• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

দেশে ব্যাংকের সংখ্যা কমতে পারে  

প্রকাশিত: ২১:১৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ২১:১৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ফন্ট সাইজ
দেশে ব্যাংকের সংখ্যা কমতে পারে  

দেশের ব্যাংকের সংখ্যা কমতে পারে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার এ উদ্যোগ শিগগির গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ব্যাংকগুলোর এমডিদের পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি খাতের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এ পরামর্শ দেন গভর্নর। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

গত ৩১ জানুয়ারি, মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সর্বশেষ ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয় গত আগস্টে। প্রায় পাঁচ মাস পর অনুষ্ঠিত সভায় সব ডেপুটি গভর্নরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বৈঠকে বলেছেন, দেশের ৬১ ব্যাংকের মধ্যে ৪০টির মতো ব্যাংক ভালো অবস্থায় আছে। বাকিগুলোর মধ্যে ৮-১০টি ব্যাংক একীভূত হতে পারে। এজন্য ভালো ও দুর্বল ব্যাংকের এমডিদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ফলে ব্যাংকের সংখ্যা ৪২ থেকে ৪৫-এ নেমে আসতে পারে।

সভা শেষে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, `এখন ব্যাংক খাতে সংস্কার শুরু করতে হবে, এর বিকল্প নেই। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। সভায় এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, চলতি বছরের আর্থিক তথ্যের ভিত্তিতে আগামী বছরের মার্চ থেকে দুর্বল ব্যাংকের ব্যবসা সীমিত করে দেওয়া হবে। এরপরই একীভূত বা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করা হবে মূলধন ঘাটতি, উচ্চ খেলাপি ঋণ, তারল্য ও সুশাসনে কতটা ঘাটতি রয়েছে তার ভিত্তিতে।

এদিকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের একীভূত হওয়ার গভর্নরের পরামর্শের পর ব্যাংকারদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কেন ভালো ব্যাংকগুলো দুর্বল ব্যাংকের দায়িত্ব নেবে। সেটি হলে ভালো ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচকও খারাপ হয়ে যেতে পারে। আবার দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্র কী, সেটিও পরিষ্কার না। কারণ, দুর্বল ব্যাংকগুলোর অনেক বেনামি ঋণ রয়েছে, যা খেলাপির হিসাবের বাইরে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক এমডি বলেন, এ মুহূর্তে ভালো ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার কোনো উদ্যোগ ভালো ব্যাংকগুলো নেবে না। কারণ, তাতে ভালো ব্যাংকগুলোও সমস্যায় পড়তে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা বা নীতিমালা না দেওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ নিজ থেকে এগিয়ে আসবে বলে মনে হয় না।

২০২২ সালের ১২ জুলাই গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই বছরের ৩ আগস্ট আব্দুর রউফ তালুকদার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিটি ব্যাংকের অগ্রগতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণ করবেন।

দুর্বল ব্যাংকের তালিকা আগামী বছর থেকে
ব্যাংকার্স সভায় মুদ্রানীতির প্রধান বিষয়গুলো তুলে ধরার পরই ব্যাংকে সংকটের আগাম ও দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে (পিসিএ-ফ্রেমওয়ার্ক) আলোচনা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে উপস্থিত এমডিদের জানানো হয়, যেসব ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের বেশি এবং ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের অনুপাত (সিআরআর) সাড়ে ১২ শতাংশের কম, সেসব ব্যাংককে চার ভাগে ভাগ করা হবে। এ ধরনের ব্যাংকের পরিচালন খরচের সীমা, লভ্যাংশ বিতরণ, নতুন শাখা খোলা, আমানত ও ঋণ বিতরণের সুবিধা বন্ধ করে দিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে এই নীতিমালা কার্যকর করা হবে।

ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচকে পর্যালোচনার কথা বলেছে। আর্থিক সূচকে কেউ খারাপ করলে তাদের উন্নতির তাগিদ দিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতের জন্য এটা জরুরি ছিল। এতে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরবে।’

সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংক একীভূত ও অধিগ্রহণের চর্চা সামনে শুরু হবে। শর্ত পূরণ করতে না পারলে পরিণতি কী হবে, তা মাথায় রাখতে সব ব্যাংকের এমডিদের বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা ছিল। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। খেলাপি ঋণ কমানো ও ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরানোর বিষয়ে সামনে নতুন ঘোষণা আসবে। কোনো ব্যাংক নিজেদের পরিস্থিতির উন্নতি করতে না পারলে একীভূত বা অধিগ্রহণ হয়ে যাবে।’

ডলার-সংকট কাটাতে আসছে নতুন সুবিধা
সভা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডলার-সংকট কাটাতে নতুন উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে সভায়। বিদেশ থেকে কোনো বাংলাদেশি যেকোনো পরিমাণ ডলার আনলে কেউ প্রশ্ন করবে না, এমন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক চালু করবে ডলার-টাকা অদলবদল পদ্ধতি। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো উদ্বৃত্ত ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা নিতে পারবে। প্রয়োজন মতো সেই ডলার আবার টাকা জমা দিয়ে ফেরত নিতে পারবে।

আবার ব্যাংকে কোনো গ্রাহক বিদেশি মুদ্রা জমা রাখলে তার সুদের হার বাড়িয়ে ৭ থেকে ৯ শতাংশ করা হয়েছে। ব্যাংকের এমডিদের সেই তথ্য জানানো হয় সভায়। পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচার কমে আসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এমডিদের ধন্যবাদ জানানো হয়।

সভা শেষে এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান মাসরুর আরেফিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা আমাদের দেশীয় ব্যাংকগুলোর হিসাবে ডলার ফেরত আসার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। অবৈধভাবে যাঁরা অর্থপাচার করেছেন, তাঁরা আইনি নিশ্চয়তা ছাড়া সেই ডলার ফেরত আনবেন না। তবে বিদেশি মুদ্রা জমা রাখলে সুদহার বাড়ায় ব্যক্তি পর্যায়ের প্রবাসীরা ব্যাংকে ডলার জমা রাখতে আগ্রহী হবেন। কারণ, পৃথিবীর কোথাও ডলারের বিপরীতে এই ৮ থেকে ৯ শতাংশ মুনাফা দেওয়া হয় না। প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহে যেসব দেশ ও শহরে বাংলাদেশিরা বেশি থাকেন, সেখানে শিগগির রোড শো করবে ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংক এ জন্য বিশেষ পণ্য ও হটলাইন সেবা চালুর কাজ করছে।’

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2