ট্রাম্পের ভিসা কৌশলে বিপাকে ভারতের হার্ভার্ড শিক্ষার্থীরা

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধের মধ্যে বিপাকে পড়েছেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে বিরাজমান ‘উদ্বেগ এবং ভয়ের’ অনুভূতি সম্পর্কে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে ডিডাব্লিউ।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক হার্ভার্ডের স্টুডেন্ট ভিসা সার্টিফিকেশন বাতিলের ফলে অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক পণ্ডিতরা ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে ভাবছেন।
বর্তমানে হার্ভার্ডে প্রায় ৮০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী ভর্তি আছেন। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের ২৫ বছর বয়সি প্রি-ডক্টরাল ফেলো পার্থিব প্যাটেল, ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে ভিসা বাতিলের ঘোষণা আসার পর থেকে তিনি ঘুমাতে পারেননি।
প্যাটেল বলেন, "আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও ভয় রয়েছে। আমরা জানি না কার কাছে যাব এবং কী অপেক্ষা করছে। আপনি উদ্বেগটা বুঝতে পারবেন৷’’
ট্রাম্প প্রশাসনের তহবিল কর্তনের হুমকি তার গবেষণাকে বিপন্ন করে তুলতে পারে বলেও আশঙ্কা প্যাটেলের।
তিনি বলেন, "আমি একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার গবেষণা ডেটাসেটে প্রবেশাধিকার, আমার উপদেষ্টার পরামর্শ এবং এখানকার সম্মিলিত পরিবেশ, হার্ভার্ডের এমন সব বিষয়ের সঙ্গে জড়িত।
"যদি তহবিল ছাঁটাই করা হয় এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বাইরে ঠেলে দেওয়া হয়, তাহলে কী বাকি থাকে," প্রশ্ন প্যাটেলের।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ হার্ভার্ডের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম সার্টিফিকেশন বাতিল করার অর্থ হল বিশ্ববিদ্যালয়টি আর এফ-১ বা জে-১ ভিসা ইস্যু বা স্পনসর করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে পড়াশোনা করতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এই ভিসাগুলো প্রয়োজন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই পদক্ষেপের ফলে সাত হাজারেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যাদের বেশিরভাগই স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছেন।
ঐচ্ছিক ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ (ওপিটি) বা স্টেং ওপিটিসহ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা তিন বছর পর্যন্ত স্নাতকোত্তর কাজের অনুমোদন পেতেন। এখন তারা বাড়তি জটিলতায় পড়বেন।
অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের ফলে তাদের ওপিটি কাজের অনুমোদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যেতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রে আইনত কাজ করার ক্ষমতাও রুদ্ধ হতে পারে।
বোস্টনের এক ফেডারেল বিচারক ২৩ মে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ওপর পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তবে বহিষ্কার বা জোরপূর্বক স্থানান্তরের হুমকি শিক্ষার্থীদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
'মানসিক আঘাত':
হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের পাবলিক পলিসির ছাত্রী অনন্যা শুক্লা ডিডাব্লিউকে বলেন, তাকে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হতে হবে, অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আইনি মর্যাদা হারাতে হতে পারে।
"আমি এখানে ভবিষ্যৎ গড়তে এসেছিলাম, ‘‘শুক্লা বলেন, "কিন্তু এখন আমি কেবল আমার যা আছে সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি’’
তিনি বলেন, "আমি বারবার ভাবছি, যদি আমাকে চলে যেতে হয় তাহলে কী হবে? আমার ক্রেডিটগুলো কি হিসাবে ধরা হবে? আমি কি অন্য স্কুলের ভিসা পাবো? মনে হচ্ছে আমার পুরো ভবিষ্যৎ ঝুলে আছে৷’’
শুক্লা বলেন, "কেবল আমরাই অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকছি না, যখন আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারি না, বাবা-মায়েরাও উদ্বিগ্ন হন। এটা একটা অবিশ্বাস্য মানসিক আঘাত৷’’
অনেক শিক্ষার্থী ডিডাব্লিউয়ের সঙ্গে ফোনে বা অনলাইনে কথা বলতেও দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, কারণ তাদের ভয় ছিল তাদের ওপর নজরদারি করা হবে এবং বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যামেরিকার দরজা বন্ধ হচ্ছে:
২৭ মে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বব্যাপী মার্কিন দূতাবাসগুলোকে ছাত্র ভিসার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময়সূচি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এই ধরনের আবেদনকারীদের সোশ্যাল মিডিয়া যাচাই-বাছাই সম্প্রসারণের প্রস্তুতি নেয়ার কথাও জানিয়েছে দূতাবাসগুলো।
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোয়া তিন লাখেরও বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থী দেশটির নানা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি রয়েছেন।
মুম্বাই-ভিত্তিক নেক্সটজেন এডুকেশন ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সন্দীপ শর্মা শিক্ষার্থীদের বিদেশে যেতে এবং ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শ সহায়তা দিয়ে থাকেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার ফলে ভয় এবং অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা মার্কিন প্রতিষ্ঠান বেছে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন।
সন্দীপ বলেন, "শিক্ষার্থীরা খুবই হতাশাগ্রস্ত। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী মনে করিয়ে দিচ্ছে যে এমনকি সেরা পরিকল্পনাগুলোও রাজনীতির ঝুঁকিতে পড়তে পারে’’
বিভি/ এসআই
মন্তব্য করুন: