কাঁদছে গাজা, আর আতশবাজিতে মেতেছে মুসলিম দেশ কাতার
একদিকে বোমার আঘাতে ফিলিস্তিনের মানুষের দেহ আকাশ পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে অন্য দিকে উৎসবের আলোয় আলোকিত কাতারের আকাশ। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনের পাশে দাড়ানোর কথা ছিল দেশটির। খাবারের অভাবে গাজার ছোট্ট শিশুরা যেখানে আর্তনাদ করছে সেখানে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিমান থেকে রঙিন ধোঁয়া আর আতশবাজি প্রদর্শন করেছে কাতার।
গত ৩ এপ্রিল থেকে কাতারের লুসাইল শহরে শুরু হওয়া এই উৎসবে ১৬ টি বমানের অ্যাক্রোবেটিক শো, আতশবাজি ও রাতের আকাশে প্রায় ৩ হাজার ড্রোনের সাহায্যে বিভিন্ন আলোর খেলা দেখানো হয়। ঈদ-উল ফিতরের বন্ধের মধ্যে দেশটির বাসিন্দাদের চিত্তরঞ্জনের জন্য আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠান।
এদিকে ঈদের দিন থেকেই গাজায় নতুন উদ্যমে আগ্রাসন চালাচ্ছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। যেদিন কাতারে চলছে আলোর উৎসব ঠিক সেইদিনই বিশ্ববাসি দেখলো ইসরাইলের বোমার আঘাতে আকাশ পর্যন্ত উঠে গেছে গাজার নিরীহ বাসিন্দাদের শরীর। শুধুমাত্র ঈদের সপ্তাহে গাজায় ২ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। আর ৭ অক্টোবর থেকে মোট মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘ্যের মানবাধিকার সংস্থার তথ্যমতে নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এদিকে ৭ এপ্রিল হোয়াইট হাইজে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আবারও ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে গাজা খালি করার কথা বলেছেন।
মুসলিম বিশ্বের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান ফিলিস্তিন। অথচ এই ভূমি রক্ষায় দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপই নেয়নি কোন আরব দেশ। সৌদি আরব, কাতার বা আরব আমিরাত কেউই এগিয়ে আসেনি ফিলিস্তিনের পক্ষে। কি কারণ থাকতে পারে এর পেছনে? কাতারে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ২০২৩ এ হওয়া US Qatar Business Counsil এর প্রতিবেদন মতে শুধুমাত্র ২০২১ অর্থ বছরে আমেরিকা কাতারে ২৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। আর সর্বমোট বিনিয়োগের পরিমাণ ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিবেদনটি ২০২৩ এর অর্থাৎ, এই ২ বছরে বিনিয়োগ বেড়েছে আরও বেশি।
সুতরাং কাতার তার বন্ধুর রাষ্ট্রের বিপক্ষে গিয়ে ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিবে এমন ভাবাটা হয়ত বিলাসিতা হবে। দুই দেশের মধ্যে যে শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে তা না, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে সামরিক চুক্তি, কুটনৈতিক চুক্তি, শিক্ষা চুক্তি ও জ্বালানি চুক্তি। তাই ফিলিস্তিনের পক্ষে কাতার অবস্থান নিবে এমন ভাবাটা হয়ত ঠিক হবে না।
শুধু কাতার না। মধ্যপ্রাচ্যের অন্য ২ বড় দেশ সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের সাথেও বহু চুক্তি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। সৌদি আরবে আমেরিকার শুধু অর্থনৈতিক না রয়েছে সাংস্কৃতিক প্রভাবও। সাম্প্রতি সৌদিতে খুলেছে মদের বার, সিনেমা হল ও হালাল নাইট ক্লাব। একই অবস্থা আরব আমিরাতেরও। সেখানে তো নিয়মিত পশ্চিমা হ্যালুইন উৎসবও পালিত হয়। তাই, কেন মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশ গুলো দাঁড়াচ্ছে না ফিলিস্তিনের পক্ষে তা হয়ত পরিষ্কার।
একদিকে আগুনে পুড়ছে ফিলিস্তিনের নিরীহ নারী ও শিশুরা। অন্যদিকে আরব বিশ্বের আচরণ খুবই দুঃখজনক। তারা যে শুধু না দেখার ভান করে আছে তা না, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্য মেতেছে নানান আমোদ-ফুর্তিতে। সামাজিক মাধ্যম সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমদের এখন একটাই প্রশ্ন, কবে চোখ খুলবে আরব নেতারা? নিজেদের টাকার বিছানা ছেড়ে কবে তারা দাঁড়াবে মজলুম ফিলিস্তিনিদের পাশে?
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: