কঠোর হুঁশিয়ারির মধ্যেই লিটারে ৯ টাকা বাড়ানো হয়েছে ভোজ্যতেলের দাম
ছবি: সংগৃহীত
সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারকে পাশ কাটিয়ে দাম বাড়ানোর এই প্রচেষ্টা চলছে কয়েক মাস ধরেই। তবে এ দাম বাড়ানোর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই বলে বুধবার সাংবাদিকদের জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, সরকারকে না জানিয়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টার কঠোর হুঁশিয়ারির মধ্যেই বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। ঢাকার কারওয়ান বাজার, রামপুরা, বাড্ডা, সেগুনবাগিচাসহ কয়েকটি এলাকার খুচরা দোকান এবং কয়েকটি সুপারশপ ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করেছেন। অর্থাৎ, প্রতি লিটারে দাম বাড়ানো হয়েছে ৯ টাকা। একইভাবে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯২২ থেকে বাড়িয়ে ৯৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে খুচরা বাজারের মুদি দোকানগুলোতে নতুন দামের তেলের সরবরাহ কম থাকায় আগের দামেই বিক্রি করতে দেখা গেছে।
গত ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন তেলের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে একটি চিঠি দেয়। চিঠিতে তারা গত মাসের ২৪ তারিখ থেকে তেলের দাম বাড়ানোর কথা জানায়। তাদের নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, এক লিটারের বোতল ১৯৮ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৯৬৫ টাকা, খোলা সয়াবিনের লিটার ১৭৯ এবং পাম অয়েলের দাম ১৬৯ টাকা। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সরকার ব্যবসায়ীদের তেলের দাম বাড়ানোর আবেদনে সাড়া দেয়নি। সরকারের অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন, এটা তারা পারেন না।
এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বুধবার সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ব্যবসায়ীরা যে প্রক্রিয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছেন, এর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকার কিছুই জানত না। কোম্পানিগুলো সামগ্রিকভাবে একত্র হয়ে এ কাজটি (ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো) করেছে। এই কাজটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
গত মঙ্গলবার ক্রয় কমিটিতে টিসিবির জন্য তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সয়াবিন তেল ৫০ লাখ লিটার, রাইস ব্রান অয়েল ১ কোটি লিটার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওনারা (ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী) এখন যে দামে বাজারে বিক্রি করছেন, সেটা থেকে প্রায় ২০ টাকা কমে আমাদের তেল দিয়েছেন। তাই বাজারে ২০ টাকা বেশি দামে তেল দেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।
এদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ানোর অজুহাতে তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। এর আগে ১৩ অক্টোবর ব্যবসায়ীরা হুট করেই সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৬ টাকা, পাম অয়েলের দাম ১৩, খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ৩ এবং পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম ২৩ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেটাও ছিলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া। সেই সময় উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন জানিয়েছিলেন, যতোক্ষণ পর্যন্ত এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃত না হবে ততোক্ষণ ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রেস রিলিজ দেওয়ার কোনো বৈধতা নেই।
সেদিনই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা। তবে বৈঠকে ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট হারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টিতে মৌখিকভাবে সায় দেন বাণিজ্য সচিব। কিন্তু বৈঠক শেষে যখন সচিব বাণিজ্য উপদেষ্টার অনুমোদনের জন্য যান, তখন বাধে বিপত্তি। বাণিজ্য উপদেষ্টা দাম বৃদ্ধির বিষয়টিতে অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানান। বাণিজ্য উপদেষ্টা অনুমোদন দেননি, এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তড়িঘড়ি করেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গণমাধ্যমকে জানান। পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা কড়া প্রতিক্রিয়া জানালে ব্যবসায়ীরা ঘোষিত দামের ভোজ্যতেল বাজারজাত করেননি। এর আগেও ব্যবসায়ীরা একাধিকবার তেলের দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন।
বিভি/এআই




মন্তব্য করুন: