ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে জাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়ালচিত্র মুছে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি অংকন করায় ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ও বহিষ্কারের প্রতিবাদে 'নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর' এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বর থেকে শুরু হয়ে চৌরঙ্গী, মেডিকেল সেন্টার হয়ে শহীদ মিনার চত্ত্বরে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘বহিষ্কার মামলার হুলিয়া, নিতে হবে তুলিয়া’, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে আমরাই থাকবো, নুরুল আলম থাকবে না’, ‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ, মামলাবাজ ভিসি’, ‘এই লড়াই বাঁচার লড়াই, এই লড়াইয়ে জিততে হবে’, ‘অ্যাকশন অ্যকশন, মামলাবাজ ভিসির বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘চিকা মারার স্বাধীনতা দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
জহির রায়হান চলচ্চিত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষ তাসনিম নওশীন বাশার মোহনা বলেন, ‘আমাদের কাছে এই তদন্ত কমিটি একটি ভিত্তিহীন কমিটি। ভিসির সাথে মিটিংয়ে আমরা জানতে চাই ছাত্র শৃঙ্খলা বিধির কোন অধ্যাদেশ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাদের বারবার জিজ্ঞাসা করার পরও তারা বলতে পারছিলেন না কোন ধারায় এই বহিষ্কার আদেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং এটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার ভিসি তার বিশেষ ক্ষমতাবলে এই বহিষ্কারাদেশ দিয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘একটা গ্রাফিতি মুছে ফেললেই কি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মুছে দেয়া সম্ভব! সম্ভব না। বঙ্গবন্ধুর অবমাননা আমরা করিনি। কিন্তু অবমাননা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অবমাননা হয়েছে একের পর এক নিপীড়ন বিরোধী গ্রাফিতি বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে ঢেকে ফেলার মধ্য দিয়ে হয়েছে। শিক্ষকরা বারবার বলেন আমরা তাদের সন্তানের মত কিন্তু তাদের প্রকৃত সন্তান হচ্ছে ধর্ষক চাঁদাবাজি করা ছাত্ররা যাদের ওনারা ডাবের পানি খাইয়ে অনশন ভাঙান। তাদের বিরুদ্ধে কখনো মামলা না হলেও মামলা হয় আমার কমরেড অমর্ত্য রায় ও কমরেড ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে। প্রশাসন ভাবছে তারা এভাবে আমাদের চাপে ফেলে বিল্ডিং করবে আর পকেটে টাকা ঢুকাবে! আমরা তা হতে দিবো না। আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের মাস্টারপ্ল্যানের আন্দোলন ছাড়বো না।’
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরণ এহসান বলেন, ‘গ্রাফিতি অঙ্কনের প্রেক্ষিতে দুইজন ছাত্র নেতাকে যেভাবে মামলার স্বীকার হইতে হয়েছে। এ নিয়ে কেবল এটাই বলবো এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করার প্রয়াস। আমরা তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ও বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সহ-সভাপতি আশফার রহমান নবীন বলেন,‘ক্যাম্পাসের রাজনীতির যে পরিস্থিতি সেটা এখন জলের মত পরিষ্কার। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অন্যায় অবিচার হচ্ছে তার প্রতিবাদের যে সংস্কৃতি তার গলা টিপে ধরার পাঁয়তারা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের মত একটা ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে কিন্তু এটা প্রশাসন চায় না। তাই তারা ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি অঙ্কনের দায়ে রাতারাতি আমাদের দুইজন কমরেডকে বহিষ্কার করে দিল, মামলা করে দিলো। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১,৪২,৪৩ ব্যাচের অছাত্ররা, যারা মাদকের সিন্ডিকেট চালায় তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন মামলা করে না। মামলা করে যার নামে কোনো চাঁদাবাজির অভিযোগে নেই, নিপীড়নের অভিযোগ নেই তাদের বিরুদ্ধে। অশুভ শক্তির এই পাঁয়তারা আমরা রুখে দেবো।’
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে ধর্ষণ ও স্বৈরাচার বিরোধী গ্রাফিতি আঁকার ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অমর্ত্য রায় এবং সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিভি/রিসি
মন্তব্য করুন: