• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

আলিপুরদুয়ার থেকে মোদির ‘মিশন বেঙ্গল’ শুরু, নজরে প্রতিবেশী বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ১১:৩১, ৩০ মে ২০২৫

আপডেট: ১১:৩১, ৩০ মে ২০২৫

ফন্ট সাইজ
আলিপুরদুয়ার থেকে মোদির ‘মিশন বেঙ্গল’ শুরু, নজরে প্রতিবেশী বাংলাদেশ!

ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার থেকে বিজেপির ‘মিশন বেঙ্গল’ কর্মসূচির সূচনা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই প্রচারণা মূলত ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হলেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে মোদি বাংলাদেশকে উদ্দেশ্য করে একটি স্পষ্ট ও কঠোর বার্তা দিতে চাচ্ছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সভার জন্য আলিপুরদুয়ারকে বেছে নিয়েছেন, যা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। এদিকে এই সভার স্থান নির্ধারণের সিদ্ধান্তও এসেছে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় ২৯ মে বৃহস্পতিবার। এদিকে, কোচবিহার থেকে মোদির সভায় আসার পথে বাধা ও বিজেপি কর্মীদের বাসে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।  

বিশ্লেষকদের মতে, আলিপুরদুয়ারের ভৌগোলিক অবস্থান কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটি হাসিমারা বিমানঘাঁটির নিকটে অবস্থিত। এ বিমানঘাঁটি সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনব্যাপী সংঘর্ষে ভারতের বিমান শক্তি প্রদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে দাবি করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মাধ্যমে ভারত নিজেদের সামরিক শক্তি তুলে ধরতে চায়। একই সঙ্গে, এটি বাংলাদেশের দিকেও একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষাগত বার্তা বহন করে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আলিপুরদুয়ার অঞ্চলটি ‘শিলিগুড়ি করিডোর’ বা ‘চিকেন নেক’-এর অংশ। এটি ভারতের মূল ভূখণ্ডকে সিকিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করে ও একমাত্র স্থলপথ হিসেবে কাজ করে। এই সরু ভৌগোলিক অংশটি ভারতের জন্য একটি নিরাপত্তাগত দুর্বলতা হিসেবেও বিবেচিত হয়। এটি দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। সবকিছু বিবেচনা করলে বাংলাদেশের বিষয়টিও এখানে বিশেষ গুরুত্ব পায়। ফলে ভারতের এই সীমান্ত এলাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে অনেকেই বাংলাদেশকে একটি কৌশলগত বার্তা দেওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। 

সভায় মোদি তার ভাষণে দুর্নীতি, কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে গড়িমসি ও 'অপারেশন সিঁদুর'-এর সফল বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কটাক্ষ করেন। একইসঙ্গে তিনি রাজ্যে বিজেপির সংগঠন মজবুত করার ওপর গুরুত্ব দেন। যদিও তার বক্তব্যের মূল অভিপ্রায় ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উত্তেজনা তুলে ধরা। বিশেষ করে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়টি তিনি পরোক্ষভাবে প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে বিজেপি দুটি নির্বাচনে কিছুটা ভালো ফল অর্জন করলেও, তা বড় কোনো জয় হিসেবে বিবেচিত হয়নি। রাজ্যে দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা ও শুভেন্দু অধিকারীর ওপর ভরসা রাখার পরও পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অবস্থানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি উত্তরবঙ্গে ৩০টি আসনে জয় পেলেও, পরবর্তী কয়েক বছরে তার মধ্যে পাঁচটি আসন তৃণমূল কংগ্রেসে চলে যায়। ফলে মোদি এখন এই অঞ্চলে বিজেপির হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

মোদি এই সফর শেষে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপির পক্ষ থেকে একটি বড় প্রচার অভিযানের ঘোষণা দেন। যদিও ধারণা করা হচ্ছে, আলিপুরদুয়ারে মোদির এই সভার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভারতের ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে।

জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে, মোদি কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলার জন্য ১,১০০ কোটি রুপিরও বেশি বাজেটের একটি গ্যাস প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় আড়াই লক্ষ পরিবার গ্যাস সংযোগ পাবে। পাশাপাশি দেশটিতে স্থানীয় স্তরে নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। কলকাতা শহরের পরিবর্তে রাজ্যের দুটি প্রান্তিক জেলাকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে এই এলাকার কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরে কেন্দ্র সরকার। একইসঙ্গে, বিজেপি এর মাধ্যমে কলকাতার দিকে প্রভাব বিস্তার করার কৌশলও নিচ্ছে। আর এই অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে নজর রাখা ও কার্যকলাপ পরিচালনা করা সহজ।

বিভি/আইজে

মন্তব্য করুন: