• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

শিশুশ্রম দূর করার লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ বিশ্ব

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ১৫ জুন ২০২৫

ফন্ট সাইজ
শিশুশ্রম দূর করার লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ বিশ্ব

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৩ কোটি ৮ লাখ শিশু বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রয়েছে৷ এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৪০ লাখ শিশু বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কর্মরত৷

২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রমমুক্ত বিশ্ব গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলেও এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ব৷ ২০২৪ সাল পর্যন্ত সবশেষ হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে ১৩ কোটি ৮ লাখ শিশুকে জীবনধারণের জন্য কাজ করতে হচ্ছে৷

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম বিরোধী দিবস উপলক্ষ্যে প্রকাশিত এক যৌথ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও৷ সংস্থাটির ধারণা, শিশুশ্রমমুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে আরো কয়েক দশক লাগতে পারে।

তবে এই সময়ে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হয়েছে৷ ২০০০ সালে বিশ্বব্যাপী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ছিলো ২৪ কোটি ৫৫ লাখ৷ ২০২০ সালে এই সংখ্যা ১৬ কোটিতে নেমে আসে৷ এরপর ২০২৪ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৮ লাখে৷

ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, যেমন খনিজ সম্পদ উত্তোলন, কলকারখানা এবং কৃষিখাতে কর্মরত শিশুদের সংখ্যাও কমে এসেছে৷ এই সংখ্যা ২০০০ সালে ছিলো ৭ কোটি ৯০ লাখ, যা ২০২৫ সালে নেমে এসেছে পাঁচ কোটি ৪০ লাখে৷

আফ্রিকার পরিস্থিতি ভিন্ন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিশুশ্রম কমে আসলেও সাব-সাহারা আফ্রিকার দেশগুলোতে এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অপ্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে৷ পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের শিশুশ্রমিকের ৮ কোটি ৭০ লাখই সাব-সাহারা আফ্রিকার দেশগুলোতে৷

ইউনেসেফের শিশু সুরক্ষা বিষয়ক আঞ্চলিক উপদেষ্টা নানকালি মাকসুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ব্যাপ্তির দিক থেকে এটি কমে এসেছে৷ ২০০০ সালে ২৪ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে তা ২২ শতাংশে নেমে এসেছে৷ এই অঞ্চলে যেই জটিলতাটি হচ্ছে তা হলো, দ্রুত জনসংখ্যার বৃদ্ধি৷ আর তাই সংখ্যার বিচারে আমাদের আসলে ততটা উন্নতি হয়নি৷’

মাকসুদ জানান, বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয় হলো, ৫ থেকে ১১ বছর বয়সি শিশুরা সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় কাজে নিয়োজিত৷

তার মতে, গ্রামাঞ্চলে মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণে যথেষ্ট কাজ হচ্ছে না৷ তাদেরকে দরিদ্রতা থেকে টেনে তোলার প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ইচ্ছা এবং অর্থায়ন করা না গেলে শিশুশ্রম বন্ধ করা যাবে না৷

সেইসাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করার মাধ্যমে মা-বাবাকে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে সচেতন করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি৷ তাছাড়া শিশুশ্রম বন্ধে শক্তিশালী আইনের ব্যবহারের প্রয়োজন বলে জানান মাকসুদ৷

তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ দেশেই এই বিষয়ে আইন রয়েছে৷ তবে আইনের ব্যবহার খুব দুর্বল৷’

মাদাগাস্কারে ইউনিসেফের প্রধান লিসা সিমারমান বলেন, ‘৫ থেক ১৭ বছর বয়সিদের ৪৭ ভাগই শিশুশ্রমের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছে৷’ ডয়চে ভেলেকে তিনি আরো বলেন, ‘মাদাগাস্কারের শিশুদের ৩২ ভাগ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে৷’

ইউনিসেফের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মেয়েদের চেয়ে ছেলে শিশুরা কিছুটা বেশি ক্ষতির শিকার৷ তাছাড়া শহরের চেয়ে গ্রামের শিশুরা এই পরিস্থিতির বেশি শিকার হয়৷’

আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারের কথাই ধরা যাক৷ খরা, সাইক্লোনসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্লিষ্ট কৃষি নির্ভর এই দেশটি৷

ডয়চে ভেলেকে সিমারমান জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে পরিবার এবং শিশুরা বিভিন্ন রকমের এবং ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিযুক্ত হয়৷ এদিকে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের কিছু মানুষ কৃষিকাজের পাশাপাশি মিকা নামক খনিজ উত্তোলনের সাথে যুক্ত৷ 

উল্লেখ্য, মাদাগাস্কার হলো রাশিয়া এবং ভারতের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মিকা রপ্তানিকারক দেশ৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি তৈরিতে এই খনিজ ব্যবহার হওয়ায় দেশটিতে মিকা উত্তোলন বাড়ছে৷    

সিমারমান বলেন, পরিবারের খাবার যোগাতে সাধারণত শিশুরাই এধরনের খনিতে কাজে যেতে বাধ্য হয়৷

মিকা উত্তোলনে প্রায়ই পুরো পরিবার যুক্ত হয়ে পড়ে৷ এই কর্মীরা জাতিসংঘের গবেষকদের জানান, পরিবারের সদস্যরা মিকা উত্তোলনে না গেলে খাবার যোগান ব্যহত হয়৷

শিশুশ্রম চলছেই

আইএলওর মতে, শিশুশ্রম ওই ধরনের কাজ যা শিশুকে তাদের শৈশব, মর্যাদা, সম্ভাবনা এবং উন্নয়ন বিশেষ করে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে৷ তবে শিশুশ্রম কী এ বিষয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে তাদের নিজস্ব বোঝাপড়া রয়েছে৷ 

আফ্রিকার দেশ ঘানার সমাজে বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন ঘানা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লিন্ডা ওসেই৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, কোনো বাব-মা তাদের আট বছরের শিশুকে শারিরীকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ার জন্য খনিতে পাঠাতে চাইবে৷ কিন্তু যেহেতু এটি এখানকার ঐতিহ্য যে, শিশুরা পরিবারের ভরণপোষণ উপার্জনে সহায়তা করে, আর তাই বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদের ছোট আকারের, গতানুগতিক পদ্ধতির খনিতে নিয়ে যায়৷’

অবশ্য চাকরিদাতারা খনিতে বাবা-মায়ের সাথে শিশুদের কাজে যোগদানের অনুমতি দেয়৷ ছোট শিশুদের সাধারণত বিভিন্ন জিনিস গোছানো, কোনো কিছুর উপরে বেয়ে উঠে কাজ করা যেখানে প্রাপ্ত বয়স্করা যেতে পারেন এমনসব কাজে যোগদানের অনুমতি দিয়ে থাকে৷

২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম বন্ধ করতে না পারলেও বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করেন মাকসুদ৷ তার মতে, শিশুশ্রম বন্ধে আইনি কাঠামো চালু করা একটি বড় পদক্ষেপ৷ সেইসাথে বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা লাভের সুযোগ বাড়ানোকে কার্যকর পদ্ধতি বলে মনে করেন তিনি৷

মাকসুদ বলেন, ‘আমরা যদি তাদেরকে (পরিবারগুলোকে) পথ দেখাতে পারি, সম্ভবত তারা তাদের সন্তানদেরকে কাজে যেতে বলবে না৷’
 

বিভি/এআই

মন্তব্য করুন: