মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য
মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়নি (ভিডিও)
ইরানের পারামাণবিক স্থাপনায় হামলার পর সেটিকে 'অসাধারণ সাফল্য' বলে আখ্যা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি 'সম্পূর্ণ ধ্বংস' হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
তবে ইরানে মার্কিন হামলার জেরে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে গেছে। সম্প্রতি এক প্রাথমিক মূল্যায়নে এমন তথ্যই দিয়েছে খোদ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। ২৪শে জুন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা শাখা এবং ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের মূল্যায়নের বরাতে এই রিপোর্ট প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
গত ২২ জুন ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান থেকে ৩০ হাজার পাউন্ডের বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ছোড়া হয়। এটি ছিল হামলার সবচেয়ে কৌশলগত অংশ। সূত্র থেকে জানা যায়, ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান—এই তিন স্থানেই ক্ষতি মূলত ভূমির ওপরের কাঠামোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। মূল্যায়ন অনুযায়ী, ইরানের সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের মজুদ এবং সেন্ট্রিফিউজের অধিকাংশই অক্ষত রয়েছে। যার মানে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংসে সফল হয়নি, বরং শুধু সাময়িকভাবে পিছিয়েছে।
এই মূল্যায়নের সাথে একমত প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরাও। ইরানে মার্কিন হামলার স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করেছেন মিডলবারি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক জেফ্রি লুইস। তার মতে, হামলার আগে ইরান সম্ভবত তাদের উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছিলো। যদি ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকে, তাহলে এই হামলা কৌশলগতভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলেই গণ্য হবে।
তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এই মূল্যায়নকে ‘সম্পূর্ণ ভুল’ বলে উল্লেখ করেছে হোয়াইট হাউস। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট এক বিবৃতিতে বলেন, এই মূল্যায়ন খুবই গোপনীয় একটি বিষয়। তারপরও একজন অজ্ঞাত ও নিম্নস্তরের ব্যর্থ ব্যক্তি সিএনএনের কাছে এটি ফাঁস করে দিয়েছেন। আসলে এর উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় করা এবং নিখুঁতভাবে অভিযান পরিচালনাকারী পাইলটদের অসম্মান করা।
এদিকে ইরানের পারামণবিক স্থাপনাগুলোতে স্থানীয়ভাবে কিছু তেজস্ক্রিয়তা ও রাসায়নিক নির্গমন দেখা গেছে বলে দাবি করেছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। তবে সংস্থাটির দাবি, স্থাপনার বাইরের অংশে বিকিরণের মাত্রা বৃদ্ধির কোনো রিপোর্ট তারা পাননি। পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য ইরানের সহযোগিত চেয়েছেন আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রসি।
স্যাটেলাইট ছবি এবং বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক অনেক গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় মার্কিন হামলার আগেই সেখান থেকে ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেয়া হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৪০০ কেজি। এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম ১০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট। বলা হচ্ছে, ‘নিখোঁজ’ ওই ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ। ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ হলে এটি পারমাণবিক অস্ত্রে ব্যবহার করা যাবে। ইসরাইলি এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ধারনা, সম্ভবত ছোট বিশেষ বাক্সে ভরে এসব সরঞ্জাম ট্রাকে করে ইসফাহানের কাছে একটি ভূগর্ভস্থ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: