ঈশ্বর মধ্যপ্রাচ্যের মঙ্গল করুক, ইসরাইলের মঙ্গল করুক এবং আমেরিকার মঙ্গল করুক: ট্রাম্প

ছবি: সংগৃহীত
দুই সপ্তাহ সময়সীমার ঘোষণা দেওয়ার পরও হঠাৎ করে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাতে দেশটির সামরিক বাহিনী ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউসে বক্তব্য দেওয়ার সময় শুরুতেই সবাইকে ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। এরপর তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে ইরানের তিনটি মুখ্য পারমাণবিক স্থাপনা– ফোর্ডো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে একটি সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। তিনি বলেন, এই নামগুলো তারা বহু বছর ধরে শুনে আসছেন, যখন থেকে তারা ধীরে ধীরে ভয়াবহ এক ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক কর্মসূচি গড়ে তুলছিল। এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা ধ্বংস করা এবং বিশ্বের শীর্ষ সন্ত্রাসবাদ-সমর্থক রাষ্ট্র থেকে আসা পারমাণবিক হুমকির পথ বন্ধ করে দেওয়া।
এরপর তিনি বলেন, এটি ছিল আসাধারন এক সামরিক সাফল্য। ইরানের প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের আত্মগর্বিত ইরান এখন শান্তি স্থাপন করতে বাধ্য। যদি তারা তা না করে, ভবিষ্যতের হামলাগুলো আরও ভয়াবহ হবে।
ট্রাম্প আরও বলেন, গত ৪০ বছর ধরে ইরান বলে আসছে আমেরিকার মৃত্যু হোক, ইসরাইলের মৃত্যু হোক। ইরান তাদের মানুষদের হত্যা করেছে, রাস্তায় পুঁতে রাখা বোমা দিয়ে তাদের হাত-পা উড়িয়ে দিয়েছে। এটি ছিল তাদের বিশেষত্ব। তারা এক হাজারের বেশি মানুষ হারিয়েছেন এবং মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ সরাসরি তাদের ঘৃণার কারণে মারা গেছে। তাদের জেনারেল কাসেম সোলাইমানির হাতে বহু মানুষ নিহত হয়েছে। ফলে তিনি অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তিনি এটি আর চলতে দেবেন না। এটি আর চলবে না।
এরপর তিনি বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী বিবি নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাতে চান। ট্রাম্প আরও বলেন, আমেরিকা ও ইসরাইল একটি জোট হয়ে কাজ করেছে, সম্ভবত এমন একটি জোট যা আগে কখনো দেখা যায়নি। তারা ইসরাইলের প্রতি ইরানের ভয়াবহ হুমকিকে মুছে ফেলার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। এরপর তিনি বলেন, তিনি ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে তাদের অসাধারণ কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চান।
এরপর ট্রাম্প বলেন, তিনি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চান সেই মহান আমেরিকান দেশপ্রেমিকদের, যারা রাতে হামলা চালিয়ে সফলভাবে সেগুলো ধ্বংস করেছেন এবং পুরো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে এমন এক অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যা বহু দশক ধরে পৃথিবী দেখেনি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে তাদের আর কখনো এমন কাজ করতে হবে না এবং সেটাই তার ইচ্ছা।
এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান, জেনারেল ড্যান রেইজিন কেইনকে একজন অসাধারণ জেনারেল হিসেবে অভিহিত করে এই হামলায় অংশ নেওয়া সকল সামরিক নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানান।
ট্রাম্প বলেন, এতসব ঘটনার পরেও তিনি স্পষ্ট করে বলতে চান—এই পরিস্থিতি আর সহ্য করা যাবে না। হয় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, নয়তো ইরানকে এমন একটি ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে, যা গত আট দিনের ঘটনার চেয়েও অনেক বেশি বিধ্বংসী হবে। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, এখনো অনেক টার্গেট বাকি আছে। গত রাতের অভিযান ছিল সবচেয়ে জটিল এবং সম্ভবত সবচেয়ে প্রাণঘাতী। তবে যদি দ্রুত শান্তি না আসে, তাহলে তারা বাকি লক্ষ্যবস্তুতে দ্রুত, নিখুঁত এবং দক্ষভাবে আঘাত হানবেন। এমন অনেক টার্গেট রয়েছে, যেগুলো মাত্র কয়েক মিনিটেই ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব।
ট্রাম্প এরপর মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, বিশ্বে আর কোনো সামরিক বাহিনী এমন অসাধারণ কাজ করতে পারত না, যেটা তারা সেই রাতে করেছে। এমন কিছুর ধারেকাছেও কেউ কখনো যেতে পারেনি। ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে আর কখনো ঘটেনি। পেন্টাগনে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে, যেখানে বক্তব্য রাখবেন জেনারেল কেইন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলে জানান তিনি।
এরপর ট্রাম্প সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তিনি বিশেষভাবে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে চান। এ সময় ট্রাম্প বলেন, আমি শুধু বলতে চাই – ঈশ্বর, আমরা তোমাকে ভালোবাসি, আর আমরা আমাদের মহান সামরিক বাহিনীকে ভালোবাসি। তাদের রক্ষা করো। এরপর ট্রাম্প তার বক্তব্য শেষ করেন এই বলে, ঈশ্বর মধ্যপ্রাচ্যের মঙ্গল করুক, ইসরাইলের মঙ্গল করুক এবং আমেরিকার মঙ্গল করুক। সবাইকে ধন্যবাদ।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: