আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস
অনিয়মে বাড়ছে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের হাইপো হয়ে মৃত্যুর হার

হঠাৎ সুগার লেভেল অস্বাভাবিকভাবে কমে মুহূর্তেই নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছেন আপনজন। হাসপাতালে নেওয়ার পর জানা যাচ্ছে হাইপো হয়ে মারা গেছেন তিনি। সম্প্রতি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলা হয়ে থাকে। চিকিৎসকরা বলছেন, রক্তের গ্লুকোজ বা শর্করা হঠাৎ কমে গেলেই হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া। যা নীরবেই কেড়ে নিতে পারে একজন রোগীর প্রাণ। হাইপোর অধিকাংশ ঘটনার জন্যই রোগীর নিয়মানুবর্তিতার অভাবকেই দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
হাইপো হয়ে মৃতের সংখ্যার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাইপো আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের ৮০ শতাংশই ইনসুলিন নেওয়ার পর যথা সময়ে খাবার গ্রহণ করেননি। যার কারণেই হঠাৎ রক্তের শর্করা কমে গিয়ে হাইপো হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রাইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ বাংলাভিশনকে বলেন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩ দশমিক ৯ এর নিচে চলে গেলেই একজন মানুষের হাইপো হতে পারে। হাইপারের তুলনায় হাইপোতে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। হাইপো হলে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে একজন মানুষ মারা যেতে পারে। তবে হাইপো হলে ঘরেই তৎক্ষণিক শর্করা জাতীয় খাবার দিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
তিনি বলেন, গাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে হার্টের মধ্যে একটা পরিবর্তন হয়। এতে হার্টের রিদম পরিবর্তন হয়ে হঠাৎ হার্টের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে মানুষ মারা যায়। অনেক সময় ঘুমের মধ্যেও হাইপো হয়ে মানুষ মারা যায়।
সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীরা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ইনসুলিন বা ওষুধ নিলে, পর্যাপ্ত খাবার না খেলে, কোনো খাবার মিস করলে, ডায়রিয়া বা বমি হলে, ইনসুলিনের কার্যকারিতা শুরু হলেও কোনো কারণে খাবারের পুষ্টিগুণের কার্যকারিতা শুরু না হলে, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত হাটলে হাইপো হওয়ার শঙ্কা থাকে বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সাবেক সভাপতি এবং বারডেম হাসপাতালের পরিচালক (একাডেমি) অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান বলেন, হাইপো হওয়ার জন্য ওষুধের কোনো দোষ নেই। রোগীরা খাদ্যের বা ওষুধের নিয়মগুলো ঠিকমতো না মানলেই হাইপো হয়। এটা সাধারণত রোগীর বুঝতে না পারা বা তার চিকিৎসক তাকে নিয়ম ঠিক মতো বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে হতে পারে।
তিনি বলেন, রোগীরা মনে করে ডায়েট কন্ট্রোল মানে খাবার বাদ দিতে হবে। কিন্তু আসলেতো সেটা না। ডায়েট হলো প্রয়োজন অনুযায়ী খাওয়া। প্রত্যেকের উচ্চতা-ওজন, কাজের ধরন অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হয়। পুরো খাবারটাকে ৬ ভাগে ভাগ করে খেতে হয়। ব্যালেন্স ডায়েটের নিয়ম হলো সকাল-দুপুর-রাত তিন বেলা বড় খাবার তার ফাঁকে আরও ৩ ঘণ্টা পর পর হালকা নাস্তার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খাবারটা ভাগ করে খাওয়া। কিন্তু আমরা একদিন ৮টায় নাস্তা করি, আরেকদিন ৯টায়, আরেকদিন ১০টায়। কোনো দিন মাঝে খাই আবার কোনো দিন দুপুরের খাবারও খাই ৫টা-৬টায় গিয়ে। এটাই অনিয়ন্ত্রিত খাবার এবং এর মাধ্যমে সুগারও অনিয়ন্ত্রিত হয়। যা হাইপোর মূল কারণ।
যার তিনটা রুটি খাওয়ার কথা সে যদি একদিন ২টা আরেক দিন ৪টা খায় তাহলে কখনো সুগার বেশি কমে যাবে কখনো আবার বেশি বেড়ে যাবে। কারণ খাবারের আলোকেই প্রয়োজনীয় ওষুধ নির্ধারণ করা থাকে। সে বেশি খেলে ওষুধতো আর বাড়ে না। যারা এসব মানে না তাদেরই হাইপো হয়।
ডায়াবেটিস রেগিদের হাইপোর ঝুঁকি মোকাবিলায় সকল কাজ যথাযথ নিয়ম মেনে করার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
বিভি/রিসি
মন্তব্য করুন: