• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ক্ষমতার বলে কোটি টাকার সম্পত্তি গড়েছেন ওসি আবুল খায়ের!

কুয়াকাটা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ৩১ আগস্ট ২০২৪

আপডেট: ১৩:১২, ৩১ আগস্ট ২০২৪

ফন্ট সাইজ
ক্ষমতার বলে কোটি টাকার সম্পত্তি গড়েছেন ওসি আবুল খায়ের!

ওসি আবুল খায়ের

ওসির ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ–দুর্নীতির মাধ্যমে পটুয়াখালীর মহিপুর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ আবুল খায়ের তার শ্বশুরের নামে কোটি টাকার সম্পত্তি গড়েছেন। শুধু অবৈধ সম্পদ উপার্জনই নয়, তার বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষ, দুর্নীতি, অন্যায়-অত্যাচার, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা-সহ নানা অভিযোগ। মহিপুর থানার সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার নির্যাতনের শিকার একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে এসব জানা যায়। ওই থানার আওতাধীন নির্যাতিত সাধারণ মানুষের দাবি একটাই, এই দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী কর্মকর্তাকে যেন বিচারের মুখোমুখি করা হয়। 

মহিপুর থানার সাবেক ওসি খন্দকার মো. আবুল খায়ের কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রথমে নিজের নামে বায়না রেজিস্ট্রি করলেও পরবর্তিকালে ওই জমি শ্বশুরের নামে কিনেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। ওই সম্পত্তিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সময় কোনো অর্থ পরিশোধ না করে প্রতিবেশী হালিম মোল্লা নামের এক জমির মালিককে জেল হাজতে প্রেরণ করে জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাবেক ওই কর্মকর্তা ওই থানায় কর্মরত অবস্থায় প্রকাশ্যে ট্যুরিজম সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও চাঁদা নেওয়ারও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। দাবিকৃত অর্থ না দিলে চলতো হয়রানি ও মামলা দেওয়ার হুমকি।  

জমি সংক্রান্ত ভুক্তভোগী হালিম বলেন, দেড় বছর আগেও পটুয়াখালীর পশ্চিম কুয়াকাটা এলাকায় সড়ক লাগোয়া ৭ শতাংশ জমির বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন। হঠাৎ ২০২৩ সালের কোনো এক রাতে তৎকালীন মহিপুর থানার ওসি খন্দকার মো. আবুল খায়ের একটি মামলায় স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য হালিম মোল্লা ও তার ছেলেসহ থানায় নিয়ে আসে। পরের দিন সকালে তাদের একটি মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ করেন। সাত দিন হাজত বাস শেষ করে বাড়ি ফিরে দেখেন কোনো অর্থ পরিশোধ না করে তার বাড়ির ওই সম্পত্তির চারপাশে উচ্চ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে জমি দখলে নেয় ওসি। পরবর্তীকালে সেখানে একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করে সেখানে ওই জমির মালিক হিসেবে ওসি খায়েরের শ্বশুর মো. এনায়েত করিমের নাম লিখে দেন। আর তার বাড়িতে তিনি পরিবারসহ প্রবেশ করতে চাইলে মামলা ও গুম হওয়ার হুমকি দেন ওসি। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছ থেকে জোর করে নেয়া সাত শতাংশ জমির পাশাপাশি ক্রয় করেছেন মোট ৬০ শতাংশ জমি এবং তার হাত থেকে রেহাই পায়নি সরকারের খাস জমিও। এই সব জমি একসঙ্গে করেই গড়েন সীমানা প্রাচীর।  

এদিকে সাইনবোর্ডে জমির তফসিল উল্লেখ থাকলেও পরিমাণ উল্লেখ নেই। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, রেজিস্ট্রি বায়না সূত্রে এই জমির মালিক মো. এনায়েত করিম। জেএল নং ৫৭, কুয়াকাটা মৌজা, বিএসখতিয়ান নং ১২৮৪, বিএসদাগ ১২২৯। তবে বায়না রেজিস্ট্রি দলিল অনুযায়ী জমির পরিমান ৬০ শতাংশ। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা।  

স্থানীয় বাসিন্দা শুকুর মাঝি জানান, ওসি খায়ের তার শ্বশুরকে উপহার দেওয়া সম্পত্তিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সময় কোনো অর্থ পরিশোধ না করে হালিম মোল্লা নামের এক জমির মালিককে জেল হাজতে প্রেরণ করে জমি দখলে নিয়েছেন। অসহায় পরিবারটি আজ ভূমিহীন অবস্থায় আছেন। সাবেক ওসি দুর্নীতির সরজমিনে তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি এলাকাবাসীর।   

কুয়াকাটা ফিশ ফ্রাই মার্কেটের সভাপতি মো. কাওসার বলেন, ওসি খায়ের সাহেব একজন অসৎ মানুষ। থানায় কর্মরত থাকাকালীন আমাকে অফিসে ডেকে টাকা চায়। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সে আমার দোকানের বৈদ্যুতিক লাইন কেটে দেয়। পরে টাকা দিয়ে সংযোগ আবারও চালু করি। আমার ফিশ ফ্রাইয়ের দোকান থেকে বিভিন্ন সময় মেহমান এবং তার পরিবার নিয়ে এসে মাছ খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে গেছে।  

স্থানীয় সাংবাদিক রুমি জানান, আমি বিএনপির সমর্থন করি বলে ওসি আমার দোকান থেকে প্রায়ই চাঁদা নিতো। টাকা না দিলে মামলার হুমকি দিতো। বিএনপি করি কেন- সেজন্য সবসময় গালমন্দ করতো। মহিপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তার মতো অসৎ এবং দুর্নীতিবাজ ওসি এ থানায় আসেনি। ওসি খায়ের মহিপুর থানায় কর্মরত সময়কালে কী কী অপকর্ম করেছে এর সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচারের দাবি জানাচ্ছি।  

কুয়াকাটা পৌর ছাত্রদল নেতা সোহেল রানা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালীন প্রতিমন্ত্রীর ছেলে পরিচয় দিয়ে এই ওসি খায়ের বহু মানুষকে অত্যাচার করেছে। বিনা অপরাধে আমাকে বহু মামলায় অজ্ঞাত আসামি করার ভয় দেখিয়ে প্রায় প্রায় মোটা অংকের টাকা নিতো। টাকা না দিলে থানার লোক পাঠিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাতো। টাকা দেওয়া মাত্র চলে যেতো। ওসি খায়ের এভাবে শুধু আমাকে নয় বিএনপির সকল নেতা-কর্মীকে এভাবে রাত-দিন ভয়ভীতি ও হুমকির মাধ্যমে অত্যাচার চালাত। তিনি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কলঙ্ক বলে মনে করছি আমি।  

ট্যুরিজম সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ওসি খায়ের থানায় কর্মরত অবস্থায় প্রকাশ্যে চাঁদা গ্রহণ করতেন। আর ঘুষের অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে বা অপারগতা প্রকাশ করলে গুম ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানোর অভিযোগ করেন অনেক ভুক্তভোগী। এছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ক্ষমতা দেখিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাত বলে অভিযোগ রয়েছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রেস্টুরেন্ট ও নিত্য প্রয়োজনীয় দোকানপাট থেকে বাকিতে মালামাল নিয়ে টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে একাধিক। এমনকি সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদকে প্রকাশ্যে আব্বা বলে সম্বোধন করতেন। 

কুয়াকাটার বৈশাখী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিক ইমাম হোসেন বলেন, মহিপুর থানার ওসি খায়ের সাহেব এখানে কর্মরত থাকা অবস্থায় কুয়াকাটা আসলেই তিনি আমার হোটেলে খাওয়া দাওয়া করতেন। কিন্তু কোনো সময় টাকা পরিশোধ করতেন না। টাকা চাইলে বলতো, লিখে রাখুন খাতায়। এভাবে খেতে খেতে তিনি ২৭ হাজার ২৪০ টাকা বিল করেছেন। কিন্তু যাওয়ার আগে তিনি বিল পরিশোধ না করেই চলে গেছেন। আমি আমার এই টাকা ফেরত চাই।  

জনপ্রিয় অভিনেতা সাদ্দাম মাল জানান তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিনা অপরাধে করাবাস করিয়েছেন ওসি খায়ের

জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সাদ্দাম মাল বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিনা অপরাধে বাদীপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ করে, আমাকে বেশ কয়েকদিন কারাবাস করিয়েছেন ওসি খায়ের। আমার সাথে অন্যায় হয়েছে এমনটা বলে ওসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন সে সময়। জমিজমা সংক্রান্ত একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে তিনি আমার কাছ থেকে একটি মোটা অংকের টাকাও নিয়েছেন। এবং সে বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিক তৎকালীন উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছিলাম। 

অভিনেতা আরও বলেন, তার কাছে কেউ নিরাপদ নয়। দুর্নীতিবাজ সাবেক ওসির দুর্নীতির সঠিক তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান এই শিল্পী। 

২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ১ জুন পর্যন্ত এ থানায় কর্মরত ছিলেন। এরপর সেখান থেকে পটুয়াখালী পুলিশ লাইনে। সেখান থেকে বিশেষ তদবিরের মাধ্যমে কিছু দিনের জন্য ঝালকাঠি জেলার সদর থানার শেখেরহাট তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে আবার তাকে ঝালকাঠি পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে ঝালকাঠি সদর ফাঁড়ি ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত আছেন এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে পটুয়াখালীর মহিপুর থানার সাবেক ওসি খন্দকার মো. আবুল খায়েরের ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়ার্টসঅ্যাপে একাধিক এসএমএস দিলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নিউজ প্রচার না করার শর্তে মোটা অংকের অর্থের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। নিজেকে বিএনপি প্রমাণ করতে বিভিন্ন এলাকার বিএনপি নেতা-কর্মীদের ফোন করানো হয় যাতে নিউজ অথবা তার নামে কোনো লেখালেখি না করা হয়। 

এ বিষয় পটুয়াখালী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আহমাদ মাঈনুল হাসান বলেন, সাবেক ওসি মহিপুর খন্দকার মো. আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশের কাছে কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ নেই। কেউ যদি অভিযোগ দেয়। তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2