বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেলসেতু নির্মাণ করলো ভারত, পাকিস্তানের জন্য হুঁশিয়ারি?

জম্মু ও কাশ্মীরের চেনাব নদীর ওপর নির্মিত বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলওয়ে সেতুর উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৩৫৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই সেতুটি আইফেল টাওয়ারের চেয়েও উঁচু। এই সেতুটি ‘উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল সংযোগ’ প্রকল্পের অংশ। ৩৫৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই সেতুটি ছাড়িয়ে গেছে আইফেল টাওয়ারকেও। ফলে নিঃসন্দেহে এটি ভারতের জন্য প্রকৌশলগতভাবে একটি বিশ্বমানের অর্জন।
সেতুটি এমনভাবে নির্মিত হয়েছে, যাতে হিমালয় অঞ্চলেও এটি শতাধিক বছর টিকে থাকতে পারে। এই সেতু শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই উন্নত করবে না বরং জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে পর্যটন, পণ্য সরবরাহ ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই রেলসেতু শুধু প্রকৌশল কৃতিত্বের জন্য নয়, এর ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব এবং পাকিস্তানের সাথে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটেও বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে।
সেতুটি এমন একটি এলাকায় তৈরি হয়েছে যেটি পাকিস্তান আন্তর্জাতিকভাবে বিরোধপূর্ণ দাবি করে। ১,৩১৫ মিটার লম্বা এই সেতুটি তীব্র গতির বাতাস ও ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। সেতুটিকে বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিরোধে সক্ষম করে তৈরি করা হয়েছে। এই সেতু জম্মু অঞ্চল থেকে উপত্যকা এবং উত্তরাঞ্চলের উচ্চ নিরাপত্তা অঞ্চলের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন রেলযোগাযোগ নিশ্চিত করে। ফলে এটি সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সেনা, অস্ত্র এবং রসদের দ্রুত পরিবহনের সুযোগ তৈরি করতে পারবে। এছাড়া যুদ্ধাবস্থায় এটিকে বিকল্প বা ব্যাকআপ সাপ্লাই চেইন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
চেনাব নদী নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব মূলত পানি বন্টন ও সিন্ধু পানি চুক্তিকে ঘিরে। পাকিস্তান মনে করে ভারত নদীর উপর অবকাঠামো তৈরি করে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। পাকিস্তান এই ধরনের অবকাঠামোগত প্রকল্পকে ভারতের একতরফা পদক্ষেপ বলে সমালোচনা করে আসছে। অনেক পাকিস্তানি রাজনীতিক ও মিডিয়াতে দাবি করা হয়, এই সেতুর মাধ্যমে ভারত কাশ্মীরের একতরফা দখলকে সংহত করছে। ফলে এটি পাকিস্তানের নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকেও উদ্বেগের বিষয়।
ভারত দীর্ঘদিন ধরে চাইছে কাশ্মীরকে পূর্ণভাবে সংযুক্ত ও নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে, এবং সীমান্তে সম্ভাব্য হুমকির বিপরীতে প্রস্তুত থাকতে। বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে ভারত মূলত পাকিস্তান ও চীন—উভয়কেই একটি বার্তা দিয়েছে। আর সে বার্তাটি হলো; কাশ্মীর ভারতের অখণ্ড অংশ, এবং এই অঞ্চলে ভারত চূড়ান্ত আধিপত্য ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: