শেয়ারের দাম নিয়ন্ত্রণে নতুন করে সার্কিট ব্রেকার আরোপ
পুঁজিবাজারের অব্যাহত দরপতন ঠেকাতে নতুন করে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন নিয়ম অনুযায়ী শেয়ার দর সর্বোচ্চ বাড়তে পারবে ১০ শতাংশ কমতে পারবে ২ শতাংশ। বুধবার (৯ মার্চ) থেকে নতুন এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
বিএসইসির কমিশনার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগের মতো দীর্ঘমেয়াদি হবে না। পরিস্থিতির উন্নতি হলে ২ শতাংশের সীমা তুলে নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, স্ট্যাবলাইজেশন ফান্ড থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য আইসিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইসিবি ইতোমধ্যে এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর যে ২০০ কোটি টাকা করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের কথা রয়েছে, বর্তমানে তা বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে উৎসাহ দিচ্ছে। সেজন্য তিনি বিএসইসির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে ধন্যবাদ জানান। যে সব ব্যাংক এখনও ফান্ড গঠন করেনি। তাদের ফান্ড গঠন করার জন্যও বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধাবস্থা ও বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের একটি জাহাজ পরিত্যক্ত ঘোষণাকে অনেকে বড় করে প্রচার করছেন বলে জানান বিএসইসির এই কমিশনার। গুজব ছড়াচ্ছে এমন ৩৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কারও গুজবে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, সেই গুজবের সত্যতা ও প্রভাব কতটুকু, তা যাচাই করার জন্য বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে লেনদেনের গতি বাড়াতে ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কমিশন টি+১ সেটেলমেন্ট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে চালুর আগে বাজারে টি+১ সেটেলমেন্টের প্রকৃত অর্থে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা, তা যাচাই করা হবে।
তিনি বলেন, পু্ঁজিবাজারে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ভূমিকাটা যেমন হওয়া দরকার ছিলো, তা কোম্পানিটির বর্তমান ম্যানেজমেন্ট উপলব্ধি করছেন। আশা করি, এই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি আগামীতে পুঁজিবাজারে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারবে।
পু্ঁজিবাজারের উন্নয়নে মার্কেট মেকার গুরুত্বপূর্ণ আছে উল্লেখ্য করে শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে মার্কেট মেকারের আইন আছে। কিন্তু মার্কেট মেকার নেই। যদি দেশে বড় বড় মার্কেট মেকার থাকতো, তাহলে বর্তমানের এই পরিস্থিতি কাটানো যেতে। এটি পুঁজিবাজারের জন্য খুবই কার্যকর। যা বিশ্বের সবদেশেই আছে।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামে। পতন ঠেকাতে ওই বছরের ১৯ মার্চ খায়রুল হোসেন কমিশন প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিয়ে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়।
ফ্লোর প্রাইস আরোপের আগে ১৮ মার্চ দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স নেমেছিল ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্টে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে নির্ধারিত সীমার নিচে শেয়ারের দাম না নামায় ২৫ মার্চ ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার পয়েন্টে। এক বছরেরও বেশি সময় পর শিবলী রুবাইয়াত কমিশন প্রথম দফায় গত বছরের ৭ এপ্রিল ৬৬টি কোম্পানি থেকে ফ্লোর প্রাইসের (পতনের সর্বনিম্ন সীমা) নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেয়।
এরপর গত ৩ জুন আরও ৩০ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনা তুলে দেওয়া হয়। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হলেও ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম একদিনে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারবে বলে নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়। আর দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা একই রকম ১০ শতাংশ রাখা হয়। পরবর্তীতে বাজার চাঙ্গাভাবে ফিরলে সেই ব্যবস্থাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিলো।
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: