• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

উসমানিয়া গ্লাসের ধারাবাহিক লোকসানে বিএসইসির উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:১৪, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ফন্ট সাইজ
উসমানিয়া গ্লাসের ধারাবাহিক লোকসানে বিএসইসির উদ্বেগ

উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড-এর লোগো

ধারাবাহিক লোকসানে থাকা উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়েছে কমিশন। 

কোম্পানিটির পণ্য উৎপাদন ব্যয় বিক্রয়কৃত পণ্যের চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করছে বিএসইসি। যে জন্য মুনাফার মুখও দেখছে না।

বিএসইসির চিঠিতে কোম্পানির আর্থিক অবস্থার নানা সূচকও উঠে এসেছে। তাতে কোম্পানির চরম আর্থিক দুরবস্থার চিত্র উঠে এসেছে। সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির মোট লোকসানের পরিমাণ ৫৯ কোটি ৬৩ লাখ ৩২ হাজার ৩০০ টাকা।

জানা গেছে, কোম্পানিটির দুটি ফার্নেসের (এটা এমন যন্ত্র যা তাপ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় বা এটা এমন চুল্লি, যার তাপ দিয়ে কাঁচের কাচামাল গলিয়ে ফেলা হয়) মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২ কোটি ১ লাখ বর্গফুট।

২০১৮ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে কোম্পানিটির ফার্নেস-১। অন্যদিকে ২০২০ সালের ২৩ জুন এক ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় ফার্নেস-২। তাতে কোম্পানিকে আরও বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছে। প্রতিদিনের খরচ মেটাতে কোম্পানিটি বিশাল তারল্য সংকটে পড়ে। তারল্য সংকট থেকে রক্ষা পেতে কোম্পানির সকল স্থায়ী আমানত ভেঙ্গে ফেলে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিব বিপুল কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, ফার্নেস-২ থেকে আবার উৎপাদন শুরু হয়েছে। বিক্রিও বেশ ভালো। কোম্পানি কেন লোকসানে রয়েছে তাও জানিয়েছেন তিনি। 

গণমাধ্যমে বিপুল কুমার মজুমদার বলেন, যে দামে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে তার চেয়ে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। ফলে মুনাফার মুখ দেখছেনা কোম্পানি।
তার মতে, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া এই লোকসান কাটানো সম্ভব নয়।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ৬০ বছর পুরনো প্রযুক্তি দিয়ে চলছে কোম্পানি।

২০২০-২১ সালের হিসাব মতে, কোম্পানির চলতি অনুপাত দশমিক ৯৯:১। অর্থাৎ কোম্পানির ৯৯ টাকার চলতি সম্পদের বিপরীতে চলতি দেনা ১০০ টাকা। একটি ভালো কোম্পানির ক্ষেত্রে চলতি দায়ের দ্বিগুণ থাকা উচিত চলতি সম্পত্তি। তারল্য অনুপাত দেখানো হয়েছে দশমিক ৫১: ১। অর্থাৎ ৫১ টাকা সম্পদের বিপরীতে রয়েছে ১০০ টাকার ঋণ। এতে কোম্পানির তারল্য সংকট প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। কোম্পানির ঋণ ও ইক্যুইটি অনুপাত দশমিক ৫৮:১। অর্থাৎ কোম্পানির মালিকানা স্বত্ত্ব যদি ৫৮ টাকা হয় তবে এর বিপরীতে দেনা রয়েছে ১০০ টাকা।

আর্থিক প্রতিবেদন মতে, কোম্পানির মজুদ আবর্তন ১.৫৩ বার মাত্র। মজুদ আর্বতন বলতে বুঝায়, কোম্পানির পণ্য কতবার বছরে শেষ হয়ে নতুন পণ্য আসছে। একটি আদর্শ কোম্পানির ক্ষেত্রে এই আবর্তন ৬ বার হয়ে থাকে। উসমানিয়া গ্লাসের পণ্য মাত্র ১.৫৩ বার হাতবদল হয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানির পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি কম।

রিটার্ন অন ইক্যুইটিও দেখানো হয়েছে ঋণাত্মক ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। রিটার্ন অন ইক্যুইটি বলতে বোঝায়, মালিকের বিনিয়োগকৃত অর্থ মুনাফা হিসেবে কতটা ফেরত আসছে। এই কোম্পানির ক্ষেত্রে ১০০ টাকা ইক্যুইটি বা মূলধনের বিপরীতে লোকসান হয়েছে ৭.৫৫ টাকা। যা কোম্পানির আয়ের দুর্বল অবস্থা প্রকাশ করে।

আর্থিক অবস্থা এতোটা দুর্বল হওয়া স্বত্তেও ২০২০-২০২১ সালে সম্পত্তি, প্লান্ট এবং যন্ত্রপাতি সংযোজন করেছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৬৯ টাকা।
সিকিউরিটিজ আন্ড একচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ধারা ১১ (২) অনুযায়ী চিঠিটির ইস্যুর ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানির অবস্থান পরিস্কার করতে বলা হয় উল্লেখিত বিষয়ে। বিবিধ খাতের কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৭ সালে। পরিশোধিত মূলধন ছিলো ১৭ কোটি টাকা।

বর্তমানে কোম্পানিটির পরিচালকদের হাতে রয়েছে মাত্র ২ শতাংশ শেয়ার। সরকারের কাছে রয়েছে ৫১ শতাংশ শেয়ার। ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৩১ দশমিক ৬৯ শতাংশ শেয়ার। এই কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কোনো শেয়ার নেই।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড-এর শেয়ারের দাম কমেছে। দিনের শুরুতে ৬২ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন শুরু হলেও ক্লোজিং হয়েছে ৬২ টাকা ৪০ পয়সায়। কোম্পানিটি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিভি/এইচএস
 

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: