ফ্রান্সে ‘মার্সেই চার্টার’-এ স্বাক্ষর করলো ফ্রান্স-বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন

আন্তর্জাতিক অভিবাসন কাভারেজে সত্যনিষ্ঠা ও মানবিকতা নিশ্চিত করতে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে ফ্রান্সের মার্সেই শহর। সেখানে অনুষ্ঠিত মেডিটেরানিয়ান জার্নালিজম ফোরামে উত্থাপিত ও স্বাক্ষরিত হয়েছে ‘মার্সেই চার্টার’ নামে একটি নৈতিক সনদ, যাকে অভিবাসন সাংবাদিকতায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই ঘোষণাপত্রে ১১টি মূলনীতির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ও পক্ষপাতহীন ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সাংবাদিকতা পেশায় থাকা বহু অভিজ্ঞ সংবাদকর্মী, গবেষক ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে প্রণীত এই নীতিমালাগুলো অভিবাসন সংক্রান্ত প্রতিবেদনে যথার্থতা ও সংবেদনশীলতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে।
সনদটি শুধু ফ্রান্সই নয়, ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বহু প্রভাবশালী গণমাধ্যমের সমর্থন পেয়েছে। ফ্রান্সের লুম্যানিতে, ফ্রান্স ২৪, আরএফআই, মিডিয়াপার্টসহ ইতালির ইল মানিফেস্টো ও আনসা, স্পেন, মরক্কো, তিউনিসিয়া, লেবাননের বেশ কিছু স্বাধীন সংবাদমাধ্যমসহ মার্সেই চার্টার তথা সনদে স্বাক্ষর করেছে ফ্রান্স-বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন। ইউরোপীয় প্ল্যাটফর্ম ইনফোমাইগ্রান্টস, যা ফ্রান্স মিডিয়াস মন্ডে, ডয়চে ভেলে ও আনসা পরিচালিত, এই সনদের অন্যতম উদ্যোক্তা।
এই সনদে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তারা অভিবাসনের বহুমাত্রিক বাস্তবতা তুলে ধরেন। ‘অভিবাসন মানেই সংকট’ ধরনের সরলীকরণ এড়িয়ে প্রতিটি ঘটনার পেছনের জটিল কারণ বিশ্লেষণ করে উপস্থাপন করতে হবে। বিভ্রান্তিকর তথ্য, পক্ষপাতদুষ্ট ভাষা, জাতি বা ধর্মভিত্তিক দোষারোপ এড়িয়ে সত্যনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সংবেদনশীলতা বজায় রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, অভিবাসীদের নিজস্ব কণ্ঠস্বর তুলে ধরা, সঠিক পরিভাষা ব্যবহার, সম্মতির ভিত্তিতে চিত্রগ্রহণ ও বাস্তবচিত্র উপস্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে পেশাগত দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। সংবাদকর্মীরা যেন নিজেদের কাজ বিশ্লেষণ করে ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিত করেন সেটিও এই নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত।
মার্সেই ঘোষণাপত্র এককথায় পেশাগত নৈতিকতা ও মানবিক দায়বদ্ধতার সমন্বয়। বিশ্বজুড়ে উদ্বাস্তু, আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের গল্প তুলে ধরতে গিয়ে যেন সংবাদমাধ্যম আরও যত্নবান হয় এই সনদ সেই পথেই তাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জোগাবে। গণমাধ্যমের জন্য এটি শুধু একটি গাইডলাইন নয়, বরং একটি অঙ্গীকার বৈচিত্র্যময় বাস্তবতার প্রতি সম্মান ও সত্যের প্রতি দায়বদ্ধতার।
মন্তব্য করুন: