• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ক্যাশ রশিদের বিপিএ ক্যান্সার আক্রান্তের হার বাড়াচ্ছেঃ নতুন গবেষণা

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ১১ এপ্রিল ২০২২

আপডেট: ১২:১৩, ১২ এপ্রিল ২০২২

ফন্ট সাইজ
ক্যাশ রশিদের বিপিএ ক্যান্সার আক্রান্তের হার বাড়াচ্ছেঃ নতুন গবেষণা

থার্মাল পেপারের রশিদ

দেশের বিভিন্ন সুপার শপ ও ব্যাংক লেনদেনে ব্যবহৃত থার্মাল পেপারের রশিদের মাধ্যমে মানবদেহে ছড়াচ্ছে  বিসফেনল এ বা বিপিএ। যা দেহে ডায়াবেটিকস, ক্যান্সারের মতো রোগ তৈরি এবং প্রজনন ক্ষমতা কমাচ্ছে। গেলো বছর এমন একটি গবেষণা প্রকাশ করেছিল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো। যা রিতিমত আলোচনার জন্মও দিয়েছিল। এবার একই বিষয়ে করা নতুন গবেষণা তুলে ধরলো সংগঠনটি।

নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে পরিবেশবাদী গবেষণা সংগঠনটি জানায়, নতুন পরীক্ষায় বর্তমানে দেশের বাজারে ব্যবহৃত ৯৭ শতাংশ থার্মাল রশিদেই বিসফেনল-এ ক্যামিকেলের উপস্থিতি পেয়েছেন তারা।  এটি স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব, ডায়াবেটিস এবং ওবেসিটির অন্যতম কারণ বলেও জানান গবেষকরা। 

সোমবার (১১ এপ্রিল) এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো আয়োজিত হাই লেভেল পলিসি ডায়লগ এ ‘ট্রানসাকশান উইথ টক্সিনস: বিপিএ ইন ক্যাশ রিসিপ্টস’ শীর্ষক ফলো আপ প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। এই গবেষণাটি এসডো, ফাইনানশিয়াল ইন্ডাস্ট্রি পাবলিক ইন্টারেস্ট ফাউন্ডেশন এবং কোরিয়ার রাজধানী সিউল এ অবস্থিত ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকিউপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ- ডাব্লিওআইওইএইচ যৌথভাবে পরিচালনা করেছে বলেও জানানো হয়।

গবেষণা তথ্য তুলে ধরে এসডো জানায়, দেশের ৪০টি স্থান থেকে আলাদাভাবে সংগৃহীত ক্যাশ রিসিটের নমুনার প্রায় ৯৭ শতাংশ থার্মাল কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং এই ৯৭ শতাংশ থার্মাল কাগজের মধ্যে, ৬৯ শতাংশতে বিপিএ এবং ২৬ শতাংশতে বিপিএস পাওয়া গিয়েছে। সংগৃহীত ৬৭টি নমুনার মধ্যে, শুধুমাত্র একটি স্থানীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি দোকান থেকে সংগৃহীত ২টি নমুনাতে থার্মাল কাগজ ব্যবহার করা হয়নি। এই ৬৭টি রিসিট ৪০টি জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে শুধুমাত্র ১টি দোকানের রিসিটেই (২টি রিসিট) থার্মাল কাগজের ব্যবহার ধরা পরে নেই। সংগৃহীত নমুনাগুলোতে ০.৮৩-১.৭১ % মাত্রায় বিপিএ এবং ০.৬১-০.৯৬% মাত্রায় বিপিএস পাওয়া গিয়েছে যা ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন- ইইউ এর আদর্শ মাত্রার চেয়ে বেশি। 

নমুনাগুলো পাবলিক অফিস, স্থানীয় দোকানের বিভিন্ন শাখা, ছোট ও বড় সুপারমার্কেট, ব্যাঙ্ক এর টিকিট এবং ডেলিভারি রিসিট বা সাধারণ দোকান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানায় তারা।

এর আগে এসডো ২০১৯ সালে একই রকম একটি গবেষণা করেছিল। যেখানে ৩৬টি নমুনায় বিপিএ এর উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়েছিল। ৩৬টি নমুনা রিসিটের মধ্যে ৫টি এটিএম বুথ থেকে, ৬টি ফাস্ট ফুডের দোকান থেকে, ২টি বেকারির দোকান থেকে এবং ৩টি করে রিসিট রেস্তোরাঁ, স্টেশনারি, মিষ্টির দোকান এবং ফার্মেসি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এটিএম মেশিন থেকে ৩টি রিসিট, ২টি ক্যাশ রেজিস্টার মেশিন থেকে এবং বাকি ৬টি রিসিট কার্ড মেশিন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। সবগুলো নমুনার মধ্যে বিপিএ-এর তীব্রতা ১০ - ৫৩ মাইক্রোগ্রাম/সেন্টিমিটার ২ যার ওজন ছিল ০.৮%-৩.৭%, যা ইইউ  এর  আদর্শ মান ০.০২ % কে অতিক্রম করে গিয়েছিলো ৷ এছাড়াও, মোট ১৩৫০  জন মানুষের উপর একটি  জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল এবং সেখানে দেখা গিয়েছিল যে, জরিপকৃত মানুষের মধ্যে কেউই বিপিএ-যুক্ত থার্মাল পেপার এবং এর ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে জানেন না।

গবেষণা মতে, বিপিএ এবং বিপিএস হল এক ধরণের এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টার যা এস্ট্রোজেন এবং থাইরয়েড হরমোনের মতো দেহের অন্যান্য হরমোনগুলোকে নকল করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট করে। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো রিসিটে পাউডার হিসেবে থাকে, যা সহজেই মানুষের আঙুলের সংস্পর্শে আসতে পারে। 

সাম্প্রতিক গবেষণায়ও দেখা গেছে, রিসিটগুলো স্পর্শ করার দুই ঘণ্টার মধ্যেই মানুষের প্রস্রাবে এই পদার্থগুলোর উপস্থিতি পাওয়া যায়। এতে প্রমাণ হয় যে, ক্যাশিয়ার এবং অন্যান্য কর্মী যারা থার্মাল কাগজ সবসময় ব্যবহার করে যাচ্ছে তাদের দেহে অন্যান্যদের তুলনায় এই রাসায়নিক পদার্থগুলো বেশি থাকে। গর্ভবতী কর্মী যারা ক্যাশ রিসিট নিয়ে কাজ করেন তাদের ভ্রূণ এসব পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে ভ্রূণে শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে।

এ বিষয়ে এসডোর গবেষণা দলের প্রধান ড.শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘থার্মাল পেপার সাধারণত রেস্তোরাঁ বা খাবারের দোকানে ক্যাশ রিসিটের জন্য ব্যবহৃত হয়, যার ফলে মানুষের হাতের মাধ্যমে বিপিএ মানব দেহে প্রবেশ করে থাকে। থার্মাল পেপার থেকে বিপিএ রক্তের মাধ্যমে দ্রুত শোষিত হয় ফলে ডায়াবেটিস, স্নায়বিক ভারসাম্যহীনতা এবং এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।’

আইসিডিডিআর,বি এর এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারভেনশন ইউনিটের প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ইডিসি একটি নতুন আশংকার বিষয় এবং ইডিসির ব্যবহার বন্ধ করা অতি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা মহিলা, শিশু ও ভ্রূণের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে।’

আইপেনের ত্রিপ্তি আরোরা বলেন, ‘বিপিএ এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং শুধুমাত্র কয়েকটি পণ্যে তা ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হল যে এর সাথে জড়িত বিসফেনলগুলোর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্তই বিপদজনক।’

ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকিউপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ- ডাব্লিওআইওইএইচ এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইউন-কেউন লি বলেন, ‘বিপিএ হরমোনের মত একটি পদার্থ যা ভ্রূণ, শিশু, কিশোর ও প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রজনন সমস্যাগুলির সাথে জড়িত। খুব অল্প পরিমাণেও যদি ইডিসির সংস্পর্শে আসা হয়, তাহলেই শরীরে এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অর্থাৎ মানবদেহে ইডিসির কোনোও নূন্যতম সীমারেখা নেই।’

স্বাস্থ্য  অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, বিপিএ বেশিরভাগই পলিকার্বোনেট প্লাস্টিক, ইপক্সি রেজিন এবং থার্মাল কাগজ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। কাজেই জনগণের  বিপিএ থেকে বিরত থাকার জন্য প্লাস্টিকের পরিবর্তে গ্লাস বা স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করা উচিত (উদাহরণস্বরূপ পানির বোতল, স্টোরেজ কন্টেনার এবং শিশুদের পানির বোতল)। যেহেতু শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিপিএর সংক্রামণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, তাই স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত ঝুঁকিগুলো অবশ্যই মূল্যায়ন এবং নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

এসডোর সভাপতি এবং বাংলাদেশের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “ক্যাশ রিসিট থেকে বিপিএ দ্বারা স্বাস্থ্যের যে হুমকির সৃষ্টি হয় তা মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। 

তিনি এক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং কঠোর আইন প্রয়োগের উপর জোর দিতে সরকারকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান। 

বিভি/কেএস

মন্তব্য করুন: