• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

কালিগঞ্জে কোচিং না করায় এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন, হাসপাতালে ভর্তি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১৩:০১, ১৪ মে ২০২২

আপডেট: ১৭:৫৩, ১৪ মে ২০২২

ফন্ট সাইজ
কালিগঞ্জে কোচিং না করায় এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন, হাসপাতালে ভর্তি

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে কোচিং না করায় ল্যাব বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সোলাইমানকে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় সোলাইমানের শরীরের বিভিন্ন অংশে লোহার রড দিয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে থেতলিয়ে দেওয়া হয়।

শুক্রবার রাতে ইনস্টিটিউটের পুরুষ হোস্টেলের ৪০৭নং রুমে তাকে নিয়ে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। রাতেই তাকে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত শিক্ষার্থী সোলাইমান হোসেন পটুয়াখালী জেলা বাউফল উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের খেজুবাড়িয়া গ্রামের মোঃ হানিফের ছেলে। 

রেডিওলজি বিভাগের ৩য় বিভাগের শিক্ষার্থী রিপনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক (গেস্ট টিচার) সাঈদী হাসান ভাইভায় ফেল করিয়ে দেওয়া ও পরীক্ষার খাতায় লিখতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের তার কাছে কোচিং করতে বাধ্য করেন। কিন্তু সোলাইমান তার কাছে কোচিং না করায় শুক্রবার রাতে রেডিওলজি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান ও একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের রশিদ খান, ম্যাটস এর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু বক্কর রানাসহ কয়েকজনকে দিয়ে তাকে পুরুষ হোস্টেলের ৪০৭নং রুমে ডেকে নিয়ে উপর্যুপরি পেটানো হয়। 

এসময় নাহিদ হাসান ও রশিদ খানসহ আরও কয়েকজন সোলাইমানের হাত পা মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে লোহার রড দিয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে থেতলিয়ে দেয়।

গুরুতর আহত শিক্ষার্থী সোলাইমান জানান, গতকালই তিনি বাড়ি থেকে হোস্টেলে আসেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে ৪০৭নং রুমে ডেকে নিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, খন্ডকালীন শিক্ষক সাঈদী হাসান ভাইভায় ফেল করিয়ে দেওয়া ও পরীক্ষার খাতায় লিখতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের তার কাছে কোচিং করতে বাধ্য করেন। এছাড়া পরীক্ষার সময় তাকে নগদ অর্থও দেওয়া লাগে শিক্ষার্থীদের। তিনি (সোলাইমান) তার কাছে কোচিং না করায় তাকে এই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি তার কলেজের অধ্যক্ষের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। 

সোলাইমান আরো জানান, তার বাবা হানিফ তার উপর নির্যাতনের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তিনি আসার পর এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এদিকে, তাকে দেখতে সকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ আফম রুহুল হক দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন। তিনি তাকে আশ্বস্ত করেছেন এ ব্যাপারে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ রায়হান আবীর বলেন, সালমানের মাথা, হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পার না হলে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি নিয়ে কিছু বলা যাবে না।

তবে, খন্ডকালীন শিক্ষক সাঈদী হাসান বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, তিনি শিক্ষার্থী সোলাইমানের উপর নির্যাতনের ঘটনায় আদৌ জড়িত নয়। তিনি তার শরীর খারাপ থাকায় শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়িতে চলে যান। এরপর কি হয়েছে তা তার জানা নাই। সকালে তিনি জানতে পেরেছেন সোলাইমানকে নির্যাতন করেছেন সেখানকার অন্যান্য ছাত্ররা। 

তিনি আরো বলেন, সেখানকার শিক্ষার্থীরা প্রায়ই তারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করে থাকেন। 

এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির অধ্যক্ষ ফারুকুজ্জামান জানান, নির্যাতনের ঘটনাটি সত্য। এজন্য দ্রুতই তদন্ত কমিটি গঠন পূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলোও খতিয়ে দেখা হবে।

কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি ঘটনাটি জানার পর দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গিয়ে আহত সোলাইমানের খোঁজ খবর নিয়েছেন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় এখনও কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে মামলা রেকর্ড করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিভি/এজে/এজেড

মন্তব্য করুন: