• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবনতরী’, ৫০ টাকা ভিজিটে ‍উন্নত চিকিৎসাসেবা

এম, দেলোয়ার হোসেন  রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ১১:২৩, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১১:২৪, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

ফন্ট সাইজ
ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবনতরী’, ৫০ টাকা ভিজিটে ‍উন্নত চিকিৎসাসেবা

রাজবাড়ীতে নদী পাড়ের অস্বচ্ছল ও দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে পদ্মা নদীতে অবস্থান করছে ইম্প্যাক্ট ‘জীবনতরী’ ভাসমান হাসপাতাল। এই হাসপাতালটি এখন মানুষের ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসাসেবা পেতে প্রতিদিন শত শত রোগী এই হাসপাতালে আসছেন।

হাসপাতালে শুরুর দিকে রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও এখন প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী সংখ্যা। এখন দিনে ৯০ থেকে ১০০ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও স্বল্প খরচে প্রতিনিয়ত চোখের বিভিন্ন সার্জারি করা হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘জীবনতরী’ নামে ভাসমান এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ২৫ বছরে ৫০টি জেলায় এই হাসপাতালের পক্ষ থেকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দর মৌলভীঘাট এলাকায় আসে ইম্প্যাক্ট ‘জীবন তরী’ ভাসমান হাসপাতালটি।

১৮ জানুয়ারি থেকে রোগী দেখার কার্যক্রম শুরু করে হাসপাতালটি। শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রোগী দেখার কার্যক্রম চলে। তবে, রমজান মাসে দুই ঘণ্টা কমিয়ে বিকেল তিনটা পর্যন্ত রোগী দেখার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিলো। রোগী দেখার রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৫০ টাকা।

১২ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে চক্ষু রোগের চিকিৎসা ও ছানি অপারেশন করা হয়। রোগীর চাহিদা অনুযায়ী লেন্স সংযোজন ও ফ্যাকো সার্জারির ব্যবস্থা আছে। এই হাসপাতালে নাক-কান-গলা রোগের চিকিৎসা ও অপারেশন করা হয়। এ ছাড়া জন্মগত মুগুর-পা, বাঁকা-পা, ঠোটকাটা, তালুকাটা রোগের অপারেশন করা হয়। অর্থোপেডিক সমস্যাজনিত শারীরিক ব্যথা, কোমড় ব্যথা, মাথা ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়। হাসপাতালে সার্বক্ষণিক ৩ জন মেডিকেল অফিসার, ৩ জন নার্স, ৭ জন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টসহ মোট ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৪ ঘন্টা কর্মরত থাকেন। এছাড়াও জরুরি রোগীদের জন একটি অ্যাম্বুলেন্সও সবসময় প্রস্তুত থাকে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দর মৌলভীঘাট এলাকায় আকাশি-সাদা রঙের তিন তলাবিশিষ্ট হাসপাতালটি নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। নদীর পারে টিকিটি কাউন্টার। টিকিট কাউন্টারের পাশেই ছোট টিনের চালার নিচে একটি অ্যাম্বুলেন্স।নদীর পার থেকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অস্থায়ীভাবে বালুর বস্তা ও বাঁশের মাচা দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। ৩ তলাবিশিষ্ট এই হাসপাতালের ভেতরেই রয়েছের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জায়গা, চিকিৎসকের চেম্বার, প্যাথলজি ও এক্স-রে করার কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার ও রোগী থাকার বেড। তৃতীয় তলায় একপাশে ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার ও অন্যপাশে ফাঁকা। ছাদের ওপরে টিনের ছাউনি দেওয়া।

হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে চোখের ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন গোলাম রাব্বানী নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, জীবনতরী একটি উন্নতমানের হাসপাতাল। আমি বিভিন্নজনের কাছে শুনে আমার বাবাকে নিয়ে এখানে এসেছি তার চোখের চিকিৎসা করাতে। এখানে এসে দেখলাম হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের ব্যবহার খুবই ভালো। চিকিৎসকদের ব্যবহার খুব ভালো এবং তাদের ব্যবস্থাপনাও খুব ভালো।চিকিৎসকরা খুব যত্ন সহকারে রোগী দেখছেন। মাত্র ৫০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফ্রি দিয়ে বাবার চোখ দেখালাম। এছাড়াও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি খুবই কম।

রোকসানা আক্তার নামে একজন বলেন, এই ভাসমান হাসপাতালটির পাশে আমাদের বাড়ি। এখানে এসে আমি ভালই চিকিৎসা পেয়েছি। আমার চোখের সমস্যা ছিলো। প্রথমে দেখিয়েছিলাম, ভালোই উন্নতি হয়েছে চোখের। আজ দ্বিতীয়বার চেকআপে করতে এসেছি।

রাজবাড়ী সদরের লক্ষিকোল এলাকার বাসিন্দা মোঃ শরীফুল ইসলাম বলেন, বাবা মাকে নিয়ে এই ভাসমান হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। পরিবেশ খুবই ভালো। মাত্র ৫০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফ্রি দিয়ে বাবা মাকে চোখের ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার অতি যত্ন সহকারে আমার বাবা মাকে দেখে দিলেন। এছাড়াও এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ খুবই কম। আমরা চাই এই হাসপাতালটি এখানে স্থায়ীভাবে থাক। তাতে আমাদের এলাকার দরিদ্র মানুষ উপকৃত হবে।

ইম্প্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালের প্রশাসক এ কে এম শহিদুল হক বলেন, আমরা প্রায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে রাজবাড়ী আছি।শুরুতে আমাদের রোগীদের উপস্থিতি খুব কম ছিল। কারণ, তখন আমরা তাদের কাছে অপরিচিত ছিলাম। কিন্তু, ধীরে ধীরে আমাদের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন আমরা ৮০ থেকে ১০০ জন রোগীকে সেবা দিয়ে থাকি। চলতি মাসে আমরা ৮৫ জন রোগীকে সার্জারি করেছি।
আমরা ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার (প্রফেসর) দ্বারা রোগীদের অপারেশন করিয়ে থাকি। আগামী দুই একদিনের মধ্যে আমাদের এখানে আরো ৪০ থেকে ৫০ জনকে চোখের সার্জারি করা হবে।

জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালটি সারা বাংলাদেশের নদী অববাহিকায় যেসব জায়গার মানুষ সহজে স্বাস্থ্য সেবা পায় না এই ট্রিটমেন্টটা আমরা তাদেরকে দিচ্ছি। আমরা অত্যন্ত সুলভ মূল্যে চোখের সার্জারি করে দিচ্ছি। এছাড়াও নাক, কান, গলা, হাড়জোড়া, হাড়ভাঙা,পঙ্গু, জন্মগত ঠোঁটকাটা-তালুকাটা রোগীদের চিকিৎসা, প্লাস্টিক সার্জারিসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মানবতার সেবা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। নদনদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ বেশির ভাগই তুলনামূলক দরিদ্র হয়। তাদের পক্ষে বেশি টাকা খরচ করে শহরে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা নেওয়া কঠিন, তাই তাদের সুবিধার্থে হাতের কাছেই আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। এক এক এলাকায় দুই থেকে ৬ মাস আমরা অবস্থান করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকি।

আমাদের রাজবাড়ীতে আরো কিছুদিন থাকার ইচ্ছা থাকলেও নদীর পানি ও স্রোত বৃদ্ধির কারণে কিছুদিনের মধ্যেই চলে যেতে হবে। তবে, রাজবাড়ীর মানুষের যে সহযোগীতা ও ভালোবাসা পেয়েছি তা আমরা ভুলবো না।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2