• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

জুলাই আন্দোলনে বুটেক্সের সাংবাদিকরা পড়েছিলেন ছাত্রলীগের রোষানলে

রাতুল সাহা, বুটেক্স

প্রকাশিত: ২০:১৪, ৭ আগস্ট ২০২৫

ফন্ট সাইজ
জুলাই আন্দোলনে বুটেক্সের সাংবাদিকরা পড়েছিলেন ছাত্রলীগের রোষানলে

ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের অধিকার তুলে ধরা নিয়ে সর্বদা সোচ্চার থাকা বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ক্যাম্পাস সাংবাদিকের সংগঠন বুটেক্স সাংবাদিক সমিতি জুলাই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বুটেক্স সাংবাদিক সমিতি শুরু থেকেই জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তবে আন্দোলনের ধরন ও দায়িত্বের ভিন্নতা অনুযায়ী সংগঠনটি সরাসরি মাঠে না নামলেও সংবাদ সংগ্রহ, তথ্য যাচাই এবং তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

এসময় শুধু সংবাদ করাই নয়, আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বুটেক্সাসাসের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছে। পুলিশি তৎপরতা, বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদের ওপর সম্ভাব্য হামলার তথ্য আন্দোলনকারীদের সরবরাহ করতো বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বুটেক্স ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধেও তাঁরা কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মাহবুব আলম রিয়াজ বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পুরো সময়ে ক্যাম্পাসের চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী এবং বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির সভাপতি হিসেবে কাজের চাপ অনেক ছিল। সাংবাদিকতার পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের সহবস্থানে থেকে আন্দোলনে বিভিন্ন মাত্রা যুক্ত করতে করেছি। শুরুতে বুটেক্স শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনে অংশ নিলে তা কেন প্রচার করা হচ্ছে তা নিয়ে ছাত্রলীগ কর্তৃক চাপ ছিল। প্রতিদিনের আন্দোলনের সংবাদ যেন গণমাধ্যমে প্রচার করা না হয় সে বিষয়ে বলা হত। আন্দোলনে প্রচার ও সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের অংশগ্রহণের জন্য সদস্যদের হেনস্তা করে বিভিন্ন ট্যাগ দেওয়া হতো।

তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগ কর্তৃক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার পর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমে ছাত্রলীগ মারমুখী পরিকল্পনা করে, আমরা তা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবগত করতাম। ফলে ছাত্রলীগের পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়েছিল। সংগঠনের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে সংবাদের কাজে আন্দোলনের সময় সংবাদের জন্য কাজে লাগানোতে বেগ পেতে হত। এক সময় ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীশূন্য হলেও সাংবাদিকদের ক্যাম্পাসে আসা লাগত সংবাদ সংগ্রহে। আন্দোলনে যাওয়া শিক্ষার্থীদের নাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে দেওয়ার বিষয়ে তথ্য বের করে এনেছিলাম আমরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষক মিলনায়তন গ্রুপ কিংবা বাইরের বিভিন্ন গ্রুপে বুটেক্স সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রচারের কাজ করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উজ্জীবিত রাখতে সংগঠনের সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে গেছে।

বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, যেদিন প্রথম বুটেক্সে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের দমাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ অবস্থান নেয়। তারা যেকোনোভাবে আন্দোলনকারীদের মাঠে নামা প্রতিহত করতে চাচ্ছিল। ঠিক সেই সময় আমরা ১০-১২জন ক্যাম্পাস সাংবাদিক ক্যামেরা ও মোবাইল হাতে ক্যাম্পাসে অবস্থান করি। আমাদের উপস্থিতিতে পুলিশ কোনো আক্রমণ চালায়নি। যেদিন বুটেক্স আহসানউল্লাহ এবং সাউথইস্টের শিক্ষার্থীরা একত্রে তেজগাঁও নাবিস্কো মোড়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে সেসময়ে বুটেক্স ও পলিটেকনিক ছাত্রলীগের গতিবিধি, হামলার আশঙ্কা ইত্যাদি তথ্য দিয়ে আন্দোলনকারীদের নিরাপদ থাকতে সহায়তা করেছিলাম। ইন্টারনেট শাট ডাউন করে যখন হল বন্ধ করে দেওয়া হয়, সে সময় সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা নিজ নিজ বাড়ি থেকে আন্দোলনে যুক্ত থেকে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান করেছে। আমরা আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতাম। বুটেক্সের কে কোথায় আন্দোলন করছেন, তারা কোথাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন কি না তা জানতাম এবং সেগুলো শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা  আমাদের মাধ্যমেই জানতে পারতেন। আমাদের সংগঠন হয়তো মিছিলে স্লোগান দেয়নি, কিন্তু স্লোগানের পেছনে তথ্য, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ নিশ্চিত করতে আমরা নিরলস কাজ করেছি।

বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. রাবী সিদ্দিকী বলেন, ১৬ জুলাই তিব্বত-নাবিস্কো মোড়ে বুটেক্স, আহসানউল্লাহ ও সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির সম্মিলিত কর্মসূচির রিপোর্টিংয়ের জন্য প্রথমে ক্যাম্পাসে যাই। কিন্তু ক্যাম্পাসে ঢুকতেই ছাত্রলীগের সদস্যের জেরা, হেনস্তা ও অপমান-অপদস্থের মুখে পড়ি। 'শিবির কর্মী' বলে ট্যাগিং করা হয়, পরিবার নিয়ে কুমন্তব্য করা হয়, এমনকি মোবাইল ফোন পর্যন্ত তল্লাশি করা হয়। “আজ সাংবাদিকের কোনো কাজ নেই”—এই বলে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয় আমাকে। তবুও আমি ফিরে যাইনি। শত বাধা অতিক্রম করে সেদিন বুটেক্সসাসের অন্য সদস্যদের সঙ্গে পুরো কর্মসূচি কাভার করি, প্রতিবেদন লিখি। পরদিনও আন্দোলনে আবার উপস্থিত হই। আন্দোলনের একটা পর্যায়ে সাংবাদিক ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, হামলা ও দমন-পীড়নের সময় ছাত্রলীগ কাউকে আলাদা করেনি। আমার সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা হচ্ছিল হলের শিক্ষার্থীদের জন্য। সেদিন রাতে তারা হলে গেলে কী ঘটতে পারে, তা সহজেই অনুমেয় ছিল। তবে যেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়—সেটা হলো আমার সহপাঠীদের চোখে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের যে আগুন দেখেছি, তা আজও আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। নিরাপত্তা ঝুঁকি সত্ত্বেও তারা যেভাবে দাঁড়িয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, তা ছিল এক অমোঘ মূল্যবোধের প্রকাশ।

বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল জাবের রাফি বলেন, প্রথমদিকে বুটেক্সে আন্দোলন সংগঠিত করা কঠিন ছিল। কারণ হলগুলোতে ছাত্রলীগের প্রভাব ছিল স্পষ্ট। তখন হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা ঢাকার বিভিন্ন স্পটে একক বা যৌথভাবে আন্দোলনে অংশ নিতো। তাদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য আমরা একটি গ্রুপ খুলি, যেখানে প্রতিদিনের আপডেট আদান-প্রদান হতো। একদিন আন্দোলনের প্রস্তুতির সময় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অবস্থানের ছবি পাঠায় আমাদের ক্যাম্পাস সাংবাদিক আলভী। আমি সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে সতর্ক করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছবিটি ছাত্রলীগের হাতে পৌঁছে যায়। পরে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আমাদের সদস্য জুবায়ের ভাইকে ক্যাম্পাসে ঘিরে ধরে ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতাকর্মী। তাকে রীতিমতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, মোবাইল তল্লাশি করা হয়, ছবি তোলার কারণ ও আন্দোলনকারীদের সতর্ক করার বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করা হয়। একসময় তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পুরো ঘটনায় তার প্রতি যে ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল, তা ছিল অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও স্পষ্ট বার্তা বহনকারী এই ঘটনার পর নিশ্চিত হই যে গ্রুপে তথ্য পাচার হচ্ছিল। তাই আমরা নতুন গ্রুপ তৈরি করি এবং আরও নিরাপদ উপায়ে আন্দোলনের সমন্বয় করি। সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা তখন মূলত দুইভাবে কাজ করে—একদল সরাসরি আন্দোলনকারীদের পাশে ছিল, আরেকদল ছাত্রলীগের কাছ থেকে কৌশলে তথ্য সংগ্রহ করে আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণে সহায়তা করেছে। ভয়ভীতি ও হুমকি উপেক্ষা করেই আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।

উল্লেখ্য, আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য বুটেক্সসাসের দুইজন সদস্যের নাম ডিবির কাছে পাঠিয়েছিল তৎকালীন বুটেক্স ছাত্রলীগ।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2