যারা বলেন সিনেমায় ‘ভালো গল্প নেই’ তারা আসলেই কী ভালো গল্প চান?

জনপ্রিয় ও তরুণ নাট্যকার রশিদুর রহমানের প্রশ্ন- যারা বলেন সিনেমায় ‘ভালো গল্প নেই’ তারা আসলেই কী ভালো গল্প চায়? তাঁর মতে, নাটক-সিনেমার জন্য ভালো গল্প থাকলেও, পরিচালক-প্রযোজকরা বাড়তি ভিউ পাওয়ার আসায় ভালো গল্পকে প্রাধান্য দেয় না।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি ভালো গল্প প্রাধান্য না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি তাঁর রচনায় নির্মাণ শেষ হয়েছে ‘সোনার মানুষ’ টেলিফিল্ম। আসছে ঈদে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচার হবে টেলিফিল্মটি। 

নাট্যকার রশিদুর রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু দেওয়া হলো-

প্রায় দুই বছর গল্পটা হাতে ছিলো। এই গল্পটা তথাকথিত স্টারদের কাছে গিয়েছে। যারা দিন-রাত বিভিন্ন ইন্টারভিউতে বলে বেড়ায় ভালো গল্প নেই, ভালো চিত্রনাট্য নেই, ভালো স্ক্রিপ্ট নেই তারা গল্পটা রিজেক্ট করেছে।

(এইটা ভালো আমি বলছি না। কিন্তু তারা দুই বছরে যে কাজ গুলো করেছে সে কাজের সাথে চ্যালেঞ্জ করতে পারবো)

প্রায় দেড় বছর ঘুরিয়ে ডিরেক্টর সুব্রত সঞ্জীব দাদাকে গল্পটা দিয়েছি। দেড় বছর অপেক্ষা করেছেন, রাগ করেছেন, মনে কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু আমার উপর বিশ্বাস হারায়নি। আমি কৃতজ্ঞ। কেমন গল্প ছিলো, কেমন স্ক্রিপ্ট ছিলো সাক্ষী অভিনেতা মীর সাব্বির, অভিনেত্রী মৌসুমি হামিদ ও চিত্রগ্রাহক মীর হান্নান ভাইসহ নাটকের সাথে জড়িত সবাই।

যারা ইন্টারভিউতে দিন-রাত বলে বেড়ায় ভালো গল্প নেই, ভালো স্ক্রিপ্ট নেই, ভালো ডিরেক্টর নেই ইত্যাদি। আসলেই কি তারা ভালো গল্প চায়? ভালো স্ক্রিপ্ট চায়? ভালো কো আটিস্ট চায়? ভালো অভিনয় করতে চায়? না কি 'ধর সাইকেল দেইখ্যা অ্যাই' টাইপ গল্প চায়! সব ভিউ আর সিন্ডিকেটে ঘুরপাক খাচ্ছে।

অন্যদিকে ভিউ না হলে ওই আর্টিস্টদের কেউ কাস্টিং করবে না, ওই রাইটারের গল্প কেউ নিবে না, ওই নির্মাতাকে দিয়ে কেউ নির্মাণ করবে না, প্রযোজক প্রডিউস করবে না, চ্যানেল নাটক নিবে না। মূলতঃ ভিউ হলেও দোষ না হলেও দোষ। 

তবে এটা মানতে হবে সিনেমা-নাটকে গল্পের বিকল্প কিছু নেই। কিন্তু এই নাটক-সিনেমায় সব কিছুর জন্যে বাজেট থাকলেও স্ক্রিপ্টের জন্য কোনো বাজেট থাকে না। তার উপর নানা অজুহাত আছে-ই। অথচ দিন শেষে ভালো গল্প নেই বলে সবার কি দীর্ঘশ্বাস! এইটা কি ফাইজলামি না?

বিনামূল্যে ভালো গল্প, ভালো স্ক্রিপ্ট, ভালো চিত্রনাট্য, ভালো ডায়লগ চাই! দিন দিন এই রোগ মহামারী পরিস্থিতিতে যাচ্ছে। গল্পের অভাবে চলচ্চিত্র শেষ। নাটকের অবস্থা দেখেন। বাংলাদেশীদের চাইতে ভারতের মানুষ বেশি মেধাবী? আমি বিশ্বাস করি না। বলতে পারেন, তাহলে তারা কেন সফল? হ্যাঁ- তাদের সফলতা নিয়ে সামান্যতম উপলদ্ধি থাকলেই বুঝবেন কেন সফল!

আরেকটা শুরু হয়েছে অ্যাওয়ার্ড। কে দিচ্ছে, কাকে দিচ্ছে, কেনো দিচ্ছে কেউ জানে না! যেসব কাজের জন্য অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছে সেসব কাজ অ্যাওয়ার্ড পাওয়া মানে অ্যাওয়ার্ডের অনেক বড় অসম্মান। আরে ভাই- দেশে অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে, তাদের অ্যাওয়ার্ড দিন। তারা ভালো কাজে আরও উৎসাহী হবে। 'ভাবীর দাবি' টাইপ কাজের জন্যে যদি আমাকে অ্যাওয়ার্ড দেন তাহলে আমিও উৎসাহী হয়ে পরের বার 'স্বামী বিদেশ' টাইপেরর নাটক-সিনেমা বানাবো। ভুলে যাবেন না আমরা অতি-উৎসাহী জনগণ। টিকটক স্টারদের অ্যাওয়ার্ড দিলে তারা পরের বার অশ্লীল সিনেমা বানাবেই।

যেটা নিয়ে কথা,
আমার লেখা গল্পে "সোনার মানুষ" আসছে ঈদে। নির্মাণ 'সুব্রত সঞ্জীব' ক্যামেরায় মীর হান্নান। লোকেশন বরিশাল।

উল্লেখ্য, ২৫ বছর বয়সী নাট্যকার রশিদুর রহমান ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক নাটক রচনা করেছেন। এসবের মধ্যে ‘শেষ বিকেল, প্রেমে পড়া বারণ, তুমি আমার প্রবলেম, ফ্রাস্ট্রেশন, অভিমানী, কর্মফল, লাভ নট রিভেঞ্জ, মেগনেট বাবু  ইত্যাদি।