• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বহাল চায় বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ১৩ জুন ২০২২

আপডেট: ২৩:৪২, ১৩ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বহাল চায় বিজিএমইএ

পোশাক শিল্প যখন মহামারি করোনার অভিঘাত থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ঠিক তখন প্রস্তাবিত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে পোশাক রফতানির উপর উৎসে কর ১ শতাংশ করার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এ শিল্পের জন্য অত্যন্ত দুরুহ হবে। এ এক্ষেত্রে আরো পাঁচ বছর উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ রাখার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমই) সভাপতি ফারুক হাসান। 

সোমবার (১৩ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট এবং সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র সভাপতি এ দাবি জানান।

ফারুক হাসান বলেন, পোশাক শিল্প যখন মহামারি করোনার অভিঘাত থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ঠিক তখন প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাক রফতানির উপর উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এ শিল্পের জন্য অত্যন্ত দুরুহ হবে। বর্তমানে অস্থিরতাময় বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি পোশাক শিল্পের জন্যও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তাই আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই উৎসে কর বৃদ্ধির প্রস্তাব পোশাক শিল্পের টিকে থাকার সংগ্রামটি আরও কঠিন করে তুলবে। আমরা আরো পাঁচ বছর উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ রাখার আহ্বান জানাই।    

তিনি আরও বলেন, গত ৭ জুন বিশ্ব ব্যাংক তাঁদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে পূর্বাভাষ দিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব এবং স্থবির চাহিদার কারণে অর্থনৈতিক মন্দা তীব্র  হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, পোশাক রফতানিতে বর্তমানে যেই প্রবৃদ্ধিটি দেখা যাচ্ছে, সেটি আগামীতে চলমান থাকার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, যেখানে ২০২১ সালে বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৩ শতাংশ, সেটি ২০২২ সালে ৪ শতাংশে এ নেমে আসবে। সেই সঙ্গে শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহ, কন্টেইনার ভাড়া বৃদ্ধি, ডিজেলে মূল্য বৃদ্ধিসহ সামগ্রিক উৎপাদন খরচ বিগত ৫ বছরে গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সম্প্রতি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিজিএমই সভাপতি বলেন, সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ডলার শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। ডলারের বিপরীতে ইউরো যেভাবে মান হারাচ্ছে, তাতে করে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইউরো ও ডলারের মূল্য সমান পর্যায়ে চলে আসতে পারে, অর্থাৎ ১ ইউরো দিয়ে ১ ডলার পাওয়া যাবে। ফলে ইউরোপের বাজারে আমাদের পণ্যের মূল্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়াটা অস্বাভাবিক নয়। বিগত প্রায় দুই বছরে করোনার কারণে যেখানে আমাদের তেমন কোন কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের রেমিট্যান্সে মন্দাভাব ও আমদানী ঊর্ধ্বগতির কারণে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে চাপ তৈরি হয়েছে। 

এছাড়াও ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দার যে পূর্বাভাস আমরা পাচ্ছি, সেটি মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এ পরিস্থিতিতে সর্ববৃহৎ বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনকারী খাত, পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রা যেকোনভাবেই হোক মসৃন রাখা জরুরি। তাই আমরা মনে করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে পোশাক শিল্পে উৎসে কর বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে, সে অবস্থায় রাখার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী সুবিবেচনায় রাখবেন। রফতানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখলে শিল্পটি বর্তমান সংকটকালীন সময়ে স্বস্তিতে থাকবে।
 
বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, শিল্প টিকে থাকলে রাজস্ব আসবে, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আমাদের পোশাক রফতানি ছিল ২৭.৯৫ বিলিয়ন ডলার, ৮৩.৪৫ টাকা এক্সচেঞ্জ রেট হিসেবে টাকার অংকে রফতানি আয় হয়েছিল দুই লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে উৎসে এক হাজার ১৬৬ কোটি টাকা উৎসে কর প্রদান করা হয়। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রফতানি ছিল ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার, ৮৩ দশমিক ৯৫ টাকা এক্সচেঞ্জ রেট হিসেবে টাকার অংকে রফতানি আয় হয়েছিল দুই লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ  হারে উৎসে এক হাজার ৩২০ কোটি টাকা উৎসে কর প্রদান করা হয়। আর চলতি অর্থবছর ২০২১-২০২২ শেষে রফতানি ৪১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করছি, ৮৭ টাকা এক্সচেঞ্জ রেট হিসেবে টাকার অংকে রফতানি আয় হবে তিন লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে উৎসে ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা উৎসে কর প্রদান করা হবে। আর সামনের অর্থবছর ২০২২-২০২৩ এ আমরা যদি ৪৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি করতে পারি তবে ৯২ টাকা এক্সচেঞ্জ রেট হিসেবে টাকার অংকে রফতানি হবে চার লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে উৎসে দুই হাজার ৭০ কোটি টাকা উৎসে কর প্রদান করা হবে। অর্থাৎ আমরা যদি প্রতিযোগী সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রফতানি বাড়াতে পারি, তাহলে কর হার না বাড়িয়েও রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হবে। এতে করে সামষ্টিক অর্থনীতি উপকৃত হবে।
 
সেই সঙ্গে আমরা নন-কটন খাতে বিনিয়োগ ও রফতানি উৎসাহিত করতে, নন-কটন পোশাক রফতানির উপর ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি। আমাদের মোট পোশাক রফতানির প্রায় ৭৪ শতাংশ কটনের তৈরি, যেখানে বিশ্বের মোট টেক্সটাইল কনজাম্পশনে কটনের শেয়ার মাত্র ২৫ শতাংশ। বর্তমান বিশ্বে ভোক্তাদের ক্রমাগত জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে নন-কটন পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। 

২০১৭ সালে ম্যান মেড টেক্সটাইল ট্রেড এর পরিমান ছিল প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ, অথচ আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের দখলে ছিল ১০ শতাংশ শেয়ার। বিগত দশকে আমাদের দেশে নন-কটন, বিশেষত ম্যান-মেড-ফাইবার খাতে কিছু বিনিয়োগ হলেও এসকল বিনিয়োগ মূলত মূলধন এবং টেকনোলজি নির্ভর। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোতে এই শিল্পের কাঁচামাল থাকায় এবং তাদের স্কেল ইকনোমির কারণে তারা প্রতিযোগী সক্ষমতায় অনেক এগিয়ে আছে। তাই নন-কটন বস্ত্রখাতে বিনিয়োগ সুরক্ষিত ও উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ নীতি সহায়াতা একান্ত অপরিহার্য। 

আমরা বাজেট সম্পর্কিত আরেকটি দাবি করেছিলাম সেটি হল নগদ সহায়তার উপর প্রযোজ্য ১০ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার। যেহেতু নগদ সহায়তা কোন ব্যবসায়িক আয় নয়, তাই নগদ সহায়তার অর্থকে করের আওতার বাইরে রাখাই যুক্তিসঙ্গত। 

পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরির অন্যতম উপাদান সোলার প্যানেল আমদানিতে শুল্কহার শূন্য থেকে বাড়িয়ে এক শতাংশ করা হয়েছে। শিল্পে পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সূচিত হয়েছে, তার ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে আমাদের অনুরোধ, সোলার প্যানেল আমদানিতে শুল্কহার শূন্য করা হোক।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বিজিএমই’র সভাপতি বলেন, বাজেট কেবলমাত্র প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার বরাবরই সকল পক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবর্তন এনে তা চূড়ান্ত করে থাকে। অতীতেও যখনই বাজেট প্রস্তাবনায় কোন নীতি সহায়তা অন্তর্ভূক্ত করা জন্য বিজিএমইএ সরকারকে অনুরোধ করেছে, প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনায় সরকার তা অন্তর্ভূক্ত করেছে। আমরা আশাবাদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য এবারও সদয় হবেন। 

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: