• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভুলে যাই যে নির্মম বাস্তবতা...

শ ম রেজাউল করিম

প্রকাশিত: ১৩:১২, ২ অক্টোবর ২০২১

ফন্ট সাইজ
ভুলে যাই যে নির্মম বাস্তবতা...

প্রথম শতাব্দীতে রোম সাম্রাজ্যের অংশ ছিলো এই অঞ্চল হেগরা। ‌এখন সৌদি আরবের মদিনা থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে। শতশত বিস্ময়কর পাহাড়। এই পাহাড়ে অকল্পনীয়ভাবে গর্ত খুঁড়ে বসবাস করতো এক মানবজাতি। 

হাজার হাজার বছরের পুরোনো স্মৃতি এখনো দাড়িয়ে আছে মরুভূমির মধ্যে। শুধু নেই সেই বসবাসরত মানুষ ও তাদের অধস্তন গোষ্ঠী। এখন ভীতিকর ও বিস্ময়কর পরিত্যক্ত পাহাড় হাজার হাজার বছর পূর্বের সাক্ষ্য বহন করে চলছে। কেউ তাদের মনে রাখেনি, যারা কঠিন পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করেছিলো।

প্রাচীন যুগ থেকে নিকট অতীতে যারা বিশাল বিশাল অট্টালিকা ও বিত্তবৈভব রেখে গেছেন, তাদের নাম কি জানেন উত্তরসুরীরা? তিন পুরুষ পূর্বের পিতামহ বা মাতামহের নাম ক’জনে জানে? মা-বাবার অসুস্থতা, এমনকি মৃত্যুর পরে কবর দিতে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির সন্তানেরা আসেন না। মা-বাবাকে কবরে ভিজে মাটিতে রাখার সময় অনেক সন্তান নিজে দূরে দাঁড়িয়ে শুধু তদারকি করেন, হাতে মাটি স্পর্শ করতে দ্বিধা করেন। বৃষ্টি এলে দ্রুত সরে যান। তিনি কি ভেবে দেখেন, কতো কষ্ট তাঁর বাবা-মা করেছেন তাঁকে জন্ম দিতে ও বড় করতে? স্ত্রী পুত্র কন্যা নিয়ে মহা আরামে থাকা কতোজন সন্তান তাঁর বৃদ্ধ ও রোগাক্রান্ত বাবা-মাকে কাছে রেখে সেবা করেন ওইভাবে, যেভাবে তাঁর ছোট্টবেলায় মা-বাবা করেছিলেন? অথচ, ভালো খাবার না খেয়ে, আরামে না থেকে সীমাহীন কষ্ট করে সন্তানকে লেখাপড়া করানোসহ ধনসম্পদের পাহাড় গড়ে রেখে যান সন্তানের জন্য। কতোজন উত্তরাধিকারী তাঁর পূর্বপুরুষের কথা মনে রাখেন এবং জন্য দোয়া করেন? সর্বোচ্চ, মা-বাবা, দাদা-দাদী? অথচ, এর পূর্বের জেনারেশনের কারো নামও হয়তো জানেন না। 

একবার ভেবে দেখি, অসহায় বাবা-মায়ের পাশে কতোটা সময় দিয়েছি? নিজের লাক্সারিয়াস বাসায় এনে কতোদিন রেখেছি? নিজ সন্তান, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা ও অন্যান্য প্রিয়জনদের সাথে কতো আদরে ভরা সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন, আদর যত্ন করেছেন, তার একভাগও কি মা-বাবার সংগে? কতোটা কেয়ারিং (যত্ন) করেছি? সন্তান অসুস্থ হলে না ঘুমিয়ে সারাদিন রাত তার পাশে থাকেন মা-বাবা, সেই মা-বাবা অসুস্থ হলে আমরা কতোটা করি? এটাই বাস্তবতা। 

মা-বাবা, দাদা-দাদী সহ পূর্ব পূরুষদের কবরে নিজে পরিচর্যা করেন কতোটা? নিজ বা বাবার নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করার সময় কি মনে করি যে, আমাদের মা-বাবার যারা মা-বাবা ছিলেন, তাদের জন্য দোয়া করার জন্য কি অন্য কেউ আছে, বা তাদের নাম অমর করে কে রাখবে? এভাবেই জ্ঞাতসারেই আমরা হারিয়ে ফেলি তাদেরকে, যাদের থেকে ক্রমান্বয়ে আজকের আমি। অথচ, একবারও ভেবে দেখি না ক'দিন পরে আমারো একই পরিণতি হবে। আমার কবর এক সময়ে হারিয়ে যাবে কালের গহ্বরে। কেউ মনে রাখবে না। বিত্তবৈভব ভোগ করা মানুষেরাও জানবে না এসবের উৎসের অতীত। 

আমরা কি একা একা ভেবে দেখি যে, কতোটা ন্যায় ও কতোটা অন্যায় করছি, অপ্রয়োজনে অপরের ক্ষতি করছি? ধনসম্পদের চেয়ে বেশি প্রয়োজন ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতি নৈতিকতার আদর্শিক শিক্ষার। আসুন আমরা স্রষ্টাকে স্মরণ করি এবং আত্মশুদ্ধি ও কল্যাণের পথে এগিয়ে যাই। পরম করুণাময় আমাদের সহায় হোন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম-এর ফেসবুক থেকে নেওয়া

বিভি/এসডি

মন্তব্য করুন: