দেশের অর্থনীতি কঠিন সমস্যার মুখে: সিপিডি

বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ কঠিন কিছু সমস্যার মুখোমুখি বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সমস্যাগুলোকে দুভাগে বিভক্ত করে সিপিডি বলছে একটি হচ্ছে বাহ্যিক, আরেকটি হচ্ছে অন্তর্নিহিত বা ভেতরের। এ সংকট মোকাবিলায় সামনে বেশকিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
শনিবার (২৭ মে) সিপিডির ধানমণ্ডি কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২২-২৩ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক আলোচনায় সিপিডি এই তথ্য জানিয়েছে।
পর্যালোচনা তুলে ধরে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাহ্যিক যে কারণগুলো আমরা দেখি, ২০২০ সালে কোভিড মহামারির প্রতিঘাত। তা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মুখোমুখি হই। ফলে আমদানি পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। আমদানির মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি এবং তাছাড়া আমাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে একটা ব্যাঘাত ঘটেছিল। আমাদের অর্থনীতিতে বর্তমানে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
তিনি অভ্যন্তরীণ সমস্যা চিহ্নিত করে বলেন, অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত দুর্বলতা, অর্থনীতিতে পূর্ণাঙ্গ নীতি না থাকা, সঠিক নীতিমালার অভাব এবং যে নীতিগুলো নেওয়া হয়, সেগুলো বাস্তবায়নেরও দুর্বলতা। এছাড়াও সুশাসনের ঘাটতি এবং আমরা যে সমস্ত সংস্কারের কথা বলছি, সেই সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যর্থতার কারণেও আমরা অনেক সমস্যাগুলো এখন দেখছি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়াটা বাড়ছে সরকারের।
সরকারের যে বাজেট ঘাটতি, সে ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার ব্যাপকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে এবং তাছাড়া যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে, সেখানে আমরা দেখছি যে তারল্যের একটা নিম্নগতি এবং প্রাইসের কথা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতির কথা, লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি এবং সেটিও আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের বহিঃখাতের যে ভারসাম্য, সেটার ক্ষেত্রে একটা অধঃগতি, নিম্নগতি, এই ভারসাম্যের ক্ষেত্রে এবং তার পাশাপাশি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে একটা নিম্নগতি দেখা যাচ্ছে। বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের ইতিহাসে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ উল্লেখ করে এজন্য সঠিক নীতিমালা তৈরি করে বাস্তবমুখী বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ সংস্থাটির। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের নামে বাড়তি দাম জনগণের ওপর না চাপাতে পরামর্শ সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের। প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের শর্তারোপের মাধ্যমে এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
দেশে নিত্যপণ্যসহ প্রায় সবধরনের খাদ্য পণ্যের বাড়তি মূল্যের যাতাকলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। মূল্যস্ফীতির যাতাকলে নাভী:শ্বাস নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের। বাড়ি ভাড়া, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদা মেটাতেই হিমশিম অবস্থা তাদের। এসবের মাঝে খাবারের খরচ কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন নাগরিকরা। গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলছে, ২০১৬ সালে একটি পরিবার আয়ের ৪৩ শতাংশ খরচ করতো খাবারের ব্যয় মেটাতে। তবে ২০২২ সালে অন্যান্য খরচ বাড়ায় খাবারে ব্যয় করতে পারছে মোট আয়ের ৪০ শতাংশেরও কম। সংস্থাটি বলছে, দুর্বল বাজার ব্যাবস্থা এবং আর্থিক ও মুদ্রানীতির সমন্বয় না থাকায় সামাল দেয়া যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতি।
চলতি বছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৭৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে উল্লেখ করে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের অনিয়ন্ত্রিত ঋণ নেয়া এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তারল্যসংকট।
নির্দিষ্ট একটি দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ দেশে রেমিট্যান্স হিসেবে আসা যেমন শঙ্কার বিষয়, তেমনি দেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শর্তও লজ্জাজনক বলে মনে করে সংস্থাটি।
অর্থনীতির এই দুর্দশা যতটা না বহির্বিশ্বের কারণে, তার চেয়ে বেশি দেশীয় নীতির দুর্বলতার কারনে বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি।
বিভি/রিসি
মন্তব্য করুন: