকলিমা আক্তারকে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেয়ারহু মকি দেয় অন্যথায় হত্যা করা হবে বলে জানায়। কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা বলে বর্তমানে হত্যা করা হলেও ১ মাসের মধ্যে জামিন পাওয়া যায়। তাই বাড়াবাড়ি না করে ভালোয় ভালোয় যেন তাদের বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ থানা ও আদালত থেকে তুলে নেয়া হয়। বিষয়টি কিশোরীর বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানতে পেরে থানায় খবর দিলে স্থানীয় সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় থানা পুলিশ তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে কিশোরগ্যাং এর ৪জনকে আটক করতে সক্ষম হয়।
মিরসরাই থানা অফিসার ইনচার্জ জানান, বখাটেদের পূর্বেও একই ঘটনায় গ্রেফতার করে হাজতে পাঠানো হয়েছিল। পুনরায় তারা জামিনে এসে স্কুলছাত্রীর বাড়িতে হুমকি দেয় ও সর্বশেষ তার মায়ের পথ রোধ করে ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে হত্যার ইঙ্গিত দেয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ৪ জনকে আটক করতে সক্ষম হই। তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরীন জানান, বিষয়টি জেলাপ্রশাসক ও স্থানীয় এমপিকে অবহিত করা আছে। তবে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই মোবাইল কোর্ট করার পক্ষে থাকলেও সেটি নানা কারনে সম্ভব হয়নি।
বিভি/এ.জেড
মন্তব্য করুন: