• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

ইসরাইলে সাইবার হামলা বেড়েছে ৭০০ শতাংশ (ভিডিও)

প্রকাশিত: ১৭:০১, ১৬ জুন ২০২৫

ফন্ট সাইজ

সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত সামরিক ও ভূ-রাজনৈতিক অঙ্গন ছাড়িয়ে সাইবার জগতেও ছড়িয়ে পড়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি সাইবার হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে আরও জটিল করে তুলছে।এই সাইবার যুদ্ধ শুধুমাত্র অবকাঠামোগত ক্ষতি বা তথ্য চুরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং এটি অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রভাবও ফেলছে।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলের ডিজিটাল পরিসরে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সাইবার আক্রমণের হার বৃদ্ধি পায়। প্রশ্ন হলো, এটি কি কেবল প্রতিশোধ, নাকি নতুন ধাঁচের একটি যুদ্ধ পরিকল্পনার অংশ? বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৭ সালে ইসরায়েলি স্টাক্সনেট হামলার পর থেকে ইরান দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাইবার সক্ষমতা গড়ে তুলেছে । 

১৩ জুন ইসরায়েল “Operation Rising Lion” নামে ইরানে বড় ধরনের হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক অবকাঠামো বিধ্বস্ত করা। আরব ভিত্তিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল  আল-মায়াদিন-এর প্রতিবেদন বলছে,  ইসরায়েলের আক্রমণের ঠিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানি রাষ্ট্রভিত্তিক এবং হ্যাকটিভিস্ট গ্রুপগুলি একযোগে অপারেশন শুরু করে ।

আল-মায়াদিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাইবার হামলার ঘটনা ৭০০% বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসরায়েলি সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম চেক পয়েন্ট-এর তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাস থেকেই ইসরায়েলের ওপর সাইবার হামলা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এই হামলাগুলোর বেশিরভাগই আসছে ইরান-পন্থী হ্যাকার গ্রুপগুলোর কাছ থেকে। সম্প্রতি অ্যামেরিকা  ভিত্তিক সাইবার সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান রাডওয়্যার-এর প্রতিবেদনেও ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে সাইবার হুমকির তীব্রতা বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

সাইবার আক্রমণগুলো কেবল ওয়েবসাইট হ্যাক বা ট্রাফিক বাড়িয়ে সিস্টেম নষ্ট করার মধ্যে সীমিত ছিল না। বরং, এগুলো ছিল জাতীয় অবকাঠামোতে ঢুকে পানি, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটানোর চেষ্টা। অর্থাৎ, এখানে শুধু প্রযুক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য ছিল। 

আর্ন্তজাতিক অলাভজনক সংস্থা সাইবার থ্রেট এলায়েন্সের প্রধান মাইকেল ড্যানিয়েল বলেন, উভয় দেশই সাইবার সক্ষমতায় পরিপূর্ণ, ডিডস আক্রমণ থেকে শুরু করে ডেটা মুছে ফেলার মতো আক্রমণ করতে পারে তারা। আমি নিশ্চিত যে, তারা উভয়েই সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি এবং বিভিন্ন ধরনের অপারেশন চালাচ্ছে। 

এই সাইবার আক্রমণগুলো বিভিন্ন ধরনের হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডিডস আক্রমণ।  এর মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর সার্ভারে বিপুল পরিমাণ ট্র্যাফিক পাঠিয়ে সেটিকে অকার্যকর করে দেওয়া হয়। এর ফলে ওয়েবসাইট বা অনলাইন পরিষেবাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এর সাথে র্যা নসমওয়্যার অ্যাটাক, ডেটা ওয়াইপিং অ্যাটাক, ওয়েবসাইট ডিফেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যকলাপ চালানো হয়। 

দুই দেশ যখন যুদ্ধে জড়ায় মূলত সাইবার হামলায় প্রথম পদক্ষেপই আসে স্টেট স্পন্সর হ্যাকারদের কাছ থেকে। এর সাথে যুক্ত হয় উভয় দেশের সহযোগী দেশ। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হ্যাকার গ্রুপগুলো বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে চলমান এই যুদ্ধে দুই দেশের হ্যাকার গোষ্ঠী এবং তাদের এল্যাই গ্রুপগুলোই অংশ গ্রহণ করে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। "রেজিস্টার"-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েল এবং ইরান উভয়ই একে অপরের বিরুদ্ধে সাইবার অস্ত্র ব্যবহার করছে, যা তাদের সামরিক সংঘাতের একটি সম্প্রসারিত অংশ।

ইসরায়েল-ইরানের এই সাইবার যুদ্ধ বিশ্বের জন্য স্পষ্টা বার্তা এখন আর যুদ্ধ মানে শুধু বোমা, ট্যাংক বা রকেট নয়। এখন যুদ্ধ মানে—ডেটা চুরি, ট্রাফিক জ্যাম, স্বাস্থ্য সিস্টেম হ্যাক এবং নাগরিকদের মনে অনিশ্চয়তা ও ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া। এই যুদ্ধ আরও বেশি বিপজ্জনক কারণ এটি অদৃশ্য এবং প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। 

ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষের সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে, আগামী দিনের যুদ্ধ হবে সাইবার পরিসরে। এই যুদ্ধ সীমাহীন ও নিয়ন্ত্রণহীন। তাই এখনই আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন করে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কৌশল পুনর্গঠনম সময়ের দাবি। 
 

বিভি/ এসআই

মন্তব্য করুন: