ব্রাকসু ভোট: ৬ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন, শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
								
													আসন্ন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নির্বাচন উপলক্ষে ছয় সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১শ' ১৬তম সিন্ডিকেট সভা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইলিয়াছ প্রামানিক।
ব্রাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পেয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ফেরদৌস রহমান। এ ছাড়া কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা হলেন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদ রানা, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাসান আলী, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিফাত রুমানা, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজামান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার সরকার।
এর আগে, একইদিন সকাল সাড়ে ১০টায় এক সংবাদ সম্মেলনে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা করে আগামী এক মাসের মধ্যে ব্রাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সে সময়, তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মহল গঠনতন্ত্রের কিছু অংশ সংশোধনীর দাবি তুলে আদতে নির্বাচন পেছানো বা বানচালের পাঁয়তারা করছে। এসবের বিপরীতে অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং তফশিল ঘোষণা করে ব্রাকসু প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড শুরুর আহ্বান জানান তাঁরা।
প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন হয়নি ৭৫ একরের আয়তনবিশিষ্ট বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের পর নতুন প্রশাসন এলে, শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামেন।
কয়েক দফার অবস্থান এবং অনশন কর্মসূচি শেষে গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু স্বাক্ষরিত একটি গেজেটের মাধ্যমে ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৯’-এ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ব্রাকসু) ধারা সংযুক্তির নির্দেশনা আসে।
তবে ব্রাকসুর গঠনতন্ত্রে হল সংসদে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়ার নিয়ম রাখা, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসন না রাখাসহ বেশ কিছু ইস্যুকে সামনে এনে গঠনতন্ত্রটি সংশোধনের দাবি জানান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বেরোবি শাখার কতিপয় নেতাকর্মী এবং বাম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ নিয়ে সোমবার তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে ব্রাকসু গঠনতন্ত্র সংশোধনের পর নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানালে ক্ষুব্ধ হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পরে সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দ্রুততম সময়ে ব্রাকসু নির্বাচন আয়োজনের দাবি করে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬তম সিন্ডিকেট সভা শেষে নির্বাচন কমিশন গঠনের তথ্য সামনে আসে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মো. আশিকুর রহমান বলেন, এই সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক। আমরা আশা করছি নভেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের সকল কার্যক্রম শুরু হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিল নির্বাচন কমিশনে দলীয় কাউকে রাখা হবে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি তেমনই একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনের সকল কিছু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অপর দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের নেতা  ইয়ামিন সংশোধনের দাবি অগ্রাহ্য করে নির্বাচন কমিশন গঠন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে মাত্র ১৩টি পদ নিয়ে ছাত্র সংসদ চলতে পারে না। বেগম রোকেয়ার নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে একজন নারী এজিএসের পদও রাখা হয়নি। গোঁজামিল দিয়ে তড়িঘড়ি করে এই নির্বাচন কমিশন গঠন করা গ্রহণযোগ্যতা হারাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইলিয়াছ প্রামানিক জানান, বিদ্যমান গঠনতন্ত্র মোতাবেক সত্বর ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে মার্কেটিং বিভাগের ফেরদৌস রহমান স্যারকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। পাশাপাশি, ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্রে কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা সংশোধনীর প্রয়োজন হলে তা নির্বাচনের পর করতে সিন্ডিকেট নির্দেশ দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলী বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই ব্রাকসু (বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, "অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেরোবির পরিবেশ এক নয়। আমরা সবার মতামত ও পরামর্শ নিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
উপাচার্য আরও বলেন, "সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সবার মতামত যাচাই-বাছাই করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ব্রাকসুর গঠনতন্ত্রে যে ঘাটতিগুলো রয়েছে আজ আমরা সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এসব ঘাটতি দূর করা সম্ভব হবে।"
বিভি/এজেড
						


							
							
 
										
							
							
							
							
							
							
							
							
							
							
											
											
											
											
মন্তব্য করুন: