মধ্যপ্রাচ্যে কাতারসহ যেসব দেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে

ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী ও বিস্তৃত উপস্থিতি রয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনীর। পুরো অঞ্চলের একাধিক দেশে মার্কিন সেনা ঘাঁটি রয়েছে। পাশাপাশি উপসাগরীয় জলসীমায়ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রয়েছে। এসব ঘাঁটিতে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার সামরিক সদস্য ও বেসামরিক কর্মী অবস্থান করছেন। এছাড়াও সেখানে আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান ও নৌবাহিনীর শক্তিশালী অস্ত্রভাণ্ডারও রয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর ওইসব সামরিক ঘাঁটি এখন ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যেই, ইরান কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়েছে।
গত বছর ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ধারাবাহিক আক্রমণের কারণে ওই অঞ্চলে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সম্প্রতি ইরানের পক্ষ থেকে বড় ধরনের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের আঞ্চলিক ঘাঁটিগুলো থেকে কিছু সেনা সদস্যকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে অঞ্চলটির অন্তত ১৯টি স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু সামরিক ঘাঁটিকে স্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে মনে করা হয়। এসব ঘাঁটি সৌদি আরব, বাহরাইন, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক,ইসরাইল, জর্ডান, কুয়েত, কাতার এবং সিরিয়ায় অবস্থিত।
কাতারে অবস্থিত আল উদেইদ সামরিক ঘাঁটিটি এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এখানেই মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এবং এর বিমান বাহিনীর ফরওয়ার্ড হেডকোয়ার্টার কার্যক্রম পরিচালনা করে। বর্তমানে কাতারে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। ইরাক, সিরিয়া এবং আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক অভিযান চলাকালে এই ঘাঁটিটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় এই ঘাঁটি ঘুরে দেখেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বাহরাইনের ন্যাভাল সাপোর্ট অ্যাক্টিভিটি ঘাঁটিতে অবস্থিত মার্কিন নৌবাহিনীর পঞ্চম ফ্লিটের সদর দফতর পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর, আরব সাগর এবং পূর্ব আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চল পর্যন্ত নৌ-তৎপরতা তদারকি করে। এটি মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের নৌবিভাগের কেন্দ্রীয় ঘাঁটি হিসেবেও কাজ করছে। বর্তমানে বাহরাইনে প্রায় ৯,০০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র কুয়েত। দেশটিতে অবস্থিত ক্যাম্প আরিফজান মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের একটি প্রধান সদর দফতর ও সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও, আলী আল-সালেম বিমান ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮৬তম এয়ার এক্সপিডিশনারি উইং মোতায়েন রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্যমতে, কুয়েতের এই দুটি ঘাঁটিতে প্রায় ১৩,৫০০ মার্কিন সেনা সদস্য মোতায়েন রয়েছে এবং এমকিউ-৯ রিপারসহ বিভিন্ন ড্রোনও অবস্থান করছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল ধাফরা বিমান ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এটি একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেখান থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও যুদ্ধবিমান মিশনে সহায়তা প্রদান করা হয়। এই ঘাঁটিতে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮০তম এয়ার এক্সপিডিশনারি উইং, যা দশটি বিমান স্কোয়াড্রন নিয়ে গঠিত। এই ইউনিটে উন্নত ড্রোনও রয়েছে, যেগুলো নজরদারি ও আক্রমণাত্মক মিশনে ব্যবহৃত হয়।
সাদ্দাম হোসেনের শাসনের পতনের সময় ইরাকজুড়ে প্রায় ৫০০ ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের আনুমানিক ১ লক্ষ ৬০ হাজার সৈন্য মোতায়েন ছিল। তবে বর্তমানে সেখানে প্রায় ২,৫০০ মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। তাদের ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের বিষয়ে ওয়াশিংটন বাগদাদ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সেনা উপস্থিতি মূলত ইসলামিক স্টেট নামে পরিচিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জোটের অংশ হিসেবে রাখা হয়েছে। বর্তমানে মার্কিন বাহিনী কুর্দিস্তানের দুটি প্রধান বিমান ঘাঁটি আল আসাদ ও ইরবিল থেকে তাদের অভিযান পরিচালনা করছে।
বর্তমানে প্রায় দুই হাজার মার্কিন সেনা সিরিয়ায় অবস্থান করছে। ২০২৫ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা সিরিয়ায় তাদের সামরিক ঘাঁটির সংখ্যা আটটি থেকে কমিয়ে একটি করবে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) মোকাবেলায় পূর্বের কৌশলকে ফলপ্রসূ মনে না করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানায় হোয়াইট হাউস। এর আগে ২০২৫ সালের মে মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এবং নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ২০২৪ সালের শেষের দিকে বাশার আল-আসাদকে সরিয়ে দেশটির শাসনক্ষমতায় আসেন আহমেদ আল শারা।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: