ঋণের বোঝা টানতে না পেরে স্ত্রী-সন্তানদের হত্যার পর দিনমজুরের আত্মহত্যা

রাজশাহীতে ঋণের বোঝা টানতে না পেরে অভাব অনটনে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর নিজেই আত্মহননের পথ বেছে নেন কৃষক দিনমজুর মিনারুল ইসলাম। শুক্রবার সকালে দুই ঘর থেকে একই পরিবারের চার জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে দুই পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট রেখে যায়।
তাতে উল্লেখ রয়েছে অভাব ও ঋণের কারণেই পুরো পরিবাকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। সুইসাইড নোটে তাদের এই মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। তবে কসম দিয়ে যায়, তার বড় ভাইয়ের পরিবার কেউ তাদের মরা মুখ যেন না দেখে এবং জানাজায় উপস্থিত না হয়। একই পরিবারের চার জনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে স্ত্রী মনিরা বেগম, খড়খড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছেলে মাহিম ও দেড় বছরের মেয়ে মিথিলা। সুইসাইড নোট অনুয়ায়ী রাতে যে কোন সময়ে মিনারুল প্রথমে তার স্ত্রী এরপর ছেলে ও মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে নিজেই অন্য ঘরে ফ্যানের সাথে আত্মহত্যা করে। সকালে দরজা না খোলায় তার মা প্রথমে এসে ছেলের নাম ধরে ডাকাডাকি করে, সাড়া না পেয়ে টিনের দরজা ফাঁক করে দেখেন ফ্যানের সাথে ছেলে মরদেহ ঝুলছে। তার আত্মচিৎকারের প্রতিবেশীরা এসে দরজা ভেঙ্গে ভেরতে প্রবেশ করে উত্তরের ঘর থেকে স্ত্রী ও শিশু কন্যা এবং দক্ষিনের ঘর থেকে মিনারুল ও ছেলের মরদেহ দেখতে পায়।
আত্মহননকারী মিনারুলের পরিবার ও স্বজনরা জানায়, ছেলে হিসেবে সে খুবই ভালো, স্ত্রী সন্তানকে ভালোবাসতো। কোন দাম্পত্য কলহ ছিল না। কিন্তু ঋণে ডুবে থাকায় মানসিক অশান্তিতে ছিল। কিভাবে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছে না।
সংবাদ পেয়ে মিনারুলের শাশুড়ী ও মনিরা বেগমের মা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। মেয়ে জামাই ও দুই নাতির মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন তার জামাই অনেক ভালো। মেয়ের সাথে ভালো আচরণ করতো। আগে জুয়া খেললেও বিয়ের পর সেগুলো ছেড়ে দেয়। কোন নেশা তার ছিল না। বড় নাতির হাতের চিকিৎসার জন্য মেয়ে তার বাড়ীতে ২০দিন ছিল। গত ১৫দিন আগে দুই নাতিকে নিয়ে শশুরবাড়ী আসে।
ঋণ সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মিনারুলের শাশুড়ী জানান, মেয়ের মুখে শুনেছেন দুটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিল তার স্বামী। প্রতি সপ্তাহে সেই ঋণের কিস্তির টাকা দিতে কষ্ট হতো।
মৃত মিনারুলের পিতা রুস্তম আলী জানান, এর আগে তার ছেলের মোটা অংকের টাকা ঋণ ছিল। জমি বিক্রি করে সেই ঋণ শোধ করেন। নতুন করেন ঋণগ্রস্থ হওয়ার বিষয়টি তিনি জানতেন না।
এদিকে মিনারুলের পরিবারের এই মৃত্যুতে শোকে স্তব্দ পুরো গ্রাম। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই গ্রাম সহ দুর দুরন্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে তাদের দেখতে।
এদিকে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, সাইসাইড নোট অনুযায়ী স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যা মনে হলেও ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে গোয়েন্দা পুলিশ কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: