ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন আটকে গেলো জলপাই বাগানে (ভিডিও)
কেউ এসেছেন ক্যামেরুন থেকে, কেউ এসেছেন সেনেগাল থেকে। উদ্দেশ্য তাদের একটাই- ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যাবেন ইউরোপে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আটকা পড়েছেন অচেনা-অজানা দেশ তিউনিসিয়ায়।
কেউ বসে আছেন উদাস মনে কেউ বা আবার মধ্য দুপুরেই শুয়ে আছেন। একসাথে বসে আড্ডাও জমিয়েছেন অনেকে। নেই করার মত কোনো কাজ, যাওয়ার মত কোনো জায়গা। জীবন হয়ে আছে স্থবির, থমকে গেছে সময়।
সেনেগালের অধিবাসী মুস্তাফা। ঘর ছেড়েছিলেন স্বপ্নের দেশ ইতালিতে পাড়ি জমাবেন বলে। তবে সে স্বপ্নই এখন তাকে ফেলেছে অকুল পাথারে। দেশ বিদেশ ঘুড়ে অবশেষে তার ঠাই হয়েছে তিউনিশিয়ার এক জলপাই বাগানে।
তিউনিসিয়ার স্ফ্যাক্স অঞ্চলের জেবেনিয়ানা শহরে আটকা পড়ে আছেন মুস্তাফার মতই অনেক অভিবাসী। যে কোনো উপায়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন তারা। কিন্তু দিনের পর দিন এই বিস্তীর্ণ মাঠেই থাকতে হচ্ছে তাদের। ২০২২ সালে যাত্রা শুরু করেছিলেন ইদ্রিস কোনাঘায়ে। এরপর নাইজেরিয়া, নাইজার এবং আলজেরিয়া ভ্রমণ শেষে পৌছেছেন তিউনিসিয়ায়। পথিমধ্যে নিজের চোখে মরতে দেখেছেন দুই বন্ধুকে। এখানে আর কতদিন থাকতে হবে তা জানা নেই তার।
কর্মহীন থাকতে থাকতে আগ্রাসী হয়ে উঠছেন এখানকার অভিবাসীরা। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগের ফিরিস্তি দিলেন তিউনিসিয়ান নারী নাজিয়া হাউচ- ''এদের যন্ত্রনায় বাড়ির বাইরে যাওয়া যায় না। আমরা সেচের জন্য পাইপ কিনে আনি, তারা সেগুলো চুরি করে তাবু বানায়। দেয়াল টপকে এসে ওরা আমাদের ভেড়া, মোবাইল ফোন এমনকি বিছানার চাদর পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে যায়। কিছুদিন আগে আমার প্রতিবেশীর মেয়কে তুলে নিয়ে যাচ্ছিলো। একসাথে জড়ো হয়ে আমরা তাকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলাম। ওরা জঘন্য। ওদের হাতে আপনি সবসময় ছুরি দেখতে পারবেন।''
অবৈধ অভিবাসীদের চাপ সামাল দিতে নিজেদের সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তিউনিসিয়া সরকার। মানবিক দিক বিবেচনার পাশাপাশি কঠোর অবস্থানের কথাও ভাবছে দেশটি।
ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে দারিদ্র্য ও সংঘাত থেকে অন্যত্র পালিয়ে আসা লোকের সংখ্যা অনেক। এতদিন লিবিয়ায় অভিবাসীদের চাপ থাকলেও এখন উত্তর আফ্রিকার প্রধান পয়েন্ট হিসেবে তিউনিসিয়া পরিচিত হয়ে উঠেছে। তিউনিসিয়া থেকে ইতালীয় উপকূলে অভিবাসী নৌকার সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরেই তিউনিসিয়া থেকে প্রায় ১৬০০০ অভিবাসী ইতালিতে এসেছে।
সূত্র; রয়টার্স
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: