চাঁদের রূপ-রহস্যে বিমোহিত সভ্যতা

"Moonlit night" অথবা চাঁদনী রাত কিংবা জোছনা রাত। যাই ডাকি না কেনো, একটি ভরা পূর্ণিমার রাতকে আমরা কোনোভাবেই যেনো সংজ্ঞায়িত করতে পারিনা। এর সৌন্দর্য, মাধুর্য কিংবা মাহাত্ম্য, কোনোটাই যেন শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব হয়না।
প্রাচীনকালে, যখন মানুষ ঠিক সভ্য হয়ে ওঠেনি, তখন যেকোনো আলোর উৎসকেই দেবতা মানা হতো। চাঁদ ঘুটঘুটে অন্ধকারে আলোর পসার নিয়ে আসতো, না যেন কত ক্ষমতাধর এই দেব? যে কিনা অন্ধকার ফুটে বের হয় আর দূর করে দেয় সমস্ত তিমির। তাই এই চাঁদকে দেবতাদেরও দেবতা ভাবা হতো। তাই চন্দ্র পূজা সেই আদিম যুগ থেকেই চলে আসছে।
ধীরে ধীরে মানুষ সভ্য হতে শুরু করলো। সভ্য মানুষেরাও চন্দ্রের পূজা করতো কিন্তু অন্যভাবে। এতোকাল লোকে ভাবতো চন্দ্র হলো মহা শক্তিধর এক দেব যার কাছে এই ঘুটঘুটে আঁধারও মাথা নত করে। কিন্তু সভ্য মানুষের কাছে চাঁদ আবির্ভাব হলো এক নারীমূর্তি রূপে। এই শক্তিধর দেব হয়ে গেলেন নমনীয়া "চন্দ্র দেবী" যে কিনা একজন নারীর মতোই কোমল, নমনীয় অথচ দ্যুতি ছড়াচ্ছেন।
চাঁদ নিয়ে প্রতিটি সভ্যতায় রয়েছে হাজারো কল্পকাহিনী। এই কল্পকাহিনীগুলো পড়েই অনেক ভাবুক মনে প্রশ্ন জেগেছিলো "আসলেই এই চাঁদটা কে বা কী? এর গায়ে কালো কালো দাগগুলো কী চাঁদ বুড়ির চরকা কাটার দৃশ্য? চাঁদ কী আসলেই সূর্য দেবের স্ত্রী? এতো আলো চাঁদ রোজ রোজ পায় কোথায়? আবার কিছু দিনের জন্য চাঁদ কোথায় গায়েব হয়ে যায়? এই ভাবুক ও কৌতুহলী মনই একদিন জানায় চাঁদের প্রকৃত পরিচয়, এর অতীত,ভবিষ্যৎ ও বর্তমান।
চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ যার নিজস্ব কোনো আলো নেই বরং সূর্যের আলো চাঁদের গায়ে প্রতিফলিত হয় বলে চাঁদের এতো ঝলমলে আলো আমরা দেখতে পাই। আর চাঁদের গায়ে ছোট বড় অনেক গর্ত থাকে এবং কিছু কিছু গর্তে আলো পৌঁছায় না বলে সেগুলো দেখতে কালো মনে হয়। আর সেগুলো যদি গর্ত না হয়ে চাঁদের বুড়ির চরকা কাটার দৃশ্য হতো তাহলেও সেটা আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব হতো না কারণ চাঁদ আমাদের থেকে ৩,৮৪,৪০০ কি.মি দূরে। তবুও এতো দূর থেকে আলো এসে কিন্তু ঠিকই আমাদের ছুঁয়ে যায়। তার চেয়েও মজার কথা, পাথর এবং ধুলাবালি দিয়ে তৈরি অসংখ্য গর্ত সম্বলিত এই উপগ্রহটিকে আমরা বরাবরই প্রিয় মানুষের সাথে তুলনা করে আসছি শুধুমাত্র এর বাইরের ঝলমলে আলো দেখে।
পূর্ণিমা বরাবরই একটি মনমুগ্ধকর ঘটনা। সাহিত্যে অহরহ পূর্ণিমা নিয়ে রোমান্টিসিজম চোখে পড়ে থাকে। কয়দিন আগেই বছরের শেষ পূর্ণিমা গেলো। পূর্ণিমার ওই চাঁদের নাম ‘কোল্ড মুন’। নামটা হয়তো আমাদের অনেকের কাছেই অপরিচিত। বাংলাদেশে এটি তেমন সুপরিচিত না।
কোল্ড মুন মূলত শীতকালীন পূর্ণিমাকে বলে। ডিসেম্বর মাসে বাতাসে শীতের আমেজ। এ সময় আকাশ আলো করে থাকা চাঁদের আলো যেনো অনন্য এক পরিবেশ তৈরি করে।
বছরের বিভিন্ন সময়ের পূর্ণিমার বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে। ডিসেম্বরের পূর্ণিমা বা কোল্ড মুন নামটি ‘ওল্ড ফারমারস অলম্যানাক’ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘ওল্ড ফারমারস অলম্যানাক’ হলো একটি আমেরিকান বার্ষিক পঞ্জিকা। এই পঞ্জিকায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস, জ্যোতির্বিজ্ঞানের তথ্য, লোককথা, রেসিপি ও প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। ১৭৯২ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
কোল্ড মুন নামের কোন গূঢ় বা কঠিন অর্থ নেই। এর অর্থ খুবই সোজা-সাপ্টা। ডিসেম্বরের তাপমাত্রা শীতল থাকায় এই নামকরণ। এই পূর্ণিমাকে ‘লং নাইট মুন’-ও বলা হয়ে থাকে। ফারমারস অলম্যানাকে এটারও উল্লেখ রয়েছে। এই নামটি তুলে ধরে যে ডিসেম্বরের পূর্ণিমা বছরের অন্যতম দীর্ঘ রাত্রির সময় ঘটে।
বিভি/এসজি
মন্তব্য করুন: