রাখাইন রাজ্যের অস্থিরতা ও ভারতের কৌশলগত অবস্থান: এনডিটিভির প্রতিবেদন

ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতা এবং এর ফলে ভারতের নিরাপত্তা ও কৌশলগত অবস্থান নিয়ে এনডিটিভি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সাল থেকে রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী এসে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব আরও বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ঘটনা নতুন করে বেড়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক কয়েক মাসে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এই অস্থিতিশীলতা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি, ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, যদি চীন রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে অবস্থান নেয়, তবে এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হবে।
অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো শ্রীপর্ণা ব্যানার্জি এনডিটিভিকে বলেন, বর্তমানে স্বাধীন রোহিঙ্গা রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা খুবই কম। রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরাকান আর্মি থেকে পিছিয়ে পড়লেও, না জান্তা আর না আরাকান আর্মি কেউই স্বাধীন রোহিঙ্গা সত্ত্বার প্রতি কোনো সমর্থন দেখায়নি। এদিকে রাখাইনে আরাকান আর্মির বিধিনিষেধও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া, রাজ্যের বিভিন্ন অংশে অস্থিতিশীলতা দিন দিন বাড়ছেই।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে ভারত ও চীন উভয়েরই উপস্থিতি রয়েছে। ২০২৩ সালের ৯ মে ভারতীয় মালবাহী জাহাজ প্রথমবারের মতো সিত্তওয়ে বন্দরে পৌঁছে। এই বন্দর থেকে পালেৎওয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ জলপথ এবং সেখান থেকে মিজোরামের জোরিনপুই পর্যন্ত সড়কপথের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশকে এড়িয়ে যাওয়ার একটি কৌশলগত রুট হিসেবে কাজ করছে। কালাদান নদীতে ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুও নির্মিত হয়েছে।
শ্রীপর্ণা ব্যানার্জি বলেন, সিত্তওয়ে বন্দর ও কালাদান প্রকল্প কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে রাখাইনে চলমান সংঘর্ষ ও অস্থিতিশীলতার কারণে এই প্রকল্পের কার্যক্রম প্রভাবিত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নজরদারি করা ভারতের জন্য অত্যন্ত জরুরি। যদি বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে এবং চীনের প্রভাব বাড়তে থাকে, তবে এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে, যা ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। অতএব ভারতকে রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে থাকা শক্তিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: