• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

৫০০ ভরি স্বর্ণ চুরির চাঞ্চল্যকর তথ্য; টার্গেট করে ৩ মাস ধরে চলে পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ১৫:১৭, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১৫:১৮, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
৫০০ ভরি স্বর্ণ চুরির চাঞ্চল্যকর তথ্য; টার্গেট করে ৩ মাস ধরে চলে পরিকল্পনা

অবশেষে রাজধানীর ফরচুন শপিং মলের শম্পা জুয়েলার্স থেকে ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির সেই চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) চট্টগ্রাম, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুর্ধর্ষ ওই চুরির সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একটি মোটরসাইকেলসহ চুরি হওয়া প্রায় ১৯০ ভরি স্বর্ণ, ৯৩ দশমিক ৫ গ্রাম রুপা ছাড়াও নগদ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করেছে ডিবি।

ডিবি জানিয়েছে, দীর্ঘ ৩ মাস ধরে চাঞ্চল্যকর এই চুরির পরিকল্পনা করা হয়। এটি বাস্তবায়নে বেশ কয়েকবার রেকিও করে চোর চক্রের সদস্যরা। গ্রেফতাররা হলেন- শাহিন মাতাব্বর ওরফে সাহিদ ওরফে শাহিন (৪৬), অনিতা রায় (৩১), মো. নূরুল ইসলাম (৩৩) ও উত্তম চন্দ্র সুর (৪৯)।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি জানায়, গত ৮ অক্টোবর রাতে মালিবাগের ফরচুন শপিং মলের শম্পা জুয়েলার্সে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় রমনা থানায় মামলার পরপরই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চোর চক্রের সদস্যরা গত ৩ মাস ধরে ফরচুন শপিং মলের ওই দোকানটি থেকে স্বর্ণালংকার চুরির পরিকল্পনা করে। পরে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বেশ কয়েকবার রেকিও করে। একপর্যায়ে চুরির উদ্দেশ্যে তারা হাতুড়ি, শাবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম আগে থেকেই মার্কেটের পেছনে টিনের চালের নিচে লুকিয়ে রাখে। পরে ঘটনার দিন গ্রেপ্তার সুমন মার্কেটে প্রবেশ করে বাথরুমের জানালার গ্রিলে সুতার মাধ্যমে ‘ইউ লুপ’ তৈরি করে সেগুলো মাটি পর্যন্ত নামিয়ে বেঁধে রাখে এবং চুরির সময় নিজেদের মুখ ঢেকে রাখার জন্য বাথরুমে বোরকা রেখে আসে।

পরে রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে চোর চক্রের সদস্যরা গণপূর্ত কোয়ার্টারের ভেতর দিয়ে মার্কেটের পেছনে পৌঁছায়। তারপর সেখানে আগে থেকে বেঁধে রাখা সুতার সঙ্গে রশি বেঁধে তারা ছাদে উঠে। এরপর গ্রিল কেটে বাথরুমের ভেতরে প্রবেশ করে এবং বোরকা পরে বাথরুমের দরজা ভেঙে শপিং মলে প্রবেশ করে। তারপর শম্পা জুয়েলার্স থেকে ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে তারা রাত আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে একই পথে পালিয়ে যায়। ওই সময় তারা চুরিতে ব্যবহৃত বোরকা ও সরঞ্জাম গণপূর্ত কোয়ার্টারের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়।

ডিবি জানায়, চোর চক্রের সদস্যদের অবস্থান শনাক্তের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে শাহিন মাতাব্বর ওরফে সাহিদ ওরফে শাহিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাহিনের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে প্রায় ১২১ দশমিক ০৭ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি একই দিন বরিশালের উজিরপুর থানার পূর্ব হারতা গ্রামে পৃথক অভিযান চালিয়ে পলাতক আসামি শৈশব রায় সুমনের স্ত্রী অনিতা রায়ের হেফাজত থেকে আরও ৫২ দশমিক ৮১ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

পরকালে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে মো. নূরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে তার কাছ থেকে প্রায় ২০০ ভরি স্বর্ণ ও একটি মোটরসাইকেলসহ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও অর্থ সরবরাহকারী ও রেকিতে অংশগ্রহণকারী উত্তম চন্দ্র সুরকে বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে পুরান ঢাকার শাখারী বাজারের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পৃথক এ অভিযানে তার কাছ থেকেও ১৩ দশমিক ৬৭ ভরি স্বর্ণ ও ৯৩ দশমিক ৫ গ্রাম রুপা উদ্ধার করা হয়।

ডিবি জানিয়েছে, চোরাই স্বর্ণের মধ্যে বেশকিছু স্বর্ণ পলিথিনে ভরে মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের এই অভিযানের মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

​শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকালে ঘটনাটির বিস্তারিত ও মামলার সর্বশেষ অগ্রগতি ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘ডিবির অভিযানে গ্রেফতার চারজন চোরচক্রের সদস্য। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া স্বর্ণালংকার চুরির শিকার হওয়া শম্পা জুয়েলার্সের বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।’

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম।

​উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে মালিবাগের ফরচুন শপিং মলে ‘শম্পা জুয়েলার্স’ থেকে প্রায় ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনা ঘটে। সিসিটিভি ফুটেজে বোরকা পরা অবস্থায় দুই ব্যক্তিকে তালা কেটে দোকানে প্রবেশ করে চুরি করতে দেখা যায়। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও এমন দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় চরম আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

এর আগে আগে ৫ অক্টোবর দিবাগত রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতেও লিলি জুয়েলার্স থেকে ১২৫ ভরি স্বর্ণ চুরি হয়। পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছিল। দীর্ঘ তদন্ত ও অভিযানের পর ডিবি চোরচক্রের সদস্যদের গ্রেফতার এবং চোরাই স্বর্ণালংকার উদ্ধারের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের অবসান হলো।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2