• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সুখবর ছাড়াই দেশে আসছে ২৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ৮ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১৯:৪৫, ৮ মার্চ ২০২৩

ফন্ট সাইজ
সুখবর ছাড়াই দেশে আসছে ২৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র রোজার মাস। রোজায় স্বাস্থ্যকর ইফতারে  শরবত, ফিন্ন এবং ফলে জুসের সঙ্গে ব্যবহার হয় চিনি। তাই রোজা এলেই চাহিদা বাড়ে চিনির। এবছর সম্ভাব্য ২৩ মে প্রথম রোজার (চাঁদ দেখা গেলে) মাস শুরু। দেশে চিনির চাহিদা মেটাতে ইতোমধ্যে পৃথক দু’টি দরপত্রের মাধ্যমে ২৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন টেড্রিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন এবং আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বাকি ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি সংগ্রহ করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ২০১ কোটি ২৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। তবে এসব চিনি আসার পরও বাজারে কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।  

সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদেন জন্য অন্যান্য প্রস্তাবের সঙ্গে এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে।

চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)  প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামানো হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে তিন হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনিতে ছয় হাজার টাকা আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। এই সুবিধা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। জানা গেছে, হ্রাসকৃত শুল্কে চিনি এলে কেজিতে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা পর্যন্ত দাম কমতে পারে।

ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, দেশে বছরে চিনির চাহিদা থাকে ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসেই চাহিদা থাকে তিন লাখ টনের।

দেশের প্রধান চিনি আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে- সিটি, মেঘনা, এস আলম, ইগলু ও দেশবন্ধু গ্রুপ। আমদানিকারকরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে চিনি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হলেও এর প্রভাব এখনই বাজারে পড়ছে না। আগে যে চিনি আমদানি করা হয়েছে, সেগুলো এখনও বিক্রি শেষ হয়নি। শুল্ক ছাড়ে এখন এলসি খুলে চিনি আমদানি করলে সেগুলো বাজারে আসতে আরও দুই মাস লাগতে পারে। তারপর খুচরা বাজারে দাম কমতে পারে। তবে যেহেতু চিনি অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে সেকারণে বন্দরে এসে পৌঁছালে খাসাল করতে সময় কম লাগবে। 

ভোক্তাঅধিকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার যে ছাড় দিয়েছে এতে আমদানিকারকরা সুবিধা নিবে। তবে সাধারণ ভোক্তাদের এজন্য খুশি হওয়ার কিছু নাই। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেই দামি বাজারে তেল, চিনি কোনোটিই পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত হয়তো বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।  

সূত্র জানায়, টিসিবি’র ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় ১,৩৮,০০০ মেট্রিক টন চিনি ক্রয়ের লক্ষমাত্রা রয়েছে। এই চাহিদার অংশ হিসেবে ২৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২০২১ সালের ২৩ জুন অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে অনুমোদনের তারিখ থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত নিত্যপয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, মসলা-শুকনা মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনিয়া, জিরা, হলুদ, তেজপাতা, সয়াবিন তেল, পাম ওয়েল, চিনি, লবন, আলু, খেজুর ইত্যাদি আমদানি বা স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যে পিপিএ, ২০০৬ এর ৬৮(১) ধারা অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রমজানকে সামনে রেখে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ২৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা অনুসরণ করে স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে টিসিবি’র মোট চাহিদার অংশ হিসেবে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে, টিসিবি থেকে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি সরাসরি ক্রয়ের জন্য স্থানীয় ১টি প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল করপোরেশনের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি দরপ্রস্তাব দাখিল করে। টিইসি থেকে দরপ্রস্তাবটি রেসপনসিভ হয়। 

দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি থেকে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে প্রতি কেজি চিনির মূল্য ১০৬ টাকা হিসাবে এই ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি সংগ্রহ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

এছাড়া, আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আরও ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি ক্রয় করা হবে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে টিসিবি’র মোট চাহিদার অংশ হিসেবে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি আন্তর্জাতিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে ক্রয়ের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে গোল্ডেন উইংস জেনারেল ট্রেডিং, ইউএই (স্থানীয় এজেন্ট, সানজাইব লিমিটেডের কাছে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে দরপ্রস্তাব জমা দেয়। প্রস্তাবটি পরীক্ষা শেষে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি থেকে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতি মেট্রিক টন ৫২০ মার্কিন ডলার  (দেশীয় মুদ্রায় প্রতি কেজি চিনির মূল্য ৮৮.৮৪৮ টাকা) হিসাবে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি ক্রয়ে ব্যয় হবে ৬৮ কোটি ৭৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

ক্যাবের সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, ‘বাজারে কিছু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর জন্য চিনির দাম নির্ধারণ করে দিলেও ভোক্তা সে দামে চিনি পাচ্ছেন না। এছাড়া মিল মালিকরা ডিলার পর্যায়ে পর্যাপ্ত চিনি সরবরাহ করছেন না। দাম বাড়ানোর সময় হলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন।’

তিনি বলেন, 'যারা (বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন) চিনির দাম নির্ধারণ করে তারাই আবার চিনির দাম বাড়াতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। যাতে সরকার আবারও চিনির দাম বাড়িয়ে দেয়। দাম বৃদ্ধির দায় অবশ্যই এসব মুনাফালোভীদের নিতে হবে।'

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: