• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

ট্রাম্পের শান্তি পুরস্কার নিয়ে সাফ কথা জানালো নোবেল কমিটি, আতঙ্কে নরওয়ে!

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ১০ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১১:৫১, ১০ অক্টোবর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
ট্রাম্পের শান্তি পুরস্কার নিয়ে সাফ কথা জানালো নোবেল কমিটি, আতঙ্কে নরওয়ে!

এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাচ্ছেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তা তিনি যতই প্রত্যাশা করুন না কেন। তবে ট্রাম্প যদি নোবেল না পান তাহলে তিনি কী করবেন এ নিয়ে আতঙ্কে আছে নরওয়ে। কারণ এ দেশটির নোবেল কমিটিই নোবেল বিজয়ী নির্ধারণ ও নাম ঘোষণা করে থাকে। যদিও নরওয়ের সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই।

শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় (০৯০০ জিএমটি) নরওয়ের নোবেল কমিটি বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে এ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাবে।

ট্রাম্প যেকোনো কিছু করতে পারেন এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে নরওয়ের স্যোশালিস্ট লেফট পার্টির বৈদেশিক নীতির মুখপাত্র বলেছেন, ‘যেকোনো কিছুর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’

বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। ১৯৪৬ সালে সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় বৈশ্বিক সংঘাত নিয়ে তথ্যভান্ডার তৈরি শুরু করে। এর পর থেকে বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত সশস্ত্র সংঘাতের সংখ্যা ২০২৪ সালের মতো কখনোই এত বেশি ছিল না।

ট্রাম্প একাধিকবার দাবি করেছেন, তিনি আটটি সংঘাতের সমাধান করে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য হয়েছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তাকে কমিটি বেছে নেবে না; অন্তত এ বছরের জন্য।

সুইডেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পিটার ভ্যালেনস্টিন এএফপিকে বলেন, ‘না, এ বছর ট্রাম্প নোবেল পাচ্ছেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে হয়তো পরের বছর? তখন হয়তো তার নানা উদ্যোগ, বিশেষ করে গাজা সংকট নিয়ে পদক্ষেপের বিষয়ে ধোঁয়াশা কেটে যাবে।’

অনেক বিশেষজ্ঞ ট্রাম্পের নিজেকে ‘শান্তির দূত’ দাবি করাকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন এবং তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার বলেন, ‘গাজায় শান্তি আনার প্রচেষ্টার বাইরেও আমরা (ট্রাম্পের) এমন অনেক নীতি দেখেছি, যা নোবেলের (আলফ্রেড নোবেল) উইলে লেখা উদ্দেশ্যের পরিপন্থি। সেই উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জাতির ভ্রাতৃত্ব ও নিরস্ত্রীকরণ উৎসাহিত করা।’

গ্রেগারের মতে, ট্রাম্পের যেসব পদক্ষেপ নোবেল শান্তি পুরস্কারের নীতির সঙ্গে মেলে না, তার তালিকা বেশ লম্বা।

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বহুপক্ষীয় চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন, মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী উভয়ের সঙ্গেই বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, বলপ্রয়োগে ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি দিয়েছেন, মার্কিন শহরগুলোতে ন্যাশনাল গার্ড (সেনাসদস্য) পাঠিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হেনেছেন।

সুইডেনের অধ্যাপক পিটার ভ্যালেনস্টিন বলেছেন, না, এ বছর ট্রাম্প নোবেল পাচ্ছেন না।

নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানকারী পাঁচ সদস্যের কমিটির চেয়ারম্যান ইয়োরগেন ওয়াতনে ফ্রিডনেস বলেন, ‘আমরা পুরো ছবিটিই দেখি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ ভূমিকা ও চরিত্র বিবেচনায় নেওয়া হয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শান্তির জন্য তারা বাস্তবে কী অর্জন করেছে, সেটিই আমরা দেখি।’

এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩৩৮ ব্যক্তি ও সংস্থাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তালিকা ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন রাখা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য, আগের বিজয়ীরা, নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নোবেল কমিটির সদস্যরা প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে পারেন।

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বহুপক্ষীয় চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন, মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী উভয়ের সঙ্গেই বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, বলপ্রয়োগে ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি দিয়েছেন, মার্কিন শহরগুলোতে ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হেনেছেন।

২০২৪ সালে শান্তি পুরস্কার পেয়েছিল জাপানে পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সংগঠন নিহোন হিদানকিও। সংগঠনটি পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধে কাজ করে আসছে।

এ বছর স্পষ্টভাবে পছন্দের কোনো প্রার্থী না থাকায়, অসলোতে শুক্রবারের ঘোষণার আগে নানা নাম ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে আছে স্বেচ্ছাসেবীদের নেটওয়ার্ক সুদানের ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস’। তারা যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত মানুষদের সাহায্য করতে জীবন ঝুঁকিতে ফেলে কাজ করছে।

এ ছাড়া রয়েছেন রুশ নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির বিধবা স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া এবং অফিস ফর ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস নামের নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার নাম।

গাজায় শান্তি আনার প্রচেষ্টার বাইরেও আমরা (ট্রাম্পের) এমন অনেক নীতি দেখেছি, যা নোবেলের (আলফ্রেড নোবেল) উইলে লেখা উদ্দেশ্যের পরিপন্থি। সেই উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জাতির ভ্রাতৃত্ব ও নিরস্ত্রীকরণ উৎসাহিত করা।

অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার বলেছেন, গাজায় শান্তি আনার প্রচেষ্টার বাইরেও আমরা (ট্রাম্পের) এমন অনেক নীতি দেখেছি, যা নোবেলের (আলফ্রেড নোবেল) উইলে লেখা উদ্দেশ্যের পরিপন্থি। সেই উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জাতির ভ্রাতৃত্ব ও নিরস্ত্রীকরণ উৎসাহিত করা।

নরওয়ের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক হালভার্ড লেইরা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তগুলো আবারও ক্ষুদ্র পরিসরের কাজের দিকে ফিরেছে, যা শান্তির ক্ল্যাসিক ধারণার কাছাকাছি। মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নারী অধিকার এখন মূল গুরুত্ব পাচ্ছে।

হালভার্ড লেইরা আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, সম্ভবত এ বছর বিতর্কিত নন, এমন একজন প্রার্থীর পক্ষেই রায় যাবে।’

নোবেল কমিটি চাইলে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার প্রতি তাদের অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করতে পারে, যা বর্তমানে ট্রাম্পের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পুরস্কার যেতে পারে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের হাতে অথবা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর কিংবা ফিলিস্তিনের সহায়তা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর মতো সংস্থার কাছে।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিচারব্যবস্থা রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকেও (আইসিসি) পুরস্কার দেওয়া হতে পারে।

অন্যদিকে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আজ যেভাবে চাপে আছে, তাতে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস বা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের মতো সংস্থাকেও বেছে নেওয়া হতে পারে।

তবে নোবেল কমিটি চাইলে আগের অনেক বছরের মতো এবারও সবাইকে চমকে দিতে পারে একজন সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত বিজয়ীকে বেছে নিয়ে।

সূত্র: এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2