• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ড্রেজিং না হলে আবারও অচল হয়ে পড়ার আশংকায় মোংলা বন্দর

জসিম উদ্দিন, মোংলা

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ২৮ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ১৮:১৭, ২৮ আগস্ট ২০২২

ফন্ট সাইজ
ড্রেজিং না হলে আবারও অচল হয়ে পড়ার আশংকায় মোংলা বন্দর

নানাবিধ উদ্যোগের ফলে মোংলা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্যতা বেড়েছে। ঠিক তখনই মোংলা বন্দরের এ উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের আকাশে ষড়যন্ত্রের মেঘ জমেছে। একটি মহল বন্দরের এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থমকে দিতে চলমান ইনারবার ড্রেজিং পকল্প বাঁধাগ্রস্থ করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। এ ড্রেজিং প্রকল্প বাঁধাগ্রস্থ হলে মোংলা বন্দরে আবারো অচলাবস্থ সৃষ্টি হওয়ার আশংকা  বন্দর সংশ্লিষ্টদের।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক সুরক্ষিত (সুন্দরবন বেষ্টিত) সমুদ্র বন্দর মোংলা। দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ এদেশের সার্বিক উন্নয়নে এ বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম হওয়াতেই অপার সম্ভাবনার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে মোংলা। কিন্তু অতীত ইতিহাসে দেখা যায় ২০০২-০৩ইং অর্থ বছর থেকে ২০০৬-০৭ইং অর্থ বছর পর্যন্ত্ম এটি লোকসানী বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিলো। ওই সময় এ বন্দরকে মৃতপ্রায় অর্থাৎ ডেডহর্স বলেও ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোংলা বন্দরের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেন। সেই সকল প্রকল্প বাস্ত্মবায়নে ও বাস্ত্মবায়নাধীন অবস্থাতেই মোংলা বন্দর লোকসানী বন্দরের নাম মুছে আজ একটি অর্থনৈতিকভাবে সুদৃঢ় বন্দর হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছে। 

বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ১৩১ কিলোমিটার উজানে পশুর নদীর পূব তীরে মোংলা বন্দর অবস্থিত। বঙ্গোপসাগর হতে বন্দর চ্যানেলের প্রবেশ মুখ যা আউটাবার নাম হিসেবে পরিচিত। বন্দরের প্রবেশ মুখ থেকে চ্যানেলের হাড়বাড়ীয়া পর্যন্ত্ম হলো আউটারবার। সম্প্রতি এই আউটাবার ড্রেজিং করায় মোংলা বন্দরের হাড়বাড়ীয় পর্যন্ত্ম সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ অনায়াসে ভিড়তে পারছে। আর হাড়বাড়ীয় থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত্ম ২৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার নৌপথে গভীরতা ৫/৬ মিটার। ইনারবারে সাড়ে ৮ মিটার গভীরতার ড্রেজিং সম্পন্ন হলে বন্দর জেটিতে সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। পশুর চ্যানেলের ইনারবার ড্রেজিং সম্পন্ন হলে মোংলা বন্দরকে চট্টগ্রাম বন্দরের সমান সক্ষমতার বন্দরে পরিণত হবে। 

ড্রেজিং প্রকল্প বাঁধাগ্রস্থ হলে মোংলা বন্দরে আবারো অচলাবস্থ সৃষ্টি হওয়ার আশংকা  বন্দর সংশ্লিষ্টদের।

ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্প'র প্রকল্প পরিচালক ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক্স বিভাগ) শেখ শওকত আলী জানান, ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পটি হাতে নেয়ার আগে ২০১৮ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযু্ি‌ক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। এতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও জমির মালিকদের সাথে আলোচনা করে ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জন্য জমি নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত জমিতে ড্রেজিংয়ের পলি মাটি ফেললে তাতে ফসলের জন্য উপকারী হবে। এছাড়া ওই নিচু জমিতে জোয়ারের সময় পস্নাবিত হয়ে স্থানীয় জনসাধারণের ক্ষতি হয়ে আসছে। তাই ড্রেজিংয়ের মাটি ফেললে স্থানীয় জনবসতি প্লাবিত হবেনা এবং নদী ভাঙ্গনের আশংকা মুক্ত হবে এবং জমির মানও বাড়বে। কিন্তু ওই জমিতে ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলায় বাঁধার সৃষ্টি করে আন্দোলনের নামে একটি কুচক্রী মহল সরকারের উন্নয়নকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

শেখ শওকত আলী আরও বলেন, একটি কুচক্রী মহল জমি মালিকদেরকে ভুল বুঝিয়ে নানা আন্দোলন সৃষ্টি করে সেখানে মাটি ফেলায় বাঁধার সৃষ্টি করছেন। যারা এ সব করাচ্ছেন তাদের সেখানে কোন জমিও নেই। পশুর চ্যানেলের এ ড্রেজিংয়ের কাজ বন্ধ হলে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বাঁধাগ্রস্থ হবে। এ কারণে এ প্রকল্প চলমান রাখা জরম্নরী। এ ড্রেজিং কাজ বন্ধ হলে মোংলা বন্দর তথা দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জাতীয় ও আর্ন্ত্মজাতিকভাবে গুরম্নত্ববহ এ প্রকল্পটি বাস্ত্মবায়ন করা সম্ভব হবেনা। এছাড়া রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানী কয়লা আমদানীতেও এ ড্রেজিং খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। 
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মুসা বলেন, মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ইনারবারে চলমান ড্রেজিং প্রকল্প বাঁধাগ্রস্থ হলে জাতীয় অর্থনীতিতে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিস্বার্থভাবে ও দুরদর্শিতার সাথে বন্দর পরিচালনা করে আসছে। চলমান এ প্রকল্প বাস্ত্মবায়নে স্থানীয় প্রশসান, জনপ্রতিনিধি ও বন্দর সংশিস্নষ্ট সকলের সহযোগীতার দরকার। 

বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক সুরক্ষিত (সুন্দরবন বেষ্টিত) সমুদ্র বন্দর মোংলা

বন্দর চেয়ারম্যান আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মোংলা বন্দর দিয়ে প্রথম গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানী শুরম্ন হয়েছে। দেশের আমদানীকৃত রিকন্ডিশন গাড়ীর বেশির ভাগই মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানী হচ্ছে। এছাড়া রম্নপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর মালামাল আসছে। এদিকে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান জ্বালানী কয়লাও আসতে শুরম্ন করেছে। সুতরাং ড্রেজিং বাঁধাগ্রস্থ হলে শুধু মোংলা বন্দরই নয় দেশের এ সকল মেগা প্রকল্পের উন্নয়ন ব্যাহত হওয়া
আবারও অচল হয়ে পড়ার আশংকা মোংলা বন্দরের।

মোংলা বন্দর বার্থ এন্ড শিপ অপারেটর এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের আব্দুলস্নাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, মোংলা বন্দর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি অন্যতম চাবিকাঠী। ইনারবার ড্রেজিং কার্যক্রম যদি কেউ ব্যাহত করে কিংবা করতে চায় তা বন্দরের জন্য ভীষণ ক্ষতির কারণ হবে। এতে আমদানী-রপ্তানী ও অর্থনীর উপর প্রভাব পড়বে। তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতু করা হয়েছে মোংলা বন্দরের গতিশীলতা বাড়ানোর জন্য। যার সুবিধা আমরা বর্তমানে ভোগ করছি। কিন্তু ড্রেজিং বাঁধাগ্রস্থ হলে সেটি হবে আমাদের জন্য একটি খারাপ সংবাদ। একটি দুষ্টু চক্র এটি করছে, কিন্তু কোনভাবেই চলমান উন্নয়ন ব্যাহত করতে দেয়া যাবেনা। কেউ বন্দরকে ক্ষতি করতে চাইলে আমরা সেটি মেনে নিবোনা, আমাদের ব্যবসা ও দেশের স্বার্থে আমরা বন্দরের সাথে এক হয়ে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবো। 

মন্তব্য করুন: