• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

দাম নিয়ন্ত্রণে নেই তদারকি

শ্রমিকদের মজুরি বাড়ার অজুহাতে চায়ের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৯:৩৪, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
শ্রমিকদের মজুরি বাড়ার অজুহাতে চায়ের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে চায়ের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। আগে যেখানে প্রতি কাপ চায়ের দাম ছিল ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮/১০ টাকা। এখন ক্ষেত্র বিশেষে লাল চা ও গুড়ো দুধের চা বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। সম্প্রতি দেশজুড়ে চা শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে সরকার শ্রমিকদের মজুরি ৫০টাকা বৃদ্ধি করে। এতে নতুন করে চায়ের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। যদিও বিষয়টি নিয়ে চা বোর্ডের কিছুই করার নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন চায়ের উৎপাদন বাড়লেও অভ্যান্তরীণ চাহিদা মেটাতে গিয়ে কমেছে রফতানি।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বাংলাভিশনকে জানান, খোলাবাজারে চা পাতার দাম বৃদ্ধি করা অযৌক্তিক। এতে  সাধারণ ভোক্তাদের উপর চাপ বাড়তে পারে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের বেশ কিছু সংস্থা কাজ করছে। আশা করছি জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে চায়ের দাম।

শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির পর বাজারে চা পাতার দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বাংলাভিশনকে বলেন, ‘চা বোর্ড সাধারণত অকশনে চায়ের দাম নির্ধারণ করে দেয়। যে কোনো দ্রব্যের দাম  বাড়ে-কমে সাধারণত চাহিদা ও যোগানের ওপর ভিত্তি করে। চায়ের ক্ষেত্রেও তাই। সম্প্রতি ২০ দিন দেশের বিভিন্ন বাগানে শ্রমিকদের মজুরির দাবিতে আন্দোলনের ফলে চা উৎপাদন ব্যবহত হয়েছে। যে কারণে বাজারে চা পাতার চাহিদা যতখানি রয়েছে সে তুলনায় যোগান না থাকায় দামের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।

সাধারণত দেশে কারখানা থেকে চা উৎপাদন হওয়ার পর চা দুইভাবে বিক্রি হয়। একটি অকশনে আরকটি খোলা বাজারে। এর দাম নির্ধারণ করে দেয় চা বোর্ড। তবে এর বাইরেও খোলা বাজারে বিপুল পরিমাণ চা পাতা বিক্রি হয়। যার নির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। বিভিন্ন মহলে অভিযোগ মালিকপক্ষ অকশনে খারাপ চা পাঠিয়ে থাকে আর খোলা বাজারে যায় ভালো চা। এছাড়া বেশ কিছু কোম্পানি তাদের প্যাকেট জাত চা বাজারে ছেড়েছে। যেগুলোর দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ)। ইস্পাহানি, এইচআরসি, সীলন, ফিনলে, ন্যাশনাল টিসসহ প্রায় শতাধিক কোম্পানি বাজারে প্যাকেট জাত চা বিক্রি করে আসছে। ১ কেজি, ৫০০ গ্রাম থেকে ৪০ গ্রাম পর্যন্ত চায়ের প্যাকেট খেলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। কোম্পানি ভেদে এগুলোর একেকটার একেক দাম লক্ষ্য করা গেছে। ইস্পানি ৫০০ গ্রামের একটি প্যাকের দাম ১৭৮ টাকা। একই ওজনের সিলন ৫০০ গ্রামের দাম ১৮৮ টাকা। তার চেয়ে কম ওজনের তাজা ৪০০ গ্রাম চা পাতার প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।  

জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাইয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার অস্থায়ী নিলাম কেন্দ্র বছরের পঞ্চম চা নিলামে প্রায় ৪ কোটি ১২ লাখ টাকার চা বিক্রি হয়েছে। নিলামে শ্রীমঙ্গলের ৫টি ব্রোকার্সসহ শতাধিক বায়ার অংশ নেন। পাঁচটি ব্রোকার্সের মাধ্যমে চা নিলামে ৩২টি বাগানের মোট ২ লাখ ৫ হাজার ৯৭৩ কেজি চা তোলা হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে চা বিক্রি হয় হবিগঞ্জের বৃন্দাবন চা বাগানের, ২৪০ টাকা প্রতি কেজি দরে। দেশের চায়ের চাহিদার প্রায় ৫৫ ভাগই পূরণ করে থাকে মৌলভীবাজার জেলার বাগানগুলো। এ ছাড়া সিলেট অঞ্চলের বাইরে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা থেকে আসে উৎপাদিত চায়ের দশ ভাগ।

আশঙ্কাজনক হারে কমেছে চা রফতানি
চা বোর্ডের তথ্য মতে, চলতি ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত দেশে চা উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৮৩ লাখ কেজি। আগের বছর উৎপাদন হয়েছিল ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি। যদিও ২০২০ সালে উৎপাদন হয়েছে ৮ কোটি ৬৩ লাখ কেজি চা।

চা রফতানি করে ২০২০ সালে ৩৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এরপর  ২০২১ সালে ১৮ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং চলতি ২০২২ সালে জুলাই পর্যন্ত আয় হয়েছে ১১ কোটি ৩ লাখ টাকা।  চা রফতানি করে ২০০১ আয় হয়েছিল ৮৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং ২০০৫ সালের ৭৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ চায়ের উৎপাদন বাড়লেও এই খাত থেকে ধারাবাহিক ভাবে কমেছে রফতানি আয়।  

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে চায়ের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ার কারণে অভ্যান্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে রফতানির যোগ্য চা খুব একটা থাকে না। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদেশে রফতানি বাড়াতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশে জনপ্রিয় জাতের চা উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।

সম্প্রতি চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম বলেন, চা শিল্প জিডিপিতে ১ শতাংশ অবদান রাখছে। এটাকে অন্য শিল্পের সঙ্গে মিলানোর সুযোগ নেই। শ্রমিকরা নগদ দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি পান। পাশাপাশি তারা ২ টাকা দরে ৪২ কেজি চাল বা আটা পান। এছাড়া বিভিন্ন ছুটি, উৎসব, ভাতা, বিনামূল্যে আজীবন গৃহায়ণ, চিকিৎসা, চাষের জমি, পশুপালন চারণ ভূমি, পেনশনসহ অনেক কিছু পান। সেগুলো হিসাব করলে একজন চা শ্রমিক দৈনিক গড়ে ৪০০ টাকার কাছাকাছি বা তারও বেশি কেউ কেউ মজুরি পেয়ে থাকেন। বিগত কয়েক দশকে যেখানে চায়ে উৎপাদন ২৩.৯ মিলিয়ন কেজি থেকে ২০২১ সালে ৯৬.৫ মিলিয়ন কেজির বেশি হয়। তারপরও অভ্যান্তরীণ বাজারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন সামান্য পরিমাণ চা রফতানি হয়। ১৬৮ বছরের পুরানো এই শিল্পের বার্ষিক মূল্যমান গত বছর ৩৫০০ কোটি টাকা। আমদানি প্রতিস্থাপক শিল্প হিসাবে কাজ করছে। পৃথিবীতে চা উৎপাদনে ৩ শতাংশ অবদান রাখছে বাংলাদেশ।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: