জাতিসংঘের এক ভাষণেই ৫টি মিথ্যা দাবি করলেন ট্রাম্প! (ভিডিও)
মিথ্যা দাবি ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণে নিয়মিতই খবরের শিরোনাম হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় চার বছরে ট্রাম্প ৩০ হাজারেরও বেশি মিথ্যা বলেছেন বলে দাবি করেছিলো প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। দ্বিতীয় মেয়াদেও সেই ধারা বজায় রেখেছেন তিনি। হোয়াইট হাউসে ফিরে প্রথম সাক্ষাৎকারেই ১১টি মিথ্যা বলেছেন ট্রাম্প।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রত্যেক বক্তাকে সাধারণত ১৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার সেই সীমা ভেঙে ফেলেছেন।
২৩ সেপ্টেম্বর সংস্থাটির অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নির্ধারিত সময়ের কয়েক গুণ বেশি সময় ধরে ভাষণ দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রায় ৫৭ মিনিট ধরে টানা বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দীর্ঘ সময় ধরে বক্তৃতা করার রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এত সময় ধরে ভাষণ দেওয়াটা কেবল ট্রাম্পের ব্যক্তিগত রেকর্ডই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনও প্রেসিডেন্টের জাতিসংঘে দেওয়া দীর্ঘতম ভাষণও এটি।
তবে ট্রাম্পের এই পুরো বক্তব্য ছিলো মিথ্যা দাবি ও ভুল তথ্যে ভরা। এমনটাই দাবি করা হয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে। ট্রাম্পের দীর্ঘ বক্তব্য থেকে পাঁচটি মিথ্যা দাবি চিহ্নিত করেছেন সিএনএন-এর ফ্যাক্ট চেকাররা।
নিজের দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেন তিনি মিসর-ইথিওপিয়া, কসোভো-সার্বিয়া ও ভারত-পাকিস্তানসহ মোট সাতটি যুদ্ধ শেষ করেছেন। তবে সিএনএন-এর বিশ্লেষণ বলছে, মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে কোনো যুদ্ধই হয়নি। দেশ দুটি বাঁধ প্রকল্প নিয়ে বিরোধে ছিল, কিন্তু সেটি যুদ্ধ নয়। এছাড়া পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে ট্রাম্পের কোনো ভূমিকা নেই বলে প্রকাশ্যে দাবি করেছে ভারত।
ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তার জনপ্রিয়তা সর্বকালের সেরা অবস্থায় আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- তার দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর সময়ে ট্রাম্পের অনুমোদন রেটিং ৪৮–৫২ শতাংশ থাকলেও পরে তা কমে ৪১ শতাংশে নেমে আসে। ট্রাম্পের দাবি, মূল্যস্ফীতি শেষ হয়ে গেছে এবং গ্রোসারির দাম ও বিদ্যুৎ বিল কমছে। তবে সিএনএন-এর তথ্য বলছে, শুধু আগস্টেই মূল্যস্ফীতি ৩ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া গত ৮ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আসার যে তথ্য ট্রাম্প দিয়েছেন, সেটিও পুরোপুরি প্রমাণিত নয়।
ট্রাম্পের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের সবচেয়ে “বড় প্রতারণা”। তবে বৈজ্ঞানিক তথ্য বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বাস্তব সমস্যা এবং এটি মানুষের কারণেই হচ্ছে। অভিবাসী ইস্যুতেও ভুল তথ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের দাবি, বাইডেনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ করেছেন। তবে সিএনএন-এর বিশ্লেষণ বলছে, ট্রাম্পের এই দাবি সম্পূর্ণ অতিরঞ্জিত।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এত মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর দাবির পেছনে কয়েকটি মনস্তাত্ত্বিক-রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। ট্রাম্পের বিতর্কিত বা চমকপ্রদ বক্তব্য মিডিয়ার হেডলাইন দখল করে ফেলে। ফলে মিথ্যা বা অর্ধসত্য বললেও তিনি জানেন, মিডিয়া সেটি কাভার করবে, আর তাতে অন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো আড়ালে চলে যায়।
অনেক সময় ট্রাম্প ইচ্ছাকৃতভাবে সত্যের সাথে মিথ্যাকে গুলিয়ে দেন যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং তথ্যের প্রতি আস্থা হারায়। তিনি বাস্তবতাকে চ্যালেঞ্জ করেন যাতে তার অনুসারীরা মনে করে তিনি ‘সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়ছেন’। আর এসবের মাধ্যমে অনুসারীদের মনে নিজের জন্য আরও শক্তিশালী অনুভূতি জাগিয়ে তোলেন ট্রাম্প।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: