যেসব লক্ষণে বুঝবেন আপনি হাইপোতে ভুগছেন, তৎক্ষণাৎ যা করণীয়
ফাইল ছবি
রক্তের গ্লুকোজ বা শর্করা হঠাৎ নেমে যাওয়াকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলা হয়ে থাকে। শারীরিক এই অবস্থা হাইপো নামেও পরিচিত। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য এটি একটি বিভীষিকা। বেশির ভাগ ডায়াবেটিসের রোগী জীবনে এক বা একাধিকবার এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন বলে জানায় গবেষণা।
গ্লুকোজ হচ্ছে আমাদের জীবনীশক্তি বা ফুয়েল, যা প্রতিটি কোষে শক্তি সরবরাহ করে। এই গ্লুকোজ বিপজ্জনক মাত্রায় নেমে গেলে এক এক করে বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রম কমে যেতে থাকে। বিশেষ করে মস্তিষ্কের একমাত্র জ্বালানি হচ্ছে গ্লুকোজ। সে কারণে হাইপোগ্লাইসেমিয়া দীর্ঘ সময় চলতে থাকলে রোগী অচেতন হয়ে পড়েন। এমনকি হতে পারে মৃত্যুও।
যদি কারও রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ প্রতি লিটারে ৪ মিলিমোলের (প্রতি ডেসিলিটারে ৭০ মিলিগ্রাম) কম হয়ে যায়, তবে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে বলা যায়। কিছু উপসর্গের মাধ্যমে রোগী এটা বুঝতে পারবেন। রক্তে গ্লুকোজ কমে গেলে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দেয়
১. হাত বা শরীর কাঁপা
২. বুক ধড়ফড়
৩. ঘামতে থাকা
৪. অস্থির লাগা
৫. মেজাজ খারাপ হওয়া
৬. চোখ ঝাপসা হয়ে আসা
৭. মাথাব্যথা ইত্যাদি।
এসব উপসর্গ দেখা যদি দ্রুত গ্লুকোজ না গ্রহণ করা হয় তবে মস্তিষ্কে শর্করা কমে যেতে থাকে আর রোগী ভুল, অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন, অর্ধচেতন বা অচেতন হয়ে পড়েন। কখনো খিঁচুনি শুরু হয়ে যায়। একজন ডায়াবেটিসের রোগী, বিশেষ করে যারা ইনসুলিন বা ইনসুলিন উৎপাদনকারী ওষুধ সেবন করছেন, তাদের এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি।
নানাবিধ কারণে সাধারণত ডায়াবেটিসের রোগীদেরই এ সমস্যা দেখা দেয়। ঠিক সময়মতো খাবার না খাওয়া, পরিমাণে খুব কম খাওয়া, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইনসুলিন বা ওষুধ সেবন করা, হঠাৎ কোনো দিন অতিরিক্ত ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম করে ফেলা ইত্যাদি কারণে এমনটা হতে পারে। যাদের কিডনি বা যকৃতের জটিলতা আছে, যাদের ডায়াবেটিস দীর্ঘদিনের, যারা অ্যালকোহল সেবন করেন তাদের বেশি হয়। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিসের রোগীর স্নায়ু অকার্যকর ও অনুভূতি শক্তি কমে যাওয়ায় কারণে অনেকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়া সত্ত্বেও কোনো লক্ষণ না–ও বুঝতে পারেন। এদের বিপদ বেশি। আবার অনেকে ঘুমের মধ্যেই রক্তে শর্করা কমে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়তে পারেন। এটাও বিপজ্জনক।
যদি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ টের পাওয়া যায় তবে দ্রুত একটি গ্লুকোমিটারে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উচিত। যদি তা সম্ভব না–ও হয়, তবু হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে ধরে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম পরিমাণ গ্লুকোজ খেয়ে নিতে হবে। সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো এক গ্লাস পানিতে আড়াই-তিন চামচ চিনি গুলে দ্রুত পান করা। একটা চকলেট, মিষ্টি, ক্যানডি, চিনি মেশানো জুস খেলেও চলবে। ১৫ মিনিট পর আবার গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন। যদি আবারও কম দেখায়, তবে আবার গ্রহণ করুন। যতক্ষণ না রক্তের গ্লুকোজ ৬-৭ মিলিমোলের ওপর ওঠে ততক্ষণ বারবার পান করতে হবে। কিন্তু যদি এমন হয় যে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার জন্য রোগী অর্ধচেতন বা অচেতন হয়ে পড়েছেন তবে জোর করে চিনির পানি খাওয়ানো যাবে না। সে ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে শিরায় গ্লুকোজ দিতে হবে। সেরে ওঠার পর খতিয়ে দেখতে হবে কেন এমন হলো।
খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করুন। সঠিক সময়ে সঠিক খাবার খেতে হবে। দিনে অন্তত ৬ বার খাবার গ্রহণ করা উচিত। ঘুমের আগে একটা হালকা স্ন্যাকস জাতীয় কিছু খাওয়া উচিত। ইনসুলিন বা ওষুধের মাত্রা কমাতে হবে কি না, সে বিষয়ে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কখনো বারবার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে নির্দিষ্ট ওষুধ বা ইনসুলিন পরিবর্তন করা দরকার হতে পারে। কিডনি বা যকৃতের টেস্ট করা উচিত বছরে অন্তত একবার।
অনেকের ধারণা যাদের ডায়াবেটিস আছে শুধু তাদেরই হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। তবে এই ধারণা সঠিক নয়। যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদেরও হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্লুকোজের যোগান না থাকে বা শরীর রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে হতে পারে এটি। যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ প্রতি ডেসিলিটারে ৫৫ মিলিমিটার হয়ে গেলে তখন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে থাকে। যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ, সময়মতো খাবার না খাওয়া অথবা অন্যান্য রোগের কারণে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসা খুবই সহজ। তবে এক্ষেত্রে সচেতনতা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। এতেই বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।
সূত্র: হেলথলাইন, মায়ো ক্লিনিক
বিভি/এসজি




মন্তব্য করুন: