• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

শেয়ার ধারণে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে ভিন্ন ওষুধের কথা ভাবছে বিএসইসি

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

প্রকাশিত: ১২:০৫, ২০ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ১৮:০০, ২০ জানুয়ারি ২০২২

ফন্ট সাইজ
শেয়ার ধারণে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে ভিন্ন ওষুধের কথা ভাবছে বিএসইসি

বারবার সময় চেয়েও শর্ত পূরণ না করায় শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের `ছলচাতুরী রোগ` নিরাময়ে ভিন্ন ওষুধ দেওয়া হবে। পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে যারা ব্যর্থ তাদের বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া কথা জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-এর ৫ জানুয়ারি কমিশনের বেধে দেওয়া সময় শেষ হলেও এখনো ২৪টি কোম্পানি ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারেনি। নির্ধারিত সময়ে বিএসইসি’র নির্দেশনা পরিপালন করেছে মাত্র একটি কোম্পানি।

ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাডভেন্ট ফার্মা শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা পরিপালন করলেও বাকি ২৪টি কোম্পানির মধ্যে ১১টি কোম্পানির এই নির্দেশনা পরিপালনে আগ্রহ জানিয়েছে। সময় চেয়ে আবেদন জানিয়েছে সাতটি, বুধবার (১৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত সময়ে বাকি ছয়টি কোম্পানির কেউ নির্দেশনা পরিপালন না করার কারণ বা সময় চেয়ে কমিশনের কাছে কোনো আবেদনও করেনি।

সময় চেয়ে আবেদন করা কোম্পানিগুলো হলো- অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস, অগ্নি সিস্টেমস, আলহাজ্জ টেক্সটাইল মিলস, অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, আজিজ পাইপস, ডেল্টা স্পিনার্স, ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ফু-ওয়াং ফুডস, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, ফার্মা এইডস ও সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ।

শেয়ার ধারণের পরিকল্পনার কথা জানানো কোম্পানিগুলো হলো- ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফাইন ফুডস, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, কাট্টালি টেক্সটাইল ও সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, রতনপুর স্টিল রি-লোরিং মিলস (আরএসআরএম) কোম্পানি এবং অলিম্পিক এক্সেসরিজ কোম্পানি।

কোনো কিছু না জানানো কোম্পানিগুলো হলো- সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলস, ফ্যামিলিটেক্স বিডি, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং।

সময় আবেদনকারী অলিম্পিক এক্সেসরিজ কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বাংলাভিশন ডিজিটালকে জানান, আগে আমাদের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ২০ শতাংশ শেয়ার ছিলো। সেটা থেকে আমরা উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার ২৫.৮১ শতাংশ বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। এবিষয়ে আমরা কমিশনের সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছি।

রতনপুর স্টিল রি-লোরিং মিলস (আরএসআরএম) কোম্পানি সেক্রেটারি মঈন উদ্দিন জানান, ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে আমরা কমিশনে আবেদন করেছি।

দুর্নীতিতে ডুবতে থাকা ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি সেক্রেটারি মো. জাহিদ মাহমুদ বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, আমরা এখনো চূড়ান্ত করেনি। আমাদের পরিচালকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। কোম্পানিটিতে উদ্যোক্ত পরিচালকদের শেয়ার রয়েছে মাত্র ১৩.২০ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৭৭.১০ শতাংশ এবং প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ৯.৭০ শতাংশ। ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ১৯৯৭ -এর মার্চে কর্পোরেট কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। ২০০১-এর সেপ্টেম্বরে নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স পায়। প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধন ১২৩ কোটি টাকা। ২০০৮-এর জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ার বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা করে। ১৯ জানুয়ারি বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর কমেছে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

যেসব কোম্পানি এখনো ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ তাদের বিষয়ে কমিশন কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে জানতে চাইলে বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, অধিকাংশ কোম্পানির মধ্যে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে আগ্রহ ও চেষ্টা আছে। তবে কোম্পানিগুলো বেশি দামে শেয়ার কিনতে পারছেন না। এমন যারা আছে তাদের বিষয়ে কমিশন গভীরভাবে চিন্তা করছে। কিন্তু যেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা আছে তাদের বিষয়ে কমিশন কি একই সিদ্ধান্ত নেবে। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সবার বিষয় কমিশন এক ওষুধ প্রয়োগ করবে না। 

২০১১-এর ২২ ডিসেম্বর পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালককে ন্যূনতম ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা দেয় তৎকালীন বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন-এর নেতৃত্বাধীন কমিশন। সংস্থাটির আইনের ‘২সিসি’ ধারায় এই নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি কোম্পানি হাইকোর্টে রিট আবেদন করে।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে আদালত বিএসইসি’র পক্ষে রায় দেন। এরপর ২০২০-এর ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএসইসির বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে এই ২৫টি কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালক সম্মিলিতভাবে পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিগুলোকে সময় দেয় কমিশন।

বিভি/রিসি 

মন্তব্য করুন: