• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলই নেই অথচ নিয়োগের নামে লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেন প্রধান শিক্ষক

শহিদুল ইসলাম স্বপ্ন, বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ৫ মার্চ ২০২২

ফন্ট সাইজ
স্কুলই নেই অথচ নিয়োগের নামে লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেন প্রধান শিক্ষক

অভিযুক্ত মো. মহসিন মোল্লা ও তাঁর বাড়ি

বরগুনার আমতলীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়ার প্রলোভনে একাধিক চাকরি প্রত্যাশীর কাছ থেকে লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম মো. মহসিন মোল্লা। তিনি উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৪৫নং হলদিয়া হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষক মহসিন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় চাকরি দেয়ার কথা বলে শতাধিক শিক্ষিত নারী পুরুষের কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তার মধ্যে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের কোন অস্তিত্ব নেই।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওই শিক্ষক উপজেলার উত্তর পশ্চিম চিলা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে ওই টাকা নিয়েছেন। বিষয়টি সমাধানে দুর্নীতি দমন কমিশন ও প্রশাসনের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। 

ভূক্তভোগীরা জানান, শিক্ষক মহসিন মোল্লা দীর্ঘদিন ধরে এলাকার যুবক যুবতীদের বেকারত্বের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু বেকার, শিক্ষিত নারী ও পুরুষদেরকে টার্গেট করে বিভিন্ন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমনকি শিক্ষক মহসিন মোল্লা বিভিন্ন বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার অনুমোদন করিয়ে দেওয়ার কথা বলেও ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাদের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

চাওড়া পাতাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক অতুল চন্দ্র শীল জানান, গত চার বছর আগে তার মেয়ে রিনাকে উত্তর পশ্চিম চিলা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে শিক্ষক মহসিন মোল্লা তার কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে একটি ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, মহসিন মোল্লা আমার ছাত্র ছিলো। ওকে আমি খুব ভালো জানতাম। আমার মেয়ের বেকারত্বের সুযোগে অন্তত আমার সাথে এরকম কাজ করাটা মহসিনের ঠিক হয়নি। আমার অবাক লাগে মহসিন যেখানে আমার মেয়েকে চাকরি দেওয়ার কথা বলছে বাস্তবে ওখানে ওই নামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নেই। আমি এরকম জঘন্য ঘটনার সঠিক বিচার এবং আমার দেওয়া টাকা ফেরত চাই। 

মকবুল আকন নামের অপর ভুক্তভোগী জানান, তার মেয়েকে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে মহসিন মোল্লা ২০১৫ সালে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো চাকরি দিতে পারেনি। টাকা ফেরত চাইলে মহসিন মোল্লা উল্টো আরও ২ লাখ টাকা দাবি করেন। অন্যথায় অন্য একজনকে নিয়োগ দিয়ে মকবুল আকনের দেয়া ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিবে বলে মহসিন মোল্লা তাকে জানিয়ে দেয়।
 
অপর আরেক ভুক্তভোগী সেরাজ হাওলাদার বলেন, গত ৪ বছর পূর্বে আমার ছেলে জহিরুলের চাকরির জন্য শিক্ষক মহসিন মোল্লা আমার কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছে। আজ পর্যন্ত আমার ছেলের চাকুরির কোন খবর নেই। 

ভুক্তভোগী সোহরাব হাওলাদার জানান, গত ৩ বছর পূর্বে তিনি জমি বন্ধক রেখে মাদ্রাসায় চাকরির জন্য শিক্ষক মহসিন মোল্লাকে ৮৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু টাকা ফেরত পাননি ও চাকুরিটাও অদ্যবদি হয়নি। 

এ বিষয়ে আরও এক ভুক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোতালেব মাস্টার জানিয়েছেন, গত ৩ থেকে ৪ বছর পূর্বে আমার মেয়েকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে শিক্ষক মহসিন মোল্লা আমার কাছ থেকে নগদ ২ লক্ষ টাকা নিয়েছে। এখন পর্যন্ত চাকরির কোন খবর নাই, টাকা চাইলে বিভিন্ন রকমের তালবাহানা করে।

শিক্ষক মহসিন মোল্লার অনিয়মের বিষয়ে মো. নূহু মোল্লা বলেন, ২০১৩ সালে মহসিন মোল্লা আমাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৌখিক চুক্তি করে নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে মধ্য পশ্চিম চিলা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু সেখানে এই নামে কোন প্রতিষ্ঠান না থাকায় আমরা ওই সময় সব শিক্ষক মিলে ১ লাখ টাকা খরচ করে একটি টিনসেট স্কুল ঘর নির্মাণ করে ওই বিদ্যালয়ের আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে থাকি। হঠাৎ একদিন মহসিন মোল্লা আমার কাছে আরও ২ লাখ টাকা দাবি করে। আমি মহসিন মোল্লা দাবিকৃত ওই টাকা দিতে অস্বীকার করলে অন্য এক লোকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আমাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে উত্তর পশ্চিম চিলা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ভূয়া কাগজ ধরিয়ে দেয়। আমি মহসিন মোল্লার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। মহসিন মোল্লা শতাধিক বেকার নারী পুরুষদের সাথে প্রতারণা করে তাদের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে।

অপরদিকে উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব সেকান্দরখালী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল হক মাস্টারের কাছ থেকেও প্রতারক মহসিন মোল্লা স্কুল অনুমোদনের কথা বলে ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে তার নিজের স্বাক্ষরিত একটি ভূয়া অনুমোদনের কাগজ দিয়েছেন। 

এভাবেই অসংখ্য শিক্ষিত বেকার নারী-পুরুষ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও দাতাদের কাছ থেকে ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমতলী পৌরশহরের ৩নং ওয়ার্ডের বটতলা এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের বিশাল একটি বহুলতল আলিশান ভবন (বাড়ী) নির্মাণ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তোভোগীরা। 

 এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মহসিন মোল্লা বলেন, আমার বিরুদ্ধে যতগুলো অভিযোগ আনা হয়েছে তা আদৌ সঠিক নয়। পারিবারিক ও সামাজিক কারণে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ওই অভিযোগগুলো আনা হয়েছে। 

আপনার হাতেখড়ি দেওয়া শিক্ষকও তো আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। মোটা অংকের টাকা নিয়ে তার মেয়েকে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে চাকুরী দেননি এবং অদ্যবদি তার দেওয়া টাকা ফেরতও দেননি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে মোবাইল সংযোগটি কেটে দেন। 

এ বিষয় আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক মৌখিক অভিযোগ শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ বলেন, এ বিষয়ে কোন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিভি/এসএইচ/কেএস

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2