• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের

মো. ওবায়দুল্লাহ, ঢাকা কলেজ

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ২৭ মে ২০২৫

আপডেট: ১৯:৪৭, ২৭ মে ২০২৫

ফন্ট সাইজ
দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের

দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪১ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে অনন্য অবদান রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির। ভারত-পাকিস্তান বিভক্তি থেকে শুরু করে ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৬২'র শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন,৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান,৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ ২৪শের ছাত্র- জনতার গণ অভ্যুত্থানে ঢাকা কলেজের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু সেই গৌরবগাথা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে নেই ছাত্রসংসদ নির্বাচন। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানাবিধ উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৯৩–৯৪ সালে। এখন শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে ছাত্রসংসদ নির্বাচন। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর একক আধিপত্য ধরে রাখতেই ছাত্রসংসদ নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছাত্রসংসদের কার্যক্রম বন্ধ রেখে তারা সিট বানিজ্য, গেস্টরুম এবং গণরুমের কালচার চালু করেছিল। এমনকি তারা কলেজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে হস্তক্ষেপ করতো। আওয়ামী লীগের সময়ে দেখা গিয়েছে, কেউ ভিন্নমত পোষণ করলেই তার ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হতো। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জোর করে দলীয় প্রোগ্রামে যেতে বাধ্য করা হতো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দলীয় কার্যালয়ের মতো ব্যবহার করতো তারা। যদি ছাত্রসংসদের কার্যক্রম চালু থাকতো তাহলে তারা এই ধরনের অপকর্ম করতে পারতো না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের সাবেক ভিপি হারুন বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন না করা একটা জাতির জন্য অভিশাপ। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলে দেশে নেতৃত্বের সংকট দেখা দিবে। এখন ব্যবসায়ীরা পলিটিক্সে আসার কারণে পলিটিক্স কলুসিত হয়ে যাচ্ছে। তাই আজ রাজনীতি মানেই লুটপাট ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত। শুধুমাত্র এমন রাজনীতিবিদদের কারণে এই অবস্থা। পলিটিক্যাল যে কালচার সেটা সম্পূর্ণ ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। আগামী দিনে যদি ছাত্র সংসদ বন্ধ থাকে তাহলে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হবে। রাজনীতিবিদ তৈরি করার একমাত্র প্লাটফর্ম হচ্ছে ছাত্রসংসদ নির্বাচন। কারণ একটা ছেলের যতটুকু জ্ঞান না থাকে, যখন সে সকলের ভোটে ভিপি বা জিএস নির্বাচিত হয় তখন তার মধ্যে পলিটিক্যাল এক্টিভিটিস গ্লো করে। সে পলিটিক্যাল বিহ্যাবিয়ার আনোনয়নের চেষ্টা করে। কিভাবে একটি সমাজ বা জাতিকে  নেতৃত্ব দিতে হয় সেটা সে বুঝতে পারে। 
 
শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র সংসদের গুরুত্ব প্রসঙ্গে হারুন বলেন, অবশ্যই ছাত্র সংসদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ার পরে নির্বাচিত ভিপি বা জিএস সবার লিডার। তারা যে দলেরই হোক। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে একজন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

No description available.

ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ার বিষয়ে তিনি আরও বলেন,  আওয়ামী লীগ কনফিউজ ছিল নির্বাচন দিলে যদি ছাত্রদল পাশ করে। যখন তারা নিশ্চিত হয়েছে যে নির্বাচনে পাস করতে পারবো না, তাই নির্বাচন বন্ধ করে দেয়। পরে কী কারণে নির্বাচন হলো না সেটা বলতে পারছি না। গভর্মেন্ট যদি ক্লিয়ারেন্স না দেয় তাহলে কলেজ প্রশাসন সেটা করতে পারবে না।  নির্বাচনের জন্য একটি আন্দোলনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আমরা ৯০ এ নির্বাচন করার জন্য বিশাল আন্দোলন করি এমনকি মন্ত্রণালয় ঘেরাও করি। বিএনপির সময়ে নির্বাচন কেন যে হলো না বলতে পারছি না। হয়তো ছাত্রদের পক্ষ থেকে তখন আন্দোলন না হওয়ার কারণে  নির্বাচন হয়নি। আমরা আন্দোলন করে ৯১তে নির্বাচন করেছিলাম।

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক পিয়াল হাসান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে মুভমেন্ট করতে পারিনি। এখন যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, মানবিক ক্যাম্পাসে ছাত্রসংসদ নির্বাচন জরুরী। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হোক সেটাই চাই। কিন্তু রাষ্ট্রের যে বর্তমান পরিস্থিতি , আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ কোথাও না কোথাও মিছিল করছে। আবার প্রশাসনের মধ্যেও বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের আইডেন্টিফাই করে যদি বিচারকার্যের কাছাকাছি আনা যায় তাহলে নির্বাচন করতে সহজ হবে। তা না হলে নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। আমরা কোন বিশৃঙ্খলা চাই না। তাই তাদের বিচারকার্য শুরু হওয়ার পর একটা সুষ্ঠ নির্বাচনের দিকে আগালে ভালো হবে। 

ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আব্দুর রহমান আফনান বলেন, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের একটি প্রাণের দাবি। সে জায়গা থেকে আমরাও ছাত্রসংসদ নির্বাচন চাই। গত ৩১ বছর নির্বাচন না থাকায় এটার গঠনতন্ত্র ও অন্যান্য সংস্কার প্রয়োজন। যত দ্রুত সময়ের মধ্যে কলেজ প্রশাসন এটার আয়োজন করতে পারে। তবে সংগঠনগুলোর সাথে বসে করলে বেশি ভালো হবে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আমরা একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলাম সেখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন কে উল্লেখ করেছি। আমরা চিন্তা করেছি আনুষ্ঠানিকভাবে আবার দাবি জানাবো। তবে এই মুহূর্তে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য যে ক্ষেত্র তৈরি করা দরকার তা আমরা মনে করি এখনো হয়নি। কারণ দীর্ঘদিন নির্বাচন না থাকায় গঠনতন্ত্র ও অন্যান্য সংস্কার সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জ্ঞাত নয়। তাই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হতে পারে।

ঢাকা কলেজ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি নোমান আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকা কলেজে লেখাপড়া করতে আসে। তারা তাদের ন্যায্য অধিকার পায় না।  ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের দাবি পূরণ করতে পারে না । তাই ঢাকা কলেজে খুবই জরুরি ভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দরকার। এতে করে তারা অভিভাবক পাবে  এবং তাদের দাবি দাওয়া আদায় করতে সহজ হবে।   

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা কলেজ শাখার আহ্বায়ক আফজাল হোসেন রাকিব বলেন, বিগত দিনে ছাত্র সংসদ সক্রিয় না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন গুলো বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। সিট বানিজ্য থেকে শুরু করে গেস্টরুম কালচার, ক্যাম্পাসের উন্নয়নমূলক কাজে হস্তক্ষেপসহ নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। এসব কিছু হয়েছে মূলত একটি নির্বাচিত ছাত্রসংসদ না থাকায়। ছাত্রসংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ ছাত্রদের পালস বুঝে কাজ করতে পারবে, ছাত্রবান্ধব ক্যাম্পাস বিনির্মানে অবদান রাখবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সচেতন রাজনীতিবিদ তৈরি হবে।যারা পরবর্তীতে দেশকে নেতৃত্ব দিবে। তাই আমরা অনতিবিলম্বে ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজন করার দাবী জানাই। 

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি রাহাত বলেন, ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক জায়গা হলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন। প্রশাসনের নীতিগুলো ছাত্রবান্ধব হয় না। তার কারন প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্রদের কোনো যোগসূত্র নেই। ছাত্ররা ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি ঠিক করবে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হয়। অন্যদিকে প্রশাসনের নীতিগুলো ছাত্রবান্ধব হয়। ফলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আমরা চাই। 

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবিষয়ে নীতিনির্ধাণ করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে প্র্যাকটিস নাই, তাই সবার সাথে বসে আলাপ আলোচনা করে তারপর একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। সেটার জন্য আমরা ঈদের পরে বসতে পারি। জনমত ছাড়া কিছু করা যাবে না । বিগত সময়ে সরকার চায়নি তাই ৩১ বছরে নির্বাচন হয়নি। আবার ছাত্রদের আগ্ৰহের একটা বিষয় ছিল। এখন যেমন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন নির্বাচন চাচ্ছে, তখন হয়তো এরকম ভাবনা ছিল কি না। তাই নির্বাচন হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রসংসদ নির্বাচন বাবদ ছাত্রদের কাছে থেকে যে টাকা নেওয়া হয় আমি যতটুকু জানি এটা কলেজ প্রশাসনের কাছে থাকে। এটার আলাদা কোন তত্বাবধায়ক নেই, প্রিন্সিপালের কাছেই থাকে। এটা অচল হয়নি অবশ্যই সচল আছে। এই ফান্ডের খরচ করতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। এই টাকা ছাত্রদের অনুমতি ছাড়াও এক টাকা খরচ করা যাবে না।

গঠনতন্ত্র সংস্কারের বিষয়ে অধ্যাপক ইলিয়াস বলেন, গঠনতন্ত্র সংস্কারের চাওয়াটা ছাত্রদের। ছাত্ররা চাইলে অবশ্যই সংস্কার করা হবে। যদি তারা সংস্কারের প্রয়োজন মনে না করে তাহলে সংস্কার করা হবে না। আমরা সবার সাথে বসে এবিষয়ে কথা বলবো।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2